বেইলি রোডে আগুন
যে পুকুরের পানিতে বাঁচলো শত শত প্রাণ
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:১৫ পিএম, ০১ মার্চ ২০২৪
রাজধানীর বঙ্গবাজারের আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৪৮টি ইউনিট কাজ করেছিল। পানি ছিটানো হয়েছিল হেলিকপ্টারেও। দীর্ঘ ৭৫ ঘণ্টা পর সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। বঙ্গবাজারের আগুন নিয়ন্ত্রণে দেরি হয় মূলত পানির স্বল্পতার কারণে। সে সময় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুর থেকে পানির ব্যবস্থা করেছিল।
একই অবস্থা হয় রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণে। সেই আগুন ফায়ার সার্ভিসের ৩০ ইউনিটের চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে এসেছিল সাড়ে তিন ঘণ্টা পর। নিউ মার্কেটের আগুনেও ফায়ার সার্ভিস বলেছিল পানির স্বল্পতার কথা।
এখানেই শেষ নয়, মোহাম্মদপুরে কৃষি মার্কেটের আগুন সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে আসে। সেখানেও ছিল পানির স্বল্পতা। বিকল্প হিসেবে বাসা-বাড়ি থেকে পানির ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন
- একই পরিবারের ৫ জনের মৃত্যু, একসঙ্গে খোঁড়া হচ্ছে কবর
- প্রাণ গেলো অতিরিক্ত ডিআইজির বুয়েটপড়ুয়া মেয়ের
- ‘পোড়া ভবন দেখে এখনো শরীর কাঁপছে’
সবশেষ রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কজি কটেজ ভবনে আগুনের ঘটনায় ত্রাতার ভূমিকায় ছিল নওরতন কলোনির পুকুর। যে পুকুরের পানি দিয়ে মাত্র দুই ঘণ্টায় নিয়ন্ত্রণে আনা হয় আগুন। বেঁচে যায় শত শত মানুষের প্রাণ। যদিও এরই মধ্যে ৪৩ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। অন্যথায় এই আগুন নিয়ন্ত্রণে আরও সময় লাগতো। দীর্ঘ হতে পারতো মৃত্যুর মিছিল।
নওরতন কলোনির নিরাপত্তাকর্মী মানিক জাগো নিউজকে বলেন, শুরুতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে থাকা পানি দিয়ে আগুন নেভানো হচ্ছিল। কিছুক্ষণ পর পাইপ দিয়ে পুকুর থেকে পানি নিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করা হয়। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে এ পুকুর থেকেই পানি নিয়ে আগুন নেভানো শুরু করে।
নওরতন কলোনির বাসিন্দা সিয়াম আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, এ পুকুরটা না থাকলে আশপাশের অনেক ভবনেই আগুন ধরে যেত। অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটতো। পুকুরটাই অনেক মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে। অথচ আমরা ঢাকা শহরের সব পুকুর-জলাশয় ভরাট করে ফেলছি।
ইলেকট্রনিক সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইসাব) সভাপতি নিয়াজ আলী চিশতি বলেন, এ ভবনে কোনো ফায়ার সেফটি প্ল্যান ছিল না। ছিল না অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা। যদি পাশের ভবনের (নওরতন কলোনি) পেছনের পুকুর না থাকতো, তাহলে ভয়ংকর অবস্থায় পড়তে হতো। মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হতো। পুকুরটাই অগণিত মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে।
এদিকে প্রাথমিকভাবে ‘কাচ্চি ভাই’ রেস্টুরেন্ট থেকে আগুন ছড়ানোর খবর শোনা গেলেও, ভবনের নিচের একটি দোকান থেকে আগুন ছড়িয়েছে বলে জানান র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) এম খুরশীদ আলম।
তিনি বলেন, নিচের একটি ছোট দোকানে প্রথমে আগুন লেগেছিল। সেখানে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র দিয়ে তারা প্রাথমিকভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। অধিকাংশ মানুষই ধোঁয়ার কারণে শ্বাসরোধে মারা গেছেন।
র্যাবের ডিজি বলেন, ভবনটিতে একটি মাত্র সিঁড়ি ছিল। দুটি লিফট ছিল। ভবনের নিচতলার প্রবেশমুখে আগুন লাগার পর কেউ নামতে পারেনি।
টিটি/জেডএইচ/এএসএম