আগরতলা দূতাবাসে গভীর শ্রদ্ধায় ভাষা শহীদদের স্মরণ
দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস পালন করেছে আগরতলা বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন। বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দুই পর্বে অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে দিবসটি পালন করা হয়।
সকাল ৬টা ২০ মিনিটে সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরনের মধ্য দিয়ে প্রথম পর্বের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সাড়ে ৬টায় ভাষা শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত ও বাংলাদেশের উত্তরোত্তর উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা করা হয়।
সকাল ৬টা ৩৫ মিনিটে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া বাণী পাঠ করা হয়।
এরপর দ্বিতীয় পর্বে ত্রিপুরা সরকার ও বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন, আগরতলার যৌথ উদ্যোগে সকাল ৭টায় প্রভাতফেরি ও বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা আগরতলার টাউন হল ভবন প্রাঙ্গণ থেকে যাত্রা শুরু করে শহরের বিভিন্ন অংশ প্রদক্ষিণ করে পুনরায় টাউন হল ভবনে গিয়ে শেষ হয়।
শোভাযাত্রায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, ত্রিপুরা রাজ্যের শিক্ষা দপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের পদস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী ও স্বেচ্ছাসেবকসহ ৩ সহস্রাধিক মানুষ অংশ নেন।
শোভাযাত্রা শেষে ভাষা শহীদদের স্মরণে টাউন হল ভবনের সামনে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের অস্থায়ীভাবে নির্মিত শহীদ মিনারে যৌথভাবে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের পক্ষে সহকারী হাইকমিশনার এবং ত্রিপুরা সরকারের পক্ষে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডা. মানিক সাহা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এছাড়া ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
সকাল সাড়ে ৯টায় টাউন হল ভবনে দিবসের তাৎপর্য নিয়ে এক আলোচনা সভা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডা. মানিক সাহা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ত্রিপুরা শিক্ষা দপ্তরের বিশেষ সচিব শ্রী রাভাল হেমেন্দ্র কুমার, ছিলেন আগরতলার বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনার আরিফ মোহাম্মাদ, বিশেষ অতিথি ছিলেন ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের মধ্যশিক্ষা অধিকারের অধিকর্তা শ্রী এন. সি. শর্মা, তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের অধিকর্তা শ্রী বিম্বিসার ভট্টাচার্য প্রমুখ।
রাজ্যের বিভিন্ন বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় থেকে আসা ৫০০ ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক ও আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। বক্তারা ভাষা শহীদদের অবদানের কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন।
সহকারী হাইকমিশনার আরিফ মোহাম্মাদ তার বক্তব্যে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউলসহ ভাষা শহীদদের স্মরণের পাশাপাশি ভাষা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের বিষয়ে আলোচনা করেন।
এছাড়া তিনি ভাষা আন্দোলনের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরাসহ ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতির পেছনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানের কথা বিশেষভাবে তুলে ধরেন। তিনি ত্রিপুরা সরকারকে যৌথভাবে এ আয়োজনে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য এবং সার্বিক সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা সরকারের মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডা. মানিক সাহা তার বক্তব্যে বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি সারাবিশ্বের বাংলা ভাষী মানুষের জন্য একটি গৌরবময় দিন। তিনি ভাষা আন্দোলনের সব অবদানকারীকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করাসহ এ বছর ইউনেস্কো প্রদত্ত থিম তথা বহু ভাষার শিক্ষার ওপর আলোকপাত করেন।
এরপর রাজ্যের বিভিন্ন বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় থেকে আসা ছাত্র-ছাত্রী এবং ত্রিপুরার বিভিন্ন ভাষাভাষী ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীসহ অন্যান্য শিল্পীদের পরিবেশিত মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপস্থিত দর্শকদের নজর কাড়ে।
এসইউজে/এসএনআর/জিকেএস