চুরি যাওয়া মোবাইলের সূত্র ধরে হত্যাকারী ধরলো পিবিআই

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:৩৮ পিএম, ১০ মার্চ ২০২৪

চুরি করার সময় দেখে ফেলায় মিষ্টি ব্যবসায়ী নির্মল দেবনাথকে বটি দিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত মাসুম বিল্লাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

পিবিআই বলছে, বাড়িতে কেউ না থাকায় নির্মলকে হত্যার বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। ফলে ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডে জড়িত ঘাতককে গ্রেফতার করতে প্রায় পাঁচ মাস সময় লাগে। নিহতের চুরি যাওয়া মোবাইলের সূত্র ধরে আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন হয়।

গত ৬ মার্চ মাধবদী থানার অজোপাড়াগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় উদ্ধার করা হয় হত্যায় ব্যবহৃত বটি ও চুরি করে নিয়ে যাওয়া মোবাইল।

রোববার (১০ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডি পিবিআই সদরদপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান নরসিংদী জেলার পিবিআই ইউনিটের ইনচার্জ (অতিরিক্ত ডিআইজি) মো. এনায়েত হোসেন মান্নান।

তিনি বলেন, নরসিংদী জেলার মাধবদীর দক্ষিণ বিরামপুর এলাকার নির্মল দেবনাথ (৪৩) পেশায় একজন মিষ্টি কারিগর ও ব্যবসায়ী। ঘটনার আগের দিন ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর নির্মলের স্ত্রী মনি দেবনাথ তার সন্তানদের নিয়ে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনে তার বাবার বাড়িতে যান। পেশাগত কাজ শেষে রাতে নির্মল একাই বাড়িতে এসে ঘুমিয়ে যান। পরের দিন ১৫ নভেম্বর সকালে বাড়ি ফিরে নির্মলের স্ত্রী বাড়িতে ফিরে দেখেন প্রধান ফটক খোলা।

ঘরের আসবাবাপত্র ও কাপড় চোপড় এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছে। পাশের রুমের খাটের ওপর নির্মলের রক্তাক্ত মরদেহ দেখতে পান। কোনো মালামাল খোয়া না গেলেও নির্মলের ব্যবহৃত একটি বাটন ফোন চুরি হয়। এই ঘটনায় নিহতের ছেলে বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার এক মাস পর পুলিশ সদরদপ্তরের নির্দেশে মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই।

মোবাইলের সূত্র ধরে খুলে যায় হত্যার জট
পিবিআইয়ের এই কর্মকর্তা বলেন, পিবিআই তদন্তে নেমে প্রথমে চুরি যাওয়া মোবাইলটি উদ্ধারের চেষ্টা করে। তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে পিবিআইয়ের তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানতে পারে নিহত নির্মলের মোবাইল ফোনটি ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর এলাকায় এক নারী ব্যবহার করছেন। পরবর্তীতে অভিযান চালিয়ে মোবাইলটি উদ্ধার করা হয়।

অতিরিক্ত ডিআইজি এনায়েত হোসেন মান্নান বলেন, মোবাইলটির ব্যবহারকারী লাইলী নামের নারী তদন্ত কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, মাধবদীতে কর্মরত থাকা অবস্থায় তার প্রেমিক সাকিল এ মোবাইলটি তাকে উপহার দিয়েছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে সাকিলকে নরসিংদী জেলার পলাশ থানা এলাকা থেকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

২৫০ টাকায় মোবাইল কেনেন সাকিল
জিজ্ঞাসাবাদে সাকিল জানিয়েছে, রবিন নামের একজনের কাছ থেকে মাত্র ২৫০ টাকায় মোবাইলটি কিনে লাইলীকে দেয় সাকিল। সাকিল আটকের খবরে রবিন আত্মগোপনে চলে যায়।

রবিন আটকের পর গাঁ ঢাকা দেন মাসুম
নরসিংদী জেলার পিবিআই ইউনিটের ইনচার্জ এনায়েত হোসেন বলেন, পরবর্তীতে মাধবদী থানার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে রবিনকে আটক করা হয়। রবিনের ফুপাতো ভাই মাসুম বিল্লা মোবাইলটি বিক্রির জন্য দিয়েছিল। এবার মাসুম বিল্লাকে গ্রেফতারে মাঠে নামেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। এদিকে মামাতো ভাই রবিন আটকের খবরে গাঁ ঢাকা দেন মাসুম।

গ্রেফতার এড়াতে বারবার স্থান পরিবর্তন করতে থাকেন মাসুম।
এক পর্যায়ে নরায়নগঞ্জ, গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায় পিবিআই। তবে বারবারই ফাঁকি দেন মাসুম। পরবর্তীতে মাধবদীতে নিজ এলাকা থেকে গ্রেফতার হয় মাসুম।

হত্যাকাণ্ডের আসামি মাসুম একজন পেশাদার চোর
পিবিআইয়ের এই কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতার মাসুম একজন পেশাদার চোর। তার বিরুদ্ধে চুরির একাধিক মামলা রয়েছে। কারগার থেকে বের হয়েই চুরি করেন তিনি। তেমনই চুরির উদ্দেশ্যে গত বছরের ১৫ নভেম্বর রাত সোয়া তিনটার দিকে নির্মল দেবনাথের বাড়িটি নিরিবিলি দেখে টার্গেট করে। প্রথমে রান্নাঘরের ভেন্টিলেটার ও জানালা দিয়ে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয়।

চুরি দেখে ফেলায় নির্মলকে কুপিয়ে হত্যা
পরবর্তীতে বাসার ছাঁদে গিয়ে দরজা খোলা পেয়ে বাসার ভেতরে প্রবেশ করেন চোর মাসুম। বাসায় ঢুকে বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য সংগ্রহ করে। এই সময়ে নিহত নির্মলের ঘুম ভেঙে যায়। মাসুম নির্মলের মাথার বালিশের নিচে থাকা মোবাইল ও টাকার ব্যাগ নিতে যায়। এই সময়ে ঘুম ভেঙ্গে যায় নির্মলের। নির্মল চিৎকার দিলে পালানোর চেষ্টা করে মাসুম। তবে বাড়ির প্রধান গেট বন্ধ থাকায় বের হতে পারেনি। পরবর্তীতে চোর মাসুমকে বটি দিয়ে কোপ দেওয়ার চেষ্টা করেন ব্যবসায়ী নির্মল।

সেই বটি কেড়ে নিয়ে নির্মলকে নির্মমভাবে কুপিয়ে গেট খুলে পালিয়ে যায় মাসুম। পরবর্তীতে নিহত নির্মলের সেই মোবাইলটি বিক্রি করতে মামাতো ভাই রবিনকে দেয় ঘাতক মাসুম।

গ্রেফতারের পর হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন মাসুম। বর্তমানে সে কারাগারে রয়েছেন।

পিবিআইয়ের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সিআরও অ্যন্ড মিডিয়া) আবু ইউসুফ (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) এবং পিবিআই সদরদপ্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. নাসিম মিয়া।

টিটি/এমএএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।