পিএসসির ‘ভুতুড়ে নিয়োগে’ বিসিএস ক্যাডার, দুদকের মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:১২ পিএম, ২১ মার্চ ২০২৪
ফাইল ছবি

ভুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট ব্যবহার করে সরকারি চাকরি নেওয়ার অভিযোগে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক এসএম আলমগীর কবীরের নামে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) দুদকের সহকারী পরিচালক সাইদুল ইসলাম বাদী হয়ে সংস্থাটির সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১-এ মামলাটি দায়ের করেন। আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসামি ২০০৬ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ১০ শতাংশ সরাসরি কোটায় রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক পদে চাকরি লাভ করেন।

দুদকের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ১০ শতাংশ সরাসরি কোটায় সহযোগী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান পদে জনবল নিয়োগ করা হবে মর্মে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করে ২০০৬ সালের ২০ এপ্রিল।

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে (১) প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে ডক্টরেট ডিগ্রিসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতকোত্তর ডিগ্রি বা দ্বিতীয় শ্রেণির সম্মান ডিগ্রিসহ কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্যূনতম ৮ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে; (২) প্রার্থী যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বিজ্ঞাপিত শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন করেছেন সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্তৃক প্রদত্ত চরিত্রগত সনদের কপি আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে;

(৩) প্রার্থী যেসব সরকারি/বেসরকারি কলেজ/ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছেন সেসব কলেজ/শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ডিগ্রি কলেজ অথবা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের হতে হবে এবং তার অর্জিত শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা ডিগ্রি পর্যায়ের মর্মে অভিজ্ঞতার সনদে অবশ্যই উল্লেখ থাকতে হবে; (৪) অভিজ্ঞতার সনদে কলেজটি ডিগ্রি কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয় এবং অর্জিত অভিজ্ঞতা ডিগ্রি পর্যায়ের তা উল্লেখ না থাকলে এবং অভিজ্ঞতার সনদ জমা না দিয়ে যোগদানপত্র জমা দিলে প্রার্থিতা বাতিল হবে মর্মে শর্ত উল্লেখ করা হয়।

আসামি এস এম আলমগীর কবীর বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ১০ শতাংশ সরাসরি কোটায় সহযোগী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান পদে ২০০৬ সালে পিএসসি বরাবর আবেদন করেন। দাখিল করা আবেদনের সঙ্গে ক্যামডেন বিশ্ববিদ্যালয় আমেরিকা, মালয়েশিয়া ক্যাম্পাসের পিএইচডি ডিগ্রি গ্রহণের সনদপত্রের কপি দাখিল করেন।

দুদক অনুসন্ধানকালে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি ডিগ্রি সনদের সঠিকতা যাচাই করে প্রতিবেদন পাঠাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনকে অনুরোধ জানায়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দুদককে জানায়, মালয়েশিয়ার উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয় আমাদের জানিয়েছে যে, তারা শুধু নিবন্ধিত বেসরকারি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য রাখে (পিএইচইডি)। তাদের সাম্প্রতিক রেকর্ডের ভিত্তিতে, ক্যামডেন বিশ্ববিদ্যালয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া ক্যাম্পাসটি সেই দেশের উচ্চশিক্ষা বিভাগের আওতায় নিবন্ধিত নয়। অর্থাৎ, ক্যামডেন নামের কোনো রেজিস্টার্ড শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মালয়েশিয়ায় নেই।

আরও জানা যায়, আসামি আলমগীর কবীর কর্তৃক দাখিল করা পিএইচডি ডিগ্রি সনদ জাল বা ভুয়া। অনুসন্ধানকালে দেখা যায় যে, ১০ শতাংশ সরাসরি কোটায় সহযোগী অধ্যাপক পদে চাকরির আবেদনের জন্য ন্যূনতম ৮ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার মধ্যে দুই বছর ৩ মাস ১১ দিনের ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও তিনি প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ৮ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা পূর্ণ হিসেবে সরকারি কর্ম কমিশনের সহযোগী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান পদের আবেদনে উল্লেখ করেন।

জানা যায়, আসামি দুই বছর ৩ মাস ১১ দিনের শিক্ষকতার ঘাটতি পূরণের জন্য জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়া তার অভিজ্ঞতার সনদ পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, ওই অভিজ্ঞতার সনদটি বিজ্ঞপ্তির শর্ত মোতাবেক যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সংগৃহীত নয় এবং ওই সনদে যেসব শর্তাবলি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী যুক্ত থাকা আবশ্যক ছিল তারও উল্লেখ নেই। আসামি বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের প্রভাষক রাষ্ট্রবিজ্ঞান পদ থেকে প্রেষণে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর এপিএস এবং তৎপরবর্তী তৃতীয় সচিব হিসেবে বাংলাদেশ হাইকমিশন, মালয়েশিয়ায় কাজ করেছেন।

এসএম/এমকেআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।