ইয়াবার চালান নিয়ে ঢাকায় ঢুকছিলেন তারা
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও সায়দাবাদ এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা পরিবহনের সময় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর চারজনসহ ৯ মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করেছে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) মেট্রো উত্তর কার্যালয়।
ডিএনসি বলছে, মাদক কারবারিরা মাদক পাচারের নিত্যনতুন কৌশল হিসেবে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষদের ব্যবহার করছেন। এমনকি তারা কক্সবাজার থেকে মাদক সংগ্রহ করলেও পাহাড়ি দুর্গম পথ ব্যবহার করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাদক সরবরাহ করে আসছেন।
গ্রেফতার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর চারজন হলেন- ওমং তইন চাকমা (৪০), পাইয়াদীবী চাকমা (১৯), বামাংথাই চাকমা (২৯) ও কেরামা চাকমা (৩৫)। তারা সবাই কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার বাসিন্দা।
গ্রেফতার অন্যরা হলেন- মো. আলী হায়দার রাববী (২৭), মুমিনা খাতুন (৪৪), মো. দিদার হোসেন (২৫), মো. জাহাঙ্গীর আলম (২৪) ও মনির হোসেন (২৩)।
গতকাল রোববার থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত ধারাবাহিক পৃথক অভিযানে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে মোট ৪১ হাজার ৯০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার এবং মাদক পরিবহনে ব্যবহৃত একটি কাভার্ডভ্যান জব্দ করা হয়।
সোমবার (২২ জানুয়ারি) রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় ডিএনসি মেট্রো উত্তর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির ঢাকা বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মজিবুর রহমান পাটোয়ারী।
তিনি বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল কক্সবাজার থেকে সংগ্রহ করা ইয়াবার একাধিক চালান বান্দরবান, রাঙ্গামাটি হয়ে রাজধানী ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় প্রবেশ করবে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিএনসির একাধিক সার্কেলের সমন্বয়ে একটি চৌকস টিম গঠন করে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও সায়দাবাদ এলাকায় অভিযান চালানো হয়। এসময় পৃথক অভিযানে চাকমা জনগোষ্ঠীর চারজনসহ ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের কাছ থেকে তল্লাশি চালিয়ে প্রায় ৪২ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতার মাদক কারবারিদের বরাত দিয়ে মজিবুর রহমান বলেন, মূলত পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে এসব ইয়াবার চালান আনা হয়। এরপর ঢাকা ও এর আশপাশের বিভিন্ন জেলায় সেগুলো সরবরাহ করার পরিকল্পনা ছিল। গ্রেফতার চাকমা জনগোষ্ঠীর চারজন মাদক পাচারের নতুন রুট রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানকেন্দ্রিক একটি মাদক সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্য। ঢাকার একটি মাদক সিন্ডিকেটের সঙ্গে আঁতাত করে তারা মাদক কারবার চালিয়ে আসছিল। এই চারজনের কাছ থেকে ৯ হাজার ৪০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতার মুমিনা খাতুন ও আলী হায়দার রাববী প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তারা যশোরকেন্দ্রিক একটি ইয়াবা সিন্ডিকেটের সদস্য। সম্পর্কে তারা দুজন মামি ও ভাগ্নে। কক্সবাজার থেকে ইয়াবা পরিবহনের জন্য বিলাসবহুল এসি বাস ব্যবহার করতেন। রাব্বি আগের বাসে এসে ক্লিয়ারেন্স দেন এবং পেছনে মুমিনা পরিবারের সদস্য নিয়ে ভ্রমণ করার কৌশলে মাদক পরিবহন করেন। তাদের কাছ থেকে ৪ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। তারা টেকনাফ থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে যশোরে মাদক কারবারিদের কাছে সরবরাহ করতো। জিজ্ঞাসাবাদে এই সিন্ডিকেটের একাধিক সদস্যের নাম পাওয়া গেছে। যাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রম চলমান।
অন্য এক অভিযানে দিদার হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম ও মনির হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা সবাই পেশায় ট্রাকচালক। তারা গাড়ি চালানোর আড়ালে ইয়াবা পরিবহন করতেন।
ইয়াবার একটি বড় চালান নিয়ে তারা ঢাকায় প্রবেশ করবে এমন তথ্যের ভিত্তিতে যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে কাভার্ডভ্যানসহ তাদের গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ২৮ হাজার ৫০০ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়। নিজেদের আড়াল করার জন্য তারা বিভিন্ন এনক্রিপটেড এ্যাপস ব্যবহার করতেন।
গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
টিটি/এমকেআর/এমএস