‘নারী নির্যাতন আগ্রাসী ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে’
নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেই শুধু সবাই সোচ্চার হয়, কিছুদিন পরে আবার সেই প্রতিবাদ স্তিমিত হয়ে পড়ে। ঘরে-বাইরে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে নারী। নারী নির্যাতন এখন আগ্রাসী ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে কার্যকরভাবে নারী নিপীড়নবিরোধী কমিটিকে কাজ করতে হবে। শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালায়ও নারী নিপীড়নের মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গনে যৌন হয়রানি ও যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বক্তারা। ৬৬টি সামাজিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেমের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন সাবেক সংসদ সদস্য শিরীন আখতার, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের পরিচালক শাহনাজ সুমী, বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা আলী প্রমুখ।
সঞ্চালকের বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীর প্রতি নিপীড়নের ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। দেশের ৫টি শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি ২৭টি ঘটনা ঘটেছে। সংবাদপত্রের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কাছে তথ্য রয়েছে যে ফেব্রুয়ারি মাসে নিপীড়নের শিকার ২২২ জনের মধ্যে ৬৭ জন নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আমাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে এটা আইসবার্গ। এই আইসবার্গের নিচে যে বিশাল ভূমি আছে, যেটা আমরা এখনো উদঘাটন করতে পারিনি, ওই বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে।
সাবেক সংসদ সদস্য শিরিন আখতার বলেন, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু একটি অভিযোগ বাক্স যথেষ্ট নয়, সব বিভাগে অভিযোগ বাক্স দিতে হবে। সব অভিযোগের নিয়মিত তদারকি করতে হবে। তাছাড়া বাইরের লোকজন দিয়ে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ও কর্ম প্রতিষ্ঠানে নারী নিপীড়নবিরোধী কমিটি গঠন করতে হবে। এসময় সব নির্যাতনের ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের শাস্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের উইমেন রাইটস অ্যান্ড জেন্ডার ইকুইটি ম্যানেজার মরিয়ম নেছা। তিনি বলেন, প্রতিটি নারী নির্যাতনের ঘটনার হোতা শুধুমাত্র পুরুষ শিক্ষার্থীরা নন, কতিপয় শিক্ষকও এর সঙ্গে জড়িত। প্রতিষ্ঠানগুলোতে সীমাহীন অন্যায়-অবিচার, লাগামহীন দুর্নীতি, ক্ষমতার দুর্বিনীত ব্যবহার, রাজনৈতিক প্রভাব দেশের সব পর্যায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ, শিক্ষার মান, প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নানান মাত্রার জটিলতা এবং সমস্যা তৈরি করেছে। শিক্ষার্থীদের ভর্তি, শিক্ষক নিয়োগ, নিয়মিত পাঠদানের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহির অভাব সামগ্রিক অর্থে শিক্ষাব্যবস্থাকেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দিচ্ছে। নারীর জীবন থেকে বৈষম্য, নির্যাতন-নিপীড়নের অবসান ঘটেনি এখনো। যৌন সহিংসতা, যৌন হয়রানি-নিপীড়ন বা উত্ত্যক্ত করার ঘটনা ঘটলে এখনো পরিবার-সমাজ নারীকে অভিযুক্ত করে। নারীর প্রতি বিদ্বেষের সংস্কৃতি, ঘৃণার সংস্কৃতি বিস্তার ঘটেছে সর্বস্তরে। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অহরহ ঘটেছে যৌন হয়রানির মতো লজ্জাজনক চরম নীতিহীনতার ঘটনা।
তিনি আরও বলেন, ২০০৯ সালে এক বিশ্লেষণের আলোকে উচ্চ আদালত প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দিকনির্দেশনা দেন। এতে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কমিটি গঠন করতে বলা হলেও এখনো অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিরোধ কমিটি গঠন হয়নি। কোথাও গঠিত হলেও সেসব কমিটি সক্রিয় নয়। তাই প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়নবিরোধী কমিটি গঠন করতে হবে এবং যৌন নিপীড়ন ও হয়রানি থেকে নারীকে বাঁচাতে রাষ্ট্রকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এ সময় তিনি ২৩ দফা সুপারিশ উপস্থাপন করেন।
আরএএস/কেএসআর/জেআইএম