কিশোর গ্যাং ও মাদকরোধে র‌্যাবের কার্যকর ভূমিকা চান প্রধানমন্ত্রী

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:৩৯ পিএম, ০৬ মার্চ ২০২৪
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা - ছবি: সংগৃহীত

কিশোর গ্যাং ও মাদকরোধে র‌্যাবকে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে খাদ্য মজুত এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান আরও জোরদার করতে বলেছেন।

বুধবার (৬ মার্চ) কুর্মিটোলায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) সদরদপ্তরে সংস্থাটির ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আমাদের সামনে এখন রমজান মাস। রমজানকে বলা হয় সংযমের মাস, কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, আমরা দেখি এসময় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রয়েছেন, তারা যেন সংযমতার পরিবর্তে আরও লোভী হয়ে পড়েন। যে নিত্যপণ্যগুলো আমাদের বেশি প্রয়োজন সেগুলোর মজুত করে দামবৃদ্ধিসহ নানা কারসাজি করেন। এই অসাধু ব্যবসায়ী এবং পাশাপাশি যারা চোরাকারবারি তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

সরকারপ্রধান আরও বলেন, ঈদ সামনে এলেই জাল মুদ্রার সরবরাহ বেড়ে যায়। সেসব বিষয়েও নজরদারি আরও বাড়াতে হবে। যদিও এসব বিষয়ে অভিযান চলছে, কাজেই সেই অভিযান আপনারা অব্যাহত রাখবেন। সেটাই আমাদের কাম্য।

আরও পড়ুন: ঈদ এলেই জাল মুদ্রার সরবরাহ বেড়ে যায়, নজরদারি বাড়াতে হবে

কিশোর গ্যাং ও মাদকের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশে আরকটি সমস্যা দেখা যাচ্ছে কিশোর গ্যাং। করোনা মহামারির সময় এদের উত্থান। এ ব্যাপারে অভিযান চলছে এবং বিষয়টির দিকে আমাদের আরও দৃষ্টি দিতে হবে। আর মাদক একটি পরিবার ও সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। বিশেষ করে যুব সমাজের মেধা ও কর্মশক্তি নষ্ট হচ্ছে। তারা বিপথে চলে যাচ্ছে। এই মাদক বিস্তাররোধে র‌্যাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে, যা আরও বেশি কার্যকর করা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, মাদক সেবনকারী শুধু নয়, মাদক কারবারি ও সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধেও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। আর কোন কোন এলাকা থেকে মাদক আমাদের দেশে ঢোকে সেসব রুট চিহ্নিত করে তা বন্ধের ব্যবস্থা নিতে হবে।

এসময় নারীর প্রতি সহিংসতা, ধর্ষণ, পাচার ইত্যাদির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ নির্যাতিতা নারীর পুনর্বাসনেও র‌্যাবের সক্রিয় ভূমিকা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। স্বাগত বক্তব্য দেন র‌্যাবের মহাপরিচালক এম. খুরশীদ হোসেন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক এবং জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন: র‌্যাবের অভিযানে এক বছরে ৩৪৯ কিশোর গ্যাং সদস্য গ্রেফতার

অনুষ্ঠানে র‌্যাবের বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন হয়। এর আগে প্রধানমন্ত্রী র‌্যাব সদরদপ্তরে পৌঁছলে র‌্যাবের একটি সুসজ্জিত দল তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের অবকাঠামোগত এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে তার সরকার যা করছে, তা সফলভাবে অব্যাহত থাকবে যখন আইনশৃঙ্খলা বাজায় থাকবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো এই ব্যাপারে সচেতন থাকবে।

এসময় সরকারপ্রধান কোভিড-১৯ পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে পণ্য মূল্য ও পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। প্রধানমন্ত্রী প্রতি ইঞ্চি অনাবাদী জমিকে চাষের আওতায় আনার মাধ্যমে খাদ্যোৎপাদন বাড়াতে দেশবাসীর প্রতি তার আহবান পুনর্ব্যক্ত করেন।

র‌্যাবের অভিযান পরিচালনায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর গুরুত্বারোপ করে তিনি এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ওপরও জোর দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিনিয়ত এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে, যাতে সবার আভিযানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। দ্রুত যে কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারে। এই কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য যা যা প্রয়োজন সেটা সবসময় সরকার করে যাবে।

শেখ হাসিনা আবারও তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার মাধ্যমে টানা ৪র্থ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণের সুযোগ দেওয়ায় এবং দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার সুযোগ সৃষ্টিতে জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

আরও পড়ুন: কিশোর গ্যাং-মাদকের বিরুদ্ধে ‘অলআউট অ্যাকশনে’ যেতে চাই

প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রসঙ্গ টেনে সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং মানব সৃষ্ট দুর্যোগও আছে। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় যে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমরা দেখি আমাদের বিরোধীদল নামের সংগঠনও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, এসব ঘটনাকে মোকাবিলা করা এবং এর আসামিদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের ক্ষেত্রে আমি দেখেছি, র‌্যাব সিসিটিভি ফুটেজসহ অন্যান্য মাধ্যম থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে। এক্ষেত্রে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। না হলে দেশে একটি অঘটন ঘটানোর পর এর দায়ভার অন্যের ওপর চাপানোর একটা প্রবণতা রয়েছে।

এসময় প্রধানমন্ত্রী ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সে সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বলেছিলেন, আমি নিজে (শেখ হাসিনা) ভ্যানিটি ব্যাগে গ্রেনেড নিয়ে নিজেই নাকি মেরেছি। মানে আমি মনে হয় আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলাম। এভাবে ২৮ অক্টোবরের ঘটনা এবং জ্বালাও পোড়াওয়ের দায়ও অন্যের ওপর চাপানোর চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু এখন আধুনিক প্রযুক্তি রয়েছে এবং সিসিটিভির ফুটেজ থেকে সত্যিকার তথ্যগুলো বেরিয়ে আসে।

শেখ হাসিনা বলেন, সে যে সংস্থার লোকই হোক, তাকে আমরা আইনের আওতায় এনে তার বিচার করি এবং করছি। ভবিষ্যতেও বিচার হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্ত যার যার কর্তব্য পালন যথাযথভাবে করছে কি না সেটা দেখার দরকার। কিন্তু আমাদের দেশের সংস্থা তারা দেশের মানুষের নিরাপত্তার জন্য যখন কোনো অপরাধী শনাক্ত করবে বা ধরবে বা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সেক্ষেত্রে আর একটি দেশ এসে নিষেধাজ্ঞা দেবে, এটা আমাদের কাছে কখনো গ্রহণযোগ্য নয়।

তিনি বলেন, এই দেশটা আমাদের। রক্ত দিয়ে আমরা স্বাধীনতা এনেছি। ‘সেভেনথ ফ্লিট’ পাঠিয়েও এই স্বাধীনতায় বাধা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল, যা আমেরিকার জনগণ করতে দেয়নি। আদালতে তারা বাধা দিয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী র‌্যাব সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘বাংলাদেশ আমার অহংকার’ এই মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে জনগণের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা দিতে অতীতের ন্যায় ভবিষ্যতেও এই বাহিনীর সদস্যরা আরও দায়িত্বশীল কার্যক্রম ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে সেটাই আশা করি।

এসইউজে/জেডএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।