উত্তপ্ত সীমান্ত

বাংলাদেশের নতুন চ্যালেঞ্জ মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীদের ফেরত

তৌহিদুজ্জামান তন্ময়
তৌহিদুজ্জামান তন্ময় তৌহিদুজ্জামান তন্ময় , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৫১ পিএম, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

 

  • মর্টারশেল এসে পড়ছে বাংলাদেশের সীমান্তে
  • উখিয়ায় সাতজন আহত
  • আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমার বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বেড়ে ৩২৭
  • প্রায় ১৫০ বিদ্রোহীর দখলে থাকা সীমান্তঘেঁষা ক্যাম্প
  • আকাশসীমা লঙ্ঘন না করতে মিয়ানমারকে সতর্কবার্তা
  • তুমব্রু-ঘুমধুম সীমান্ত এলাকা সাধারণ জনগণের জন্য নিরাপদ নয়


টানা গুলিবর্ষণ, মর্টারশেল বিস্ফোরণে আতঙ্ক বাড়ছে সীমান্ত এলাকাজুড়ে। বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম, কক্সবাজার জেলার উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন থেকে শুরু করে টেকনাফের হ্নীলা পর্যন্ত সীমান্ত এলাকা উত্তপ্ত। ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্ত এলাকা সাধারণ জনগণের জন্য অনিরাপদ বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বাড়ির বাইরে যেতেও ভয় পাচ্ছেন স্থানীয়রা। সীমান্তের বাসিন্দাদের সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। খোলা হয়েছে দুটি আশ্রয়কেন্দ্র।

মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সংঘর্ষের ঘটনা কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের সীমান্তে এসে পড়ছে একের পর এক মর্টারশেল। দেশটির এ পরিস্থিতি নতুন করে চিন্তায় ফেলেছে বাংলাদেশকে। আগে থেকে আশ্রয় নেওয়া ১০ লাখ রোহিঙ্গা নিয়ে এরই মধ্যে কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বারবার প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠাতে পারেনি সরকার। এ অবস্থায় আবারও সীমান্তে অস্থিরতা নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশকে।

আরও পড়ুন>> মিয়ানমারে অস্থিতিশীলতা বাড়লে বাংলাদেশের ঝামেলা আরও বাড়তে পারে 

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সার্বিক পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ এ যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের গা বাঁচিয়ে চলার দিন শেষ। কাল বিলম্ব না করে সরকারকে এখনই করণীয় নির্ধারণ করে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে।

jagonews24

তবে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে চলমান সংঘর্ষের ঘটনায় বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) ধৈর্য ধারণ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ তথ্য জাতীয় সংসদকে জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে সরকার।

নতুন করে সংঘর্ষের মধ্যে দেশটির সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ৩২৭ জন সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। মানবিক দিক বিবেচনায় আপাতত আশ্রয় দেওয়া হলেও শিগগির তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের সরকার। কিন্তু তাদের ফেরত পাঠাতে ঠিক কতদিন লাগতে পারে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে এখনো কিছু জানানো হয়নি।

 

আরাকান আর্মি যদি এ দফায় তাদের সদর দপ্তর রাখাইনে নিয়ে আসতে পারে, তাহলে বাংলাদেশকে দক্ষিণ সীমান্তে সবকিছুর জন্য তাদের সঙ্গেই কথা বলতে হবে। বর্তমান বিশ্বে অনেক রাষ্ট্রকে এভাবে নন-স্টেট-অ্যাক্টরদের বিবেচনায় নিতে বাধ্য হয়।–আলতাফ পারভেজ



গত কয়েক দিনের ধারাবাহিকতায় বুধবার পর্যন্ত ব্যাপক সংঘাতের খবর পাওয়া গেছে। মিয়ানমার থেকে জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে সংঘাতের বর্ণনা দিয়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এক সদস্য বলেন, বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি মর্টারশেল ও শটগানের হাজার হাজার গুলি ছুড়ছে। আমাদের এখানে খাবার শেষ। গত দুদিন হেলিকপ্টারে করে খাদ্য নিয়ে এলেও তা লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে বিদ্রোহীরা। তারা আমাদের ওপর গুলি চালিয়ে যাচ্ছিল। জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছি।

আরও পড়ুন>> মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এলেন আরও ৬৩ জন 

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে যারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন তাদের ভাষা বুঝতে পারছেন না বিজিবির সদস্যরা। এমনকি তারা ইংরেজিতেও কথা বলতে পারেন না। কোনো দোভাষী না থাকায় সেখানকার সব তথ্য বুঝতে সময় নিচ্ছেন বিজিবি সদস্যরা। তবে স্থানীয়দের কয়েকজন তাদের ভাষা অল্প বুঝতে পারলেও পুরো কথা বুঝতে পারছেন না।  

এদিকে মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলিতে মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সারাদিন বাংলাদেশের পাঁচ নাগরিক আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ঘুমধুম সীমান্তে একজন, উখিয়ার পালংখালী সীমান্তে চারজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

সরেছে ১৫০ পরিবার, অবিস্ফোরিত বোমা থেকে সতর্কতা

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, ঘুমধুম সীমান্তের পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। সীমান্ত এলাকার ২৪০ পরিবারের লোকজন ঝুঁকিতে রয়েছে। স্থানীয় চেয়ারম্যান তাদের নিরাপদে সরে যেতে সহযোগিতা করছেন। এরই মধ্যে সীমান্তবর্তী ১৫০ পরিবার নিজ উদ্যোগে স্বজনদের বাড়ি গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। আর প্রশাসনের পক্ষ থেকে জলপাইতলী এলাকা থেকে ৩০ পরিবারকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। দুটি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। ওখানে অন্যরা যেন নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। এটা প্রশাসনের পক্ষে অনুরোধ।

সীমান্ত পরিদর্শনে গিয়ে জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তার ঝুঁকি মাথায় রেখে দুটি স্কুলে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সার্বিক বিষয়ে প্রশাসন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

সীমান্তের ওপার থেকে ছুটে আসা বুলেট ও বোমার অংশে তাৎক্ষণিকভাবে হাত না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, অবিস্ফোরিত বোমা বিস্ফোরণে হতাহত হতে পারেন যে কেউ, তাই সার্বিক পরিস্থিতি মাথায় রেখে সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ।

সেনা ও সীমান্তরক্ষীদের কবে, কীভাবে ফেরত পাঠাবে বাংলাদেশ?

আশ্রয় নেওয়া সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের ফেরত পাঠাতে সরকার এরই মধ্যে মিয়ানমারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

তবে সব ধরনের প্রক্রিয়া শেষ করে তাদের ফেরত পাঠাতে বেশ কিছুদিন সময় লেগে যেতে পারে বলে জানা যায়।

ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া কী?

একটি দেশের নাগরিক বিনা অনুমতিতে অন্য আরেকটি দেশের সীমানায় ঢুকে পড়লে সেটিকে অনুপ্রবেশ হিসেবেই ধরা হয়। এক্ষেত্রে অনেক সময় আটক করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া যায়। কিন্তু যুদ্ধ পরিস্থিতি বা অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে প্রাণে বাঁচতে একটি দেশের নাগরিক অন্য দেশের সরকারের কাছে সাময়িকভাবে আশ্রয় চাইলে সেটি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয়।

jagonews24

এর আগে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। পরবর্তীসময়ে তাদের ফেরত পাঠাতে দু’দেশের মধ্যে প্রত্যাবাসন চুক্তিও হয়েছে। কিন্তু নিজ দেশে ফিরতে নিরাপদবোধ না করায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কাউকেই গত ছয় বছরে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়নি।

আরও পড়ুন>> মিয়ানমারের সংঘাতে প্রায় জনশূন্য নাইক্ষ্যংছড়ির ৭ গ্রাম 

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন জানান, রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আশ্রয় নিলেও মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সদস্য ও সরকারি কর্মকর্তাদের আশ্রয় নেওয়ার এমন ঘটনা বাংলাদেশে আগে কখনো দেখা যায়নি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা এবারই প্রথম। কাজেই সরকার কীভাবে এবং কত দ্রুততার সঙ্গে নিরাপদে তাদের ফেরত পাঠাতে পারে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে প্রতিবাদ, যুদ্ধবিমান আকাশসীমা লঙ্ঘন না করার সতর্কবার্তা

মিয়ানমার সীমান্তের ওপার থেকে আসা মর্টারশেলের আঘাতে দুজনের মৃত্যুর ঘটনায় ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়েকে তলব করে প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ৬ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হয়েছিল। তাকে ডেকে সীমান্তের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ।

 

শুধু জান্তা সরকার নয়, চিন্তা করতে হবে রোহিঙ্গা যেসব জায়গায় থাকে সেসব জায়গায় এখন কারা বিচরণ করছে এবং আলটিমেটলি এক থেকে তিন মাসের মধ্যে যদি দেখা যায় পুরো রাখাইন আরাকান আর্মির দখলে চলে গেছে তখন কার সঙ্গে কথা বলবেন? তখন অপেক্ষা করতে হবে জান্তা সরকারের পতন হবে কি না, অন্য কোনো সরকার আসে কি না।- ড. এম সাখাওয়াত হোসেন



পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশে প্রাণহানি বা সম্পত্তির জন্য ক্ষতিকারক এমন কোনো ধরনের অগ্রহণযোগ্য কর্মকাণ্ড বন্ধে মিয়ানমার সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। রাখাইন থেকে আর কোনো বাস্তুচ্যুতকে বাংলাদেশ গ্রহণ করবে না বলে রাষ্ট্রদূতকে জানানো হয়েছে। মিয়ানমার বিমানবাহিনী সীমান্তের খুব কাছে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে এবং তারা যেন বাংলাদেশ সীমানায় না প্রবেশ করে, সে বিষয়ে তাদের সতর্ক করা হয়েছে।

ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্ত নিরাপদ না

৭ ফেব্রুয়ারি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু ও ঘুমধুম সীমান্ত পরিদর্শন করেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী।

তিনি জানান, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্ত এলাকা সাধারণ জনগণের জন্য নিরাপদ নয়। বিশেষ করে যখন গোলাগুলি শুরু হয়, সেই সময়টুকু তো একেবারেই নয়! এটা স্বাভাবিক যে, নিজের ঘর-বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র থাকাটা আদৌ সুখকর কোনো কিছু নয়। তবে জীবন রক্ষার জন্য যখন এ ধরনের পরিস্থিতি হয়, তখন তো কিছুটা করতেই হবে।

বিজিবি মহাপরিচালক আরও বলেন, আমরা আর কোনো মৃত্যু চাই না। চাই এই পরিস্থিতির আশু সমাধান। বিজিবি ধৈর্য ধারণ করে, সহনশীলভাবে যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করে বর্ডার সিলড রাখতে প্রস্তুত।

ক্রাইসিস থেকে সুযোগ বের করতে হবে

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইতিহাসবিষয়ক গবেষক আলতাফ পারভেজ জাগো নিউজকে বলেন, ‘মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী গত তিন মাসে জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর শক্তিশালী প্রতিরোধের কারণে মাটিতে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যেই চীন রাজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বহু মানুষ মিজোরামে আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে নতুন করে অনুপ্রবেশের আশঙ্কা প্রবল।’

তিনি বলেন, ‘আরাকানজুড়ে রাখাইন গেরিলা-সুনামি মিজোরাম, মণিপুর, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলেও বহুমাত্রিক চাঞ্চল্য তৈরি করবে। উদ্বাস্তু মানুষের আসা-যাওয়ার বাইরেও ওই চাঞ্চল্যের বাড়তি ভূরাজনৈতিক তাৎপর্য আছে। কিন্তু বাংলাদেশ কি কেবল শরণার্থী থামানোর কলাকৌশলে আটকে থাকবে? আরাকান আর্মি যদি এ দফায় তাদের সদর দপ্তর রাখাইনে নিয়ে আসতে পারে, তাহলে বাংলাদেশকে দক্ষিণ সীমান্তে সবকিছুর জন্য তাদের সঙ্গেই কথা বলতে হবে। বর্তমান বিশ্বে অনেক রাষ্ট্রকে এভাবে নন-স্টেট-অ্যাক্টরদের বিবেচনায় নিতে বাধ্য হয়।’

jagonews24

আলতাফ পারভেজ বলেন, ‘এটা তো স্পষ্ট যে, আমরা কয়েক বছরের চেষ্টায় রোহিঙ্গাদের ফেরাতে পারিনি। বর্তমান পরিস্থিতি তো সেটি আরও জটিল করলো। এটা সরকারের জন্য উদ্বেগের। এমন অবস্থার মধ্যেই সরকারকেই করণীয় নির্ধারণ করতে হবে। এটা ক্রাইসিস। এই ক্রাইসিস থেকে কীভাবে সুযোগ বের করা যায় সেটা ঠিক করতে হবে।’   

পরিস্থিতি ক্রমেই ঘোলাটে হচ্ছে

নির্বাচন বিশ্লেষক, সাবেক সামরিক কর্মকর্তা এবং এসআইপিজির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো (এনএসইউ) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘মিয়ানমার সীমান্তে বাংলাদেশের সঙ্গে যে ব্যাটালিয়ন ছিল সেই পুরো ব্যাটালিয়ন বাংলাদেশে আশ্রয়ের জন্য চলে আসছে। হয়তো আর ৫০-৬০ জন হলেও হতে পারে। কারণ আমাদের সীমানা বড় নয়।’

রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার বাংলাদেশকে কতটা সহায়তা করতে পারবে এখন? আদৌ পারবে কি না? যতই আমরা বলি, কাল-পরশু পাঠাবো; আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু কারা সহযোগিতা করতে পারবে? চায়না পারবে এই মুহূর্তে? এখন রোহিঙ্গা নিয়ে আলোচনা করতে গেলে মিয়ানমারের জান্তা সরকার থাকবে কি থাকবে না তা আমরা বলতে পারি না।’

‘শুধু জান্তা সরকার নয়, চিন্তা করতে হবে রোহিঙ্গা যেসব জায়গায় থাকে সেসব জায়গায় এখন কারা বিচরণ করছে এবং আলটিমেটলি এক থেকে তিন মাসের মধ্যে যদি দেখা যায় পুরো রাখাইন আরাকান আর্মির দখলে চলে গেছে তখন কার সঙ্গে কথা বলবেন? তখন অপেক্ষা করতে হবে জান্তা সরকারের পতন হবে কি না, অন্য কোনো সরকার আসে কি না।’

রাখাইন স্টেটে কারা থাকবে সেটা সময়ের অপেক্ষার ব্যাপার জানিয়ে ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এ ঘোলাটে সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধান হচ্ছে না, বরং আরও আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। হয়তো এরই মধ্যে রোহিঙ্গারা ভয়ে কোথাও না কোথাও পালিয়ে আছে। রাখাইন স্টেটের সঙ্গে একমাত্র বিদেশি রাষ্ট্র শুধু বাংলাদেশ। ওদের সঙ্গে আর কোনো দেশের সীমানা নেই। অতএব সেখানকার মানুষের বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোথাও যাওয়ার রাস্তাও নেই। বিষয়টি ক্রমেই ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে।’  

সাবেক সামরিক কর্মকর্তা ড. সাখাওয়াত আরও বলেন, ‘যারা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে তাদের ওপর অ্যাটাক হয়নি। বিদ্রোহীরা প্রায় এক মাস থেকে সেখানে ঘেরাও করে রেখেছিল আত্মসমর্পণের জন্য। হয় আত্মসমর্পণ করো না হয় তোমাদের ওপর অ্যাটাক করা হবে। এরপর কয়েকটা মর্টারশেল মারা হয়।

টিটি/এএসএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।