‘মানুষ খাবার কমিয়ে ফেলছে, সবাই নিচের দিকে যাচ্ছে’

সায়েম সাবু
সায়েম সাবু সায়েম সাবু , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:১২ পিএম, ১৮ মার্চ ২০২৪

মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণি ক্রমশই তলার দিকে গিয়ে নবদরিদ্র তৈরি করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত। তিনি বলেন, ‘যে ক্ষয়ের মধ্য দিয়ে মানুষ যাচ্ছে, তাতে সামাজিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।’

বাজার পরিস্থিতি ও সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকা নিয়ে জাগো নিউজকে আবুল বারকাত বলেন, ‘অধিকাংশ মানুষের আয় একেবারে ফিক্সড। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যে মৌলিক অনুষঙ্গ যেমন খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা এবং বাসস্থান ব্যবস্থাপনায় যে ব্যয় বাড়ছে, তার তুলনায় আয় একেবারেই বাড়েনি।

আরও যে সিরিয়াস সংকট দেখা দিয়েছে, তা হচ্ছে মানুষের জীবন এক অনিশ্চয়তায় ঘিরে বসছে। দ্রব্যের দাম বাড়ছে। কিন্তু কমার কোনো নিশ্চয়তা নেই। যদিও কমে, তা একেবারেই যৎসামন্য। আয় দিয়ে মিনিমাম ব্যয়টা সম্পন্ন করার সঙ্গতি মানুষ একেবারেই হারিয়ে ফেলছে। বেশ আগেই হারিয়ে ফেলেছে। তবে এখন সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকা নাভিশ্বাস পর্যায়ে। এতে সমাজে এক ধরনের ক্ষয় সাধিত হচ্ছে। আর এমনটি হতে থাকলে বিপর্যয় অনিবার্য।’

বাংলাদেশের পরিসংখ্যানে দুই ধরনের গরিবের কথা বলা আছে। একটি নিরঙ্কুশ গরিব, আরেকটি অতিগরিব। অতিদরিদ্র যদি আরও দরিদ্র হয়, তাহলে তাকে মাটির সঙ্গে মিশে যেতে হয়। এক কথায় কবরে যাওয়ার সমতুল্য হতে পারে।

মধ্যবিত্তের একটি অংশ সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে দাবি করে এ বিশ্লেষক বলেন, ‘আরেকটি অংশ ছোটখাটো জিনিস হয়তো বিক্রি করে খাচ্ছে। দুর্দশাগ্রস্ত মানুষেরা সাধারণ এমন কিছু বিক্রি করে জীবন বাঁচিয়ে রাখেন। এর একটি সমস্যা হচ্ছে, বেশি সংখ্যক মানুষ যদি দুর্দশাগ্রস্ত হয় তাহলে তাদের বিক্রিত পণ্যের সঠিক মূল্যও পায় না। এটি আরেক বিপর্যয়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকা বেশ খারাপ পর্যায়ে চলে গেছে। এক কথায়, জটিল পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, যেখানে সহজেই সমাধান সম্ভব নয়।’

আরও পড়ুন

‘মানুষ বাঁচাতে হলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানো দরকার। প্রয়োজনে ভর্তুকি দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, আয় বাড়ানোর পদ্ধতি বের করতে হবে। একসঙ্গে এই দুটি করা অত সহজও নয়।

নিম্নমধ্যবিত্ত যদি আরও তলার দিকে যেতে থাকে এবং মধ্যবিত্ত যদি নিম্নমধ্যবিত্তের দিকে যায়, তাহলে নবদরিদ্রের সংখ্যা বাড়ে। আমার কাছে মনে হচ্ছে, নবদরিদ্রের হার বাড়ছে। আর গরিবরা আরও তলানিতে গিয়ে ঠেকছে।

বাংলাদেশের পরিসংখ্যানে দুই ধরনের গরিবের কথা বলা আছে। একটি নিরঙ্কুশ গরিব, আরেকটি অতিগরিব। অতিদরিদ্র যদি আরও দরিদ্র হয়, তাহলে তাকে মাটির সঙ্গে মিশে যেতে হয়। এক কথায় কবরে যাওয়ার সমতুল্য হতে পারে।’ বলছিলেন, অধ্যাপক আবুল বারকাত।

মানুষ খাবার কমিয়ে ফেলছে। পুষ্টির পরিমাণ কমাচ্ছে। নিজেও তো মধ্যবিত্ত। বুঝতে পারি। কয়টি পরিবারে খাসির মাংস রান্না হয়? কয়জন দেশি মুরগি খায়? তার মানে মধ্যবিত্তরা খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করেছে। সবাই নিচের দিকে যাচ্ছে।

বিশ্বব্যাপীই এই ক্ষয় ঘটছে উল্লেখ করেন বলেন, ‘মধ্যবিত্তরা এক ধরনের তলার দিকে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের মতো তলার দিকে যাচ্ছে কি না, তা ভাবনার বিষয়। আমরা মনে হয় দ্রুত তলার দিকে যাচ্ছি। অনেকেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কথা বলে পরিস্থিতির তুলনা করছেন। মহামারির কথাও বলছেন। তবে আমি মনে করি, এসব বলে কোনো লাভ হবে না।

কারণ আমার দেশের পেঁয়াজের দামে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রভাব ফেলার কথা নয়। একটি যুদ্ধ দিয়ে আপনি সব প্রমাণ করতে পারবেন না। দেশে যে পেঁয়াজের চাহিদা তার কাছাকাছিই উৎপাদন করেন আমাদের কৃষকরা। সংরক্ষণ করার উপায় পান না বলে ইন্ডিয়া থেকে আমদানি করতে হয়।’

সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকা প্রসঙ্গে বলেন, ‘মানুষ খাবার কমিয়ে ফেলছে। পুষ্টির পরিমাণ কমাচ্ছে। নিজেও তো মধ্যবিত্ত। বুঝতে পারি। কয়টি পরিবারে খাসির মাংস রান্না হয়? কয়জন দেশি মুরগি খায়? তার মানে মধ্যবিত্তরা খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করেছে। সবাই নিচের দিকে যাচ্ছে।

সরকার বিশ্ব পরিস্থিতির কথা বলে। আমি মনে করি, যুদ্ধের কারণে ৫ শতাংশ দাম বাড়তে পারে। পণ্যের ৯৫ শতাংশ দাম বাড়াচ্ছে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা। সরকারও আমার মতোই মনে করে। কিন্তু স্বীকার করে না। অবস্থানগত কারণে তাদের ভিন্ন কথা বলতে হয় অথবা অস্বীকার করতে হয়।’

এএসএস/এএসএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।