ডিবির জালে বাইকার

ভাইরাল হতে ৫ লাখের বাইকে আগুন দিয়ে আয় মাত্র ২০০ ডলার

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:৪১ পিএম, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

রাজধানীর আফতাবনগর হাউজিং এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ অন্যায়ভাবে মামলা দিয়েছে- এমন অভিযোগ এনে বাইকে আগুন দেন রাসেল ওরফে ‘জুনিয়র টাইগার শ্রফ’। তিনি ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হতে বাইকে আগুন দেন বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) লালবাগ বিভাগ।

ডিবি বলছে, রাসেলের সঙ্গে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। বরং তার এক বন্ধুকে ট্রাফিক আইন ভঙ্গের দায়ে মামলা দেয় ট্রাফিক পুলিশ। তিনি সেই কেসের স্লিপ দেখিয়ে নিজের পাঁচ লাখ টাকা দামের বাইকে আগুন দিয়েছেন। এই ভিডিও থেকে আয় করেছেন মাত্র ২০০ ডলার।

রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন বাইকারের ভিডিও দেখতে পাই। তাদের মধ্যে ছেলে-মেয়ে উভয়ই মূলত ইউটিউবার। তারা একটা গ্রুপ নিয়ে নিয়মিত দ্রুত গতিতে বাইক চালান। রাসেল নিজেকে ‘জুনিয়র টাইগার শ্রফ’ পরিচয় দিতেন। তার একটি গ্রুপ আছে সেই গ্রুপে মেয়েরাও আছে। এসব মেয়েকে নিয়ে তিনি দ্রুত গতিতে বাইক চালান। সম্প্রতি রাসেল পাঁচ লাখ টাকা দামের একটি মোটরসাইকেলে আগুন দেন। সেই দৃশ্য ধারণ করে ইউটিউবে দিয়ে তার আয় হয় ২০০ ডলার।

‘পরে তাকে ও তার মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। এরপর দেখা যায়, তার মোটরসাইকেলে উচ্চ শব্দের একটি যন্ত্র লাগিয়েছেন। এসব যন্ত্র লাগানো আইনগত নিষিদ্ধ। তার ভিডিওতে যে মামলার তথ্য দিয়েছেন আসলে এমন কোনো ঘটনা তার সঙ্গে ঘটেনি। বরং ফুয়াদ নামে তার এক বন্ধুর মামলার স্লিপ। সেই ফুয়াদও বিপদজনকভাবে মোটরসাইকেল চালানো, সিগন্যাল অমান্য করা এবং অবৈধ উচ্চ শব্দের যন্ত্র সংযোজনের দায়ে এই মামলা খেয়েছেন।’ বলেন এই কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন>> অপহরণ চক্রের হয়ে কাজ করছেন গাড়িচালকরা, ডিবির সতর্কতা

হারুন অর রশীদ আরও বলেন, মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর এলাকার প্রবাসীর সন্তান রাসেল মিয়া। যিনি নিজেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাসেল ওরফে ‘জুনিয়র টাইগার শ্রফ’ পরিচয় দিতেন। এই নামে ফেসবুক ও ইউটিউবে অন্যের বানানো নানা ধরনের কনটেন্ট পোস্ট করতেন যার অধিকাংশই অর্থহীন, অশালীন ও দেশের আইনবিরোধী। বখে যাওয়া রাসেল ২০২০ সালে এইচএসসি পাস করার পরে আর পড়াশোনা করেননি। মাঝে কিছু সময় ভারতে মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে ‘জুনিয়র টাইগার শ্রফ’ পরিচয় দিতেন। তিনি মোটরসাইকেল স্পিডিং স্ট্যান্ডিংসহ বিভিন্ন ভিডিও বানিয়ে ইউটিউবে ছাড়তেন। এতে তার সামান্য আয় হতো। তিনি তার আয় বাড়াতে এই কাজ করেছেন।

harun.jpg

তিনি বলেন, রাসেলকে গ্রেফতারের পর জানা যায়, তারা বাবা-মা বিদেশে থাকেন। দেশে বসে একটি মোটরসাইকেল কিনে বখে যাওয়া রাসেল প্রতিদিন রাজধানীর পূর্বাচল ৩০০ ফিট রোড, মাওয়া, আফতাবনগর এলাকায় বিকট শব্দের বাইক খেলা, হাই স্পিডিং, বাইক স্ট্যান্ড এবং রাত-বিরাতে দল বেঁধে ছেলেমেয়েদের নিয়ে অশ্লীলতা চালিয়ে আসছিলেন। এছাড়াও তিনি যুবক-যুবতীদের বিপদজনক, অশ্লীল ও ফানি ভিডিও বানিয়ে ভিউ বাড়ানোর চেষ্টা করেন। তার কিছু ভিডিওতে মিলিয়ন ভিউ হলে তিনি জুয়ার সাইট প্রমোট করতে পারতেন। যদিও এরই মধ্যে নিয়মিত জুয়ার সাইট প্রমোট করতেন রাসেল।

বাইকে আগুন দেওয়ার ঘটনার বিষয়ে ডিবিপ্রধান বলেন, কয়েক দিন আগে রাসেল তার বন্ধু ফুয়াদসহ কয়েকজন মিলে আফতাবনগরে মোটরসাইকেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার একটি ভিডিও তৈরি করেন। ভিডিওতে বাইক পোড়ানোর কারণ হিসেবে একটি কেস স্লিপ দেখিয়ে রাসেলকে বলতে দেখা যায়, ‘ট্রাফিক পুলিশ অন্যায়ভাবে তার মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে পাঁচ হাজার টাকার মামলা দেয়। এই অন্যায়ের মামলার প্রতিবাদ করতেই তার প্রিয় ও ভালোবাসার বাইকটিকে পুড়িয়ে দিচ্ছে।’

তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে সেদিন তাকে কোনো মামলাই দেয়নি ট্রাফিক পুলিশ। যে কেস স্লিপটি ভিডিওতে তিনি নিজের বলে দাবি করেন সেটি ছিল তার বন্ধু ফুয়াদের। বিপদজনকভাবে মোটরসাইকেল চালানো, সিগন্যাল অমান্য করা এবং উচ্চশব্দের সাইলেন্সার লাগানোর দায়ে মামলা দেওয়া হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে ভাইরাল হতে, মিথ্যা হিরোইজম দেখাতে গিয়ে তিনি এ কাজ করেছেন বলে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে স্বীকার করেন।

রাসেলের সঙ্গে জড়িত তরুণ-তরুণীদের নাম-পরিচয় পেয়েছে ডিবি। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তারা।

টিটি/ইএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।