শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম
১৬৪৯ কোটির প্রকল্প ব্যয় বেড়ে হচ্ছে ২৬৭৬ কোটি
ফিজিবিলিটি স্টাডি বা বাস্তবায়নযোগ্যতা নিরীক্ষা করে প্রকল্পের ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) প্রণয়নের নির্দেশনা থাকলেও মানছে না অনেক মন্ত্রণালয়। যার ফলে বারবার প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বাড়ছে। একই ঘটনা ঘটেছে ‘উপজেলা পর্যায়ে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ’ প্রকল্পে। ২০২১ সালের জুলাই মাসে শুরু হয় এ প্রকল্পের কাজ। মূল প্রকল্প ব্যয় এক হাজার ৬৪৯ কোটি ৩২ লাখ ৫২ হাজার টাকা প্রাক্কলন করা হলেও প্রকল্পটির ওপর ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হয়নি। বর্তমানে সংশোধিত প্রকল্পটির ব্যয় বরাদ্দ এক হাজার ২৭ কোটি ৩০ লাখ ৪৮ হাজার টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হলেও এক্ষেত্রেও করা হয়নি ফিজিবিলিটি স্টাডি।
সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) আবদুল বাকীর সভাপতিত্বে প্রকল্পটির ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়। সভায় চলমান প্রকল্পের নানা বিষয়ে ত্রুটি তুলে ধরা হয়। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আওতায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সারাদেশে ২০১টি উপজেলায় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের জন্য ‘উপজেলা পর্যায়ে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ (২য় পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পটি গ্রহণ করে। যার বাস্তবায়ন কাজ চলমান।
প্রকল্পটি এক হাজার ৬৪৯ কোটি ৩২ লাখ ৫২ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে জুলাই ২০২১ থেকে জুন ২০২৫ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। সংশোধিত প্রকল্পের ব্যয় এক হাজার ২৭ কোটি ৩০ লাখ ৪৮ হাজার টাকা বৃদ্ধি করে দুই হাজার ৬৭৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয় ধরার প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি এক বছর সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করে জুলাই ২০২১ থেকে জুন ২০২৬ মেয়াদে সংশোধনের লক্ষ্যে প্রথম সংশোধিত ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।
এক হাজার ৬৪৯ কোটি ৩২ লাখ ৫২ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে জুলাই ২০২১ থেকে জুন ২০২৫ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। সংশোধিত প্রকল্পের ব্যয় এক হাজার ২৭ কোটি ৩০ লাখ ৪৮ হাজার টাকা বৃদ্ধি করে দুই হাজার ৬৭৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয় ধরার প্রস্তাব করা হয়েছে
পরিকল্পনা কমিশন থেকে জানা গেছে, মূল প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়নি, যা করা জরুরি ছিল। এছাড়াও প্রকল্প সংশোধনের প্রস্তাবনায় প্রায় এক হাজার ২৭ কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। সুতরাং এক্ষেত্রে প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন সংক্রান্ত নির্দেশিকা মোতাবেক সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন করা আবশ্যক।
আরও পড়ুন>>
• হাজার হাজার কোটি টাকার স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষণে নেই বরাদ্দ
• খেলার উপযোগী নয় মাঠ, এক পাশে শোচনীয় অবস্থা
• খেলার আগে সরাতে হয় মদের খালি বোতল
ফিজিবিলিটি স্টাডি না করা প্রসঙ্গে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সহকারী পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) সুকুমার সাহা জাগো নিউজকে বলেন, প্রকল্পটি সরকারের বিশেষ প্রতিশ্রুত প্রকল্প, যে কারণে ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হয়নি। তবে পরিকল্পনা কমিশনের পিইসি সভা থেকে যেহেতু এ বিষয়ে বলা হয়েছে, সুতরাং আমরা ফিজিবিলিটি স্টাডি করে পুনরায় পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠাবো। পরিকল্পনা কমিশন থেকে যেসব নির্দেশনা দিয়েছে সবগুলো পালন করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের প্রধান (অতিরিক্তি সচিব) মো. আব্দুর রউফ জাগো নিউজকে বলেন, ‘উপজেলা পর্যায়ে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ’ প্রকল্পটি নিয়ে পিইসি সভায় আলোচনা হয়েছে। প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডির কপি প্রকল্পের ডিপিপিতে সংযুক্ত করতে বলা হয়েছে।
ডলারের বিপরীতে টাকার মান কম হওয়া ও বৈশ্বিক মন্দার কারণে প্যাভিলিয়ন ভবনের চেয়ার ও সোলার সরবরাহের মূল্য সংশোধিত ডিপিপিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সারফেস ড্রেন খাত, ওয়াকওয়ে নির্মাণ খাত, সংযোগ সড়ক নির্মাণ, রিটেইনিং ওয়াল খাত, সেফটিক ট্যাংক খাতের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। জমি সংক্রান্ত জটিলতার কারণেও সময়-ব্যয় বাড়ছে।
প্রকল্প সংশোধনের কারণ: জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসেবে জমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় প্রাক্কলন বৃদ্ধি ও বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ডিপিপিতে উল্লিখিত পরিমাণ মাটি ভরাট করার কথা বলা হয়েছে। প্যালাসাইডিং কাজের পরিমাণ বৃদ্ধির ফলে সংশোধিত ডিপিপিতে ব্যয় বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। এছাড়া গণপূর্ত অধিদপ্তরের সর্বশেষ রেট সিডিউল ২০২২-এর দর কার্যকর হওয়ার কারণে প্যাভিলিয়ন ভবন ও গ্যালারি, টয়লেট ব্লক ও ড্রেন নির্মাণের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বলছে, ডলারের বিপরীতে টাকার মান কম হওয়া ও বৈশ্বিক মন্দার কারণে প্যাভিলিয়ন ভবনের চেয়ার ও সোলার সরবরাহের মূল্য সংশোধিত ডিপিপিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সারফেস ড্রেন খাত, ওয়াকওয়ে নির্মাণ খাত, সংযোগ সড়ক নির্মাণ, রিটেইনিং ওয়াল খাত, সেফটিক ট্যাংক খাতের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। জমি সংক্রান্ত জটিলতার কারণেও সময়-ব্যয় বাড়ছে। মূল ডিপিপিতে মোট ১০৩টি উপজেলা জমি অধিগ্রহণের অন্তর্ভুক্ত থাকলেও সংশোধিত ডিপিপিতে ১২৫টি উপজেলার জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এ কারণে সংশোধিত ডিপিপিতে প্রাক্কলিত ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টের দাবি, ডিপিপি প্রণয়নকালে জমি অধিগ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া ব্যয় প্রাক্কলন বর্তমানে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সংশোধিত ডিপিপিতে জমি অধিগ্রহণ খাতে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে ২৮৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা। কিছু উপজেলায় বাস্তব অবস্থার কারণে ডিপিপিতে উল্লিখিত পরিমাণ অপেক্ষা মাটি ভরাট ও প্যালাসাইডিং কাজের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সংশোধিত ডিপিপিতে ব্যয় বেড়েছে ২৫৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন>>
• প্রতি উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
• প্রতিটি উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম হবে: পাপন
• শেখ রাসেলের নামে ৪৯০টি মিনি স্টেডিয়াম
মূল ডিপিপিতে ১৮৬টি উপজেলা অন্তর্ভুক্ত ছিল। জমি সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ৯টি উপজেলা বাদ দেওয়ায় উপজেলার সংখ্যা হয় ১৭৭টি। পরবর্তী সময়ে ১৭৭টি উপজেলাসহ ১৫টি উপজেলা এবং অন্য ৯টি খাস উপজেলাসহ মোট ২০১টি উপজেলা নিয়ে সংশোধিত ডিপিপি প্রণয়ন করা হয়। মূল ডিপিপিতে মোট ১০৩টি উপজেলা জমি অধিগ্রহণের জন্য অন্তর্ভুক্ত থাকলেও সংশোধিত ডিপিপিতে ১২৫টি উপজেলার জমি অধিগ্রহণ করতে হবে বিধায় সংশোধিত ডিপিপিতে প্রাক্কলিত ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
সারফেস ড্রেন খাতে ২৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা, ওয়াকওয়ে নির্মাণ খাতে ৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, সংযোজন সড়ক নির্মাণ খাতে ২৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, রিটেইনিং ওয়াল খাতে ১০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, সেফটিক ট্যাংক খাতে ১৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয় বাড়ায় প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে।
এছাড়া, সারফেস ড্রেন খাতে ২৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা, ওয়াকওয়ে নির্মাণ খাতে ৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, সংযোজন সড়ক নির্মাণ খাতে ২৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, রিটেইনিং ওয়াল খাতে ১০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, সেফটিক ট্যাংক খাতে ১৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয় বাড়ায় প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মাঠগুলোর প্রাকৃতিক পরিবেশ অক্ষুণ্ন রেখে এবং সবাই যেন মাঠে খেলাধুলায় অংশ নিতে পারে সেদিকে নজর রেখেই উন্মুক্ত পরিবেশে স্টেডিয়ামগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। জাতীয় জীবনে শৃঙ্খলা, সুস্বাস্থ্য, নেতৃত্ব ও চরিত্র গঠনে খেলাধুলার অবদান অপরিসীম। বিশেষ করে দেশের তরুণ ও যুব সমাজকে ক্রীড়া কার্যক্রমে আগ্রহী করে প্রাণচাঞ্চল্য ও চিত্ত-বিনোদনের সুযোগ তৈরির মাধ্যমে তাদের পারস্পরিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ তৈরিতেও খেলাধুলার ভূমিকা অনস্বীকার্য। সে কারণেই সরকার প্রতিটি উপজেলায় খেলার মাঠ নির্মাণের জন্য উপজেলা পর্যায়ে একটি করে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেয়।
এরই অংশ হিসেবে ‘উপজেলা পর্যায়ে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ’ প্রকল্পের কাজ চলমান। প্রকল্পের মূল কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে ভূমি অধিগ্রহণ ও ভূমি উন্নয়ন, প্রতিটি উপজেলায় শেখ রাসেলের ম্যুরাল স্থাপন, প্যাভিলিয়ন ভবন নির্মাণ, গ্যালারি, কম্পিউটার সামগ্রী ও আসবাবপত্র কেনাকাটা, আরসিসি সারফেস ড্রেন নির্মাণ এবং গাছ লাগানো।
এমওএস/এমকেআর/এসএইচএস/এএসএম