খেজুর-বরই নয়, সাধারণ মানুষের মূল সমস্যা আগে বের করা দরকার

সায়েম সাবু
সায়েম সাবু সায়েম সাবু , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:২৮ পিএম, ০৬ মার্চ ২০২৪

বাজারের সবকিছু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা নিয়ন্ত্রণ করছে উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এমএম আকাশ বলেছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমাতে সরকার ব্যর্থ। প্রকৃত সমস্যা আড়াল করতেই সরকারপক্ষ খেজুর-বরইয়ের গল্প শোনাচ্ছে।

বিদ্যুতের দাম, দ্রব্যমূল্যসহ সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কথা হয় জাগো নিউজের সাথে। তিনি বলেন, ‘বাঙালি মুসলমান রমজান মাসে ইফতারের সময় খেজুর খায় অনেকটা ধর্মীয় কারণে। খেজুর আমাদের খাদ্যাভ্যাসের মধ্যেও পড়ে না। সৌদি আরবের মানুষ খেজুর খায়, তাই বাঙালি মুসলমানরাও ইফতারে খেজুর রাখতে চায়।’

তবে প্রত্যেক ক্রেতার অধিকার আছে তার পছন্দের পণ্য কেনার। তার রুচি, অভ্যাস অনুপাতে খাদ্যগ্রহণ করবে। এখানে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়। আবার খেজুরের দাম বাড়লো এবং তার বিকল্প নেই এমন কথাও আমি বিশ্বাস করি না। চাহিদা ও দাম বাড়লে মানুষ বিকল্প খোঁজে। প্রয়োজনের তাগিদেই খোঁজে। নাজিরশাইল চালের দাম বাড়লে মানুষ মিনিকেট কিনবে। গরিব মানুষ আরও মোটা চাল কিনবে। বাজারে বিকল্প থাকলে গরিব মানুষের সুবিধা হয়। এটি হলো বাস্তবতা। মানুষ এমন বিকল্প ধারণ করার মধ্য দিয়েই নিজেকে মানিয়ে নেয়।

এখন আসি মূল কথায়। খেজুরের দাম বাড়লে মানুষ বরই খাবে- এ যুক্তি কীভাবে হয়? বরইয়ের দাম কি কমে যাবে? মন্ত্রী মহোদয় (নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন) কি বরইয়ের দাম কমিয়ে এমন পরামর্শ দিচ্ছেন? বিকল্প খোঁজে মানুষ স্বাদ, পুষ্টি, দামের সঙ্গে তুলনা করে। একটির দাম বাড়লে মানুষ আরেকটিতে যেতে চায়। তবে সেটা তুলনামূলক লাভজনক হলে।’

খেজুর-বরইয়ের গল্প শুনিয়ে লাভ নেই। গরিব মানুষ চাল-ডাল কত টাকায় কিনছে, সে গল্প তুলে ধরেন। খেজুর, বরই থাকে বড়লোকের ইফতার পার্টিতে। সাধারণ মানুষের মূল সমস্যা কোথায় সেটা আগে বের করা দরকার।

‘সব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়ে আপনি বিকল্প দেখাতে পারবেন না। গ্রামের কজন মানুষ খেজুর দিয়ে ইফতার করেন? দামের কারণে তারা বরইও খান না। কারণ তাদের কাছে এক মুঠো ভাতই গুরুত্বপূর্ণ। আমার পয়েন্ট হচ্ছে, সাধারণ গরিব মানুষ যেসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে বেঁচে থাকেন, সেসবে দাম কমাতে পারছে কি না সরকার? সরকার তো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ।

সব তো নিয়ন্ত্রণ করছে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা। মানুষ ভাত পাচ্ছে না, খেজুর-বরইয়ের গল্প শুনিয়ে লাভ নেই। গরিব মানুষ চাল-ডাল কত টাকায় কিনছে, সে গল্প তুলে ধরেন। খেজুর, বরই থাকে বড়লোকের ইফতার পার্টিতে। সাধারণ মানুষের মূল সমস্যা কোথায় সেটা আগে বের করা দরকার।’

আরও পড়ুন
আঙুর খেজুর নয়, বরই পেয়ারা দিয়ে ইফতার করুন: শিল্পমন্ত্রী
শুল্ক কমালেও দফায় দফায় বাড়ছে খেজুরের দাম
রোজার আগেই খেজুরের দামে অস্থিরতা

সরকার মূল সমস্যা আড়াল করতেই নানা গল্প শোনায় বলে মনে করেন তিনি। বলেন, ‘সব চলে গেছে সিন্ডিকেটের হাতে। এই সিন্ডিকেট তৈরি করছে সরকারের ঘনিষ্ঠজনরা। সরকার সুবিধা করে দিচ্ছে। মানুষ মরলেও তাদের সমস্যা নেই। সিন্ডিকেট নিয়ে সংসদেও আলোচনা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, সরকারের চেয়েও অধিক শক্তিশালী এই সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা। সবকিছু তারা নিয়ন্ত্রণ করলেও সরকার তাদের দমন করতে পারে না। সংসদে এমন আলোচনা থেকেই প্রমাণিত হয়, সরকার ব্যর্থ।’

‘মানুষ বাজারে গিয়ে চোখের পানি ফেলছে। আমি মনে করি, বাজারের এই পরিস্থিতির জন্য জ্বালানি মূল সমস্যা। দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনার কারণে বারবার জ্বালানি-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। যার প্রভাব মূলত সবকিছুতেই। ফের বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে। এ সিদ্ধান্ত জুলুমের ওপর আরও জুলুম করা।’

আমাদের পরামর্শ হচ্ছে আবারও গণশুনানির ব্যবস্থা করা হোক। রেন্টাল-কুইকরেন্টাল নিয়ে আমরা বিরোধিতা করেছি। সরকার শোনেনি। ওগুলো বলে এখন লাভ নেই। এখন সরকার তুঘলকি কায়দায় দাম বাড়াচ্ছে।

জ্বালানির এ পরিস্থিতির জন্য দায় প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটি হচ্ছে সরকারের ভুল নীতির ফল। সরকারের হাতে প্রচুর সুযোগ ছিল গ্যাসক্ষেত্রে বিনিয়োগ করার। গ্যাস অনুসন্ধান, উৎপাদন, বিনিয়োগ বাড়াতে পারলে আজ আমরা গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎ বেশি পেতাম। তাতে খরচ কমতো। ভর্তুকি কম দেওয়া লাগতো। আইএমএফের চাপে ভর্তুকি প্রত্যাহার করতে হতো না। সরকার একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে জ্বালানি খাতের বিপদ ডেকে এনেছে।’

‘বিশ্বব্যাংকের পরামর্শেই সরকার গণশুনানির ব্যবস্থা করেছিল। সরকার তা উঠিয়ে দিয়েছে। এর পরিবর্তে সরকার দায়মুক্ত অধ্যাদেশ চালু করেছে। আমাদের দাবি, সরকার ফের গণশুনানির ব্যবস্থা করুক। আলোচনা হোক।

আমরাও থাকি, সরকারপক্ষও থাক। সরকার কতটুকু ভর্তুকি দিচ্ছে, কেন দিচ্ছে, তা আলোচনার মধ্য দিয়ে বেরিয়ে আসুক। ভুল নীতির কারণে কতটুকু দাম বাড়ছে, আর বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণে কতটুকু দাম বাড়ছে তার তুলনা হোক। সরকার কোনো প্রকার আলোচনা না করে যা ইচ্ছা তাই করছে’ বলছিলেন এমএম আকাশ।

সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের পরামর্শ হচ্ছে আবারও গণশুনানির ব্যবস্থা করা হোক। রেন্টাল-কুইকরেন্টাল নিয়ে আমরা বিরোধিতা করেছি। সরকার শোনেনি। ওগুলো বলে এখন লাভ নেই। এখন সরকার তুঘলকি কায়দায় দাম বাড়াচ্ছে। এটি থামানো দরকার।

সরকার বলছে, দাম বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই। আমরা আলোচনায় অংশ নিয়ে জানতে চাই কেন উপায় নেই? আমরা উপায় বের করে দেবো। উপায় বের করে দিতে না পারলে সরকার তার সিদ্ধান্তে বহাল থাকবে। সরকার গণতান্ত্রিক সব প্রক্রিয়া নষ্ট করে ফেলছে। যে কারণে শক্তিমানরা যে যার মতো কোপ মারছে। তাতে কে মরলো আর কে বাঁচলো দেখার প্রয়োজনবোধ করছে না।’

এএসএস/এএসএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।