ফার্মগেট মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের মধ্য অন্যতম স্থান দখল করে রাখবে
ফার্মগেট মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের মধ্য অন্যতম স্থান দখল করে রাখবে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে তৎকালীন ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান খান কামালের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতা ব্যারিকেড তৈরি করে একটি প্রশিক্ষিত সেনা বহরকে যেভাবে ২০ মিনিটের মতো ফার্মগেটে আটকে রেখেছিল তা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের মধ্য অন্যতম।
মুক্তিযুদ্ধে প্রথম ব্যারিকেড তৈরির ঐতিহাসিক ঘটনা স্মরণ এবং জাতীয় গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ‘গণহত্যার কালরাত্রি ও আলোকের অভিযাত্রী’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সোমবার (২৫ মার্চ) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এ সভার আয়োজন করা হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং ২৫ মার্চ কালরাতে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ব্যারিকেড উদযাপন কমিটির সভাপতি আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান খান।
তাজুল ইসলাম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আমাদের গৌরবের ইতিহাস। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে। তারপর করা হয়েছে ইতিহাস বিকৃতি। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিফলক/স্মৃতিচিহ্নগুলো মুছে ফেলা হয়েছে। এখন আমাদের নতুন প্রজন্মকে এ গৌরবের ইতিহাসগুলো জানাতে হবে।
শাজাহান খান বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছেন। এটি ছিল বিশ্বের ইতিহাসে একটি গণহত্যা। বিশ্বের কাছ থেকে আমাদের এ গণহত্যার স্বীকৃতি আদায় করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই আসাদুজ্জামান খান কামালের নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনা বহরকে ব্যারিকেড দিয়ে ফার্মগেট তথা তেজগাঁওবাসী এক বীরত্বের ইতিহাস রচনা করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ধারাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে দেশকে স্বাধীন করেছেন। আমরা তার আহ্বানেই প্রতিটা আন্দোলন-সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। তিনিই ছিলেন আমাদের প্রেরণা। আমরা আজ স্বার্থক। নতুন প্রজন্মকে আমরা মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসটুকু জানাতে পেরেছি।
তিনি বলেন, ইতিহাসের অংশ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এ ফার্মগেট এলাকা। সে রাতে (২৫ মার্চ, ১৯৭১) আমরা ছাত্র-জনতা বিশ্বের অন্যতম প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনীর বহরকে প্রায় ২০ মিনিটের মতো আটকে রেখেছিলাম। আমরা গাছ কেটে, লোহার চাই দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করেছিলাম, ঢিল, পেট্রোল বোমা ছুড়েছিলাম। কিন্তু সেনা বহরটি ২০ মিনিটের বেশি আটকে রাখতে পারিনি। তারপরই এই বাহিনী ঢাকা শহরে নারকীয় হত্যাজজ্ঞ চালায়। কিন্তু সেদিন না পারলেও নয় মাস যুদ্ধ করে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা বেনজীর আহমদ, সংসদ সদস্য এ কে আজাদ, চিত্রনায়ক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দীন আহমেদ আলমগীর, অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ, তেজগাঁও কলেজের অধ্যক্ষ জহিরুল হক জিলু, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইউনিসেফ সুপারস্টার ও টিভি রিপোর্টার সুবহা সাফায়েত সিজদা প্রমুখ।
আলোচনায় সভায় বক্তারা ২৫ মার্চ কালরাতে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ব্যারিকেডের গৌরবময় ইতিহাসের স্মৃতিচারণ করেন এবং ফার্মগেট ব্যারিকেডের ইতিহাসকে স্মরণীয় করে রাখতে ফার্মগেট এলাকায় একটি স্মৃতিস্তম্ভ করার জন্য স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর কাছে দাবি জানান।
সভার শুরুতে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ব্যারিকেড তৈরির ঐতিহাসিক ঘটনার ওপর ভিত্তি করে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
টিটি/ইএ/এএসএম