খাল দখলদারদের ধিক্কার জানালেন মেয়র আতিক

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:০২ পিএম, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

যারা সরকারি জমি ও খাল দখল করেছেন, তাদের ধিক্কার জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখের বিষয় সরকারি খাল, খাসজমি এগুলো কতিপয় দখলদার অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন। আমরা জানতে পেরেছি যারা খাল, খাসজমি অবৈধভাবে দখল করেছেন তারা হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। যারা সরকারি জমি, জনগণের জমি দখল করেছেন তাদের ধিক্কার জানাই।’

বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সাতারকুল-ভাটারা একশ ফুট এলাকায় সূতিভোলা খালের উন্নয়ন কার্যক্রম পরিদর্শন এবং খালে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনাকালে এসব কথা বলেন তিনি।

ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘স্থানীয় সংসদ সদস্য, কাউন্সিলর, নদী রক্ষা কমিশনসহ পরিবেশ নিয়ে কাজ করে এমন অন্য সংগঠনের প্রতিনিধি ও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দেবো। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করবো। অভিযান শুরু হয়েছে। এই অভিযান চলবে।’

শুরুতে ডিএনসিসি মেয়র সূতিভোলা খাল এবং পরে পাশের সমুদ্র খালের উন্নয়ন কাজ পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে ডিএনসিসি মেয়র সূতিভোলা খালপাড় দিয়ে হেঁটে যান। এসময় মেয়রের উপস্থিতিতে খালপাড়ে অবৈধভাবে গড়ে তোলা ইটের তৈরি ওয়াল ভেঙে দিয়ে প্রায় আধা কিলোমিটার জায়গা দখলমুক্ত করা হয়। অভিযান পরিচালনা করেন ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ড. মোহাম্মদ মাহে আলম, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুলকার নায়ন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুব হাসান এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান।

atikul-1.jpg

পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘মূল খালের পাশে অনেক খাসজমি রয়েছে। সেসব খাসজমিতে শিশুদের জন্য খেলাধুলার জায়গা করে দেওয়া হবে। খালপাড়ে ওয়াকওয়ে, সাইকেল লেন, নান্দনিক গণপরিসর, পার্ক, নৌকার জন্য ঘাট নির্মাণ করা হবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। প্রথম ধাপে ৬ দশমিক ৮ কিলোমিটার খালের উন্নয়নকাজ করা হবে। এর আওতায় সূতিভোলা খাল ও সমুদ্র খালের উন্নয়ন হবে। প্রায় সাত কিলোমিটার খাল উন্নয়নের এই প্রকল্পে প্রায় ৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।’

চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এই উন্নয়নকাজ সম্পন্ন হবে বলেও জানান মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।

সূতিভোলাকে একটি মডেল খাল হিসেবে উন্নয়ন করার ঘোষণা দিয়ে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘ঢাকার পূর্ব পাশে মোট প্রায় ২৯ কিলোমিটার খালের উন্নয়ন ও খালগুলোর মধ্যে কানেকটিভিটি তৈরি করা হবে। এ বছরের মধ্যে প্রথম ধাপে সূতিভোলা খালের ৭ কিলোমিটার উন্নয়ন করবো। পরবর্তী সময়ে বাকি ২২ কিলোমিটারের উন্নয়ন হবে। সূতিভোলা খালটিকে একটি মডেল হিসেবে উন্নয়ন করা হবে। সূতিভোলা খালের আদলে পর্যায়ক্রমে অন্য খালগুলোরও উন্নয়ন করা হবে।’

পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য ওয়াকিল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘সবাইকে অনুরোধ করছি আপনারা নিজ দায়িত্বে খালের এবং সরকারি জমির অবৈধ দখল ছেড়ে দিন। খালের পাড়ে ওয়াকওয়ে, সাইকেল লেন এবং সবুজায়ন হলে এই এলাকাটি অনেক সুন্দর হবে। জনগণ এর সুফল ভোগ করবে। তাই জনগণের জন্য এই এলাকাটি নান্দনিকভাবে সাজাতে খালের উন্নয়ন করা হবে।’

এসময় স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, জলাধারগুলো ঢাকা শহরের হার্টের (হৃৎপিণ্ড) মতো। এই জলাধারের পানির প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করা হার্টের ব্লক হওয়ার মতো। হার্টে ব্লক হলে যেমন হার্ট অ্যাটাক হয়ে যায়, তেমনি জলাধার ব্লক হলে শহর প্রাণ হারাবে, জলাবদ্ধতা হয়ে শহর ডুবে যাবে। তাই হাউজিং কোম্পানিগুলোকে এই জলাধার ভরাট করতে দেওয়া যাবে না। সিটি করপোরেশনসহ সব সংস্থাকে সমন্বিতভাবে এই বিষয়ে কাজ করতে হবে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পানিসম্পদ কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আতাউর রহমান বলেন, ঢাকার খালগুলো একসময় ওয়াসার অধীনে ছিল। ২০২০ সালে সিটি করপোরেশন বুঝে পাওয়ার পর থেকে খালের উন্নয়নে কাজ করছে। বিভিন্ন খালে দেখা যাচ্ছে নেভিগেশন নিশ্চিত না করে পানির উপরের স্তরে ওয়াসার পাইপ বসানো হয়েছে। যারা ডিজাইন করেছেন কীভাবে এটি হলো? আমি অনুরোধ করবো প্রতিটি খালের নেভিগেশন নিশ্চিত করে পাইপ বসানোর জন্য। সবাই সমন্বয় করে কাজ করলে সমস্যার সমাধান হবে, একটি সুন্দর ঢাকা নির্মাণ করা সম্ভব হবে।

এমএমএ/কেএসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।