পহেলা বৈশাখে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা
বাংলা বর্ষবরণ উৎসবকে কেন্দ্র করে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নিরাপত্তায় এবার আকাশ পথেও থাকছে নজরদারি। মেডিকেল টিম ও ফায়ার সার্ভিসও প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। সমগ্র ঢাকা থাকছে ডিএমপির সেন্ট্রাল মাইকের নিয়ন্ত্রণে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্র জানায়, এবার ঢাকার ৭০টি স্থানে বাংলা বর্ষবরণের অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি দেয়া হয়েছে। বাংলা বর্ষবরণের নানা আয়োজন রমনা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক হলেও এবার সারা ঢাকায় থাকছে নজরদারি। যেসব স্থানে অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি ডিএমপি কর্তৃক দেয়া হয়েছে সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
বাংলা নববর্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রার নিরাপত্তায় মাঠে থাকবে মহানগর গোয়েন্দার (ডিবি) ও স্পেশাল উইপন্স অ্যান্ড ট্যাকটিক্স (সোয়াট) টিম। দেশে প্রথমবারের মতো এ স্পেশাল টিম বর্ষবরণের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে। এছাড়াও বর্ষবরণের এ মঙ্গল শোভাযাত্রার সামনে, পেছনে, মাঝে এবং দুপাশে পুলিশি পাহারা থাকবে।
সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, পহেলা বৈশাখ যেন নগরবাসী নির্বিঘ্নে উদযাপন করতে পারেন সেজন্য কয়েকটি স্তরে নিরাপত্তা গ্রহণসহ রাজধানীতে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হবে।
তিনি বলেন, পহেলা বৈশাখের দিন রাজধানীর বেশ কয়েকটি স্পটে অতিরিক্ত জনসমাগম হবে। জনসমুদ্রে পরিণত হবে রমনা বটমুল আর টিএসসি। আর এই ভিড়ে যাতে কোনো শিশু না হারিয়ে যায় তাই তাদের পকেটে ঠিকানা, ফোন নম্বর সম্বলিত একটি
চিরকুট রাখার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
আছাদুজ্জামন মিয়া বলেন, মঙ্গল শোভাযাত্রার নিরাপত্তায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের বিশেষায়িত ‘সোয়াট টিম’ কাজ করবে। স্বাধীনতা হরণের উদ্দেশ্যে নয় বরং পহেলা বৈশাখ উদযাপনকে নির্বিঘ্ন করতে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। ১৯টি ওয়াচ টাওয়ার দিয়ে সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে। সে অনুযায়ী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেয়া হবে।
এছাড়াও এসব স্থানে ঢুকতে পৃথক প্রবেশ ও বাহির গেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের আর্চওয়ে গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকতে হবে। ভেতরে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে দেহ তল্লাশি করা হবে।
ডিএমপির নির্দেশনা অনুযায়ী, উন্মুক্ত স্থানে যেসব অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে সেগুলোতে সাড়ে ৪ টার পর কাউকে ঢুকতে দেয়া হবে না। ৫ টার মধ্যে সেসব অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে। তবে সংরক্ষিত স্থানে ইনডোরে ৫ টার অনুষ্ঠান করা যাবে।
জনগণের সুবিধার্থে রমনা, সোহরওয়ার্দী ও টিএসসি এলাকায় সেন্ট্রাল মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানস্থলে দাহ্য পদার্থ, দিয়াশলাই, গ্যাসলাইট বহন না করার জন্য অনুরোধ করেন কমিশনার।
অন্যদিকে বুধবার বিকেলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, পহেলা বৈশাখে রাজধানীর যে সমস্ত এলাকায় বর্ষবরণের অনুষ্ঠান হবে সে সমস্ত এলাকা সেন্ট্রাল মাইকের আওতায় থাকবে। ডিএমপির স্থাপিত কন্ট্রোলরুম থেকে যে কোনো প্রয়োজনে মাইকের মাধ্যমে নির্দেশনা দেবেন।
আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা নির্দেশনাগুলো সঙ্গে সঙ্গে জানতে পারবেন এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে পহেলা বৈশাখের দিন রাজধানীর কয়েকটি সড়কে যানবাহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। উৎসব উদযাপনে সবাইকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে পুলিশের সোয়াত টিম, ডগ স্কোয়াড, ডিবি, র্যা ব, ফায়ার সার্ভিস ও ডাক্তাররা দায়িত্ব পালন করবেন। রয়েছে পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরা। থাকবে র্যা ব পুলিশের কন্ট্রোল রুম।
বিভিন মহল থেকে বর্ষবরণ উৎসবে পুলিশের বিধিনিষেধ আরোপের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ উৎসবের দিন। এদিন সবাই বেশি বেশি উৎসব করতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক। তবে তাদের নিরাপত্তা বিধান করা
আমাদের দায়িত্ব। আমরা সবার কাছ থেকে সহযোগিতা আশা করছি।’
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এর মহাপরিচালক(ডিজি) বেনজীর আহমেদ বলেন, এবারের পহেলা বৈশাখে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আকাশ পথেও নিরাপত্তা দেবে র্যাব।
র্যাব মহাপরিচালক বলেন, প্রতি বছরই সমগ্র দেশব্যাপি ইতিহাস সংস্কৃতি ও ঐহিত্যকে সমন্বিত রেখে পালিত হয় বাংলা নববর্ষ। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়। এবার রাজধানীর ৭০ টি স্থানে বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান পালনের অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ(ডিএমপি)। সে অনুযায়ী র্যাবও আইন শৃঙ্খলারক্ষায় নিয়োজিত থাকবে।
বেনজীর আহমেদ বলেন, বাংলা নববর্ষে রমনা ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সাধারণত ভিড় বেশি থাকে। এই এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। র্যাব এলিট ফোর্স হিসেবে রাজধানীসহ সমগ্র দেশের নিরাপত্তায় পরিকল্পনা করেছে বলে জানান র্যাব ডিজি।
তিনি বলেন, আমরা পুরো রাজধানীর সম্ভাব্য সব স্থানের তথ্য সংগ্রহ করেছি। একাধিক চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। মোটর সাইকেল টহল থাকবে। সাদা পোশাকে বিপুল সংখ্যক র্যাব গোয়েন্দা সদস্য মোতায়েন থাকবে। ডগ স্কোয়াড মোতায়েন থাকবে। থাকবে স্ট্রাইকিং রিজার্ভ ফোর্স। তাৎক্ষণিক যে কোনো প্রয়োজনে তাদের নামানো হবে।
পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, বিএনসিসি এবং বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করে সার্বিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হুসাইন বলেন, একটি হেলপ লাইন থাকবে, এখানে বিভিন্ন অভিযোগ নেয়া হবে। সব ধরনের উন্মুক্ত অনুষ্ঠান বিকেল ৫টার মধ্যে শেষ করতে হবে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ব্যবস্থা থাকবে।
জেইউ/এসএইচএস/এবিএস