নিজের আশঙ্কাই সত্যি হলো নাজিমের


প্রকাশিত: ০৬:২২ এএম, ০৭ এপ্রিল ২০১৬

গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষে ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার থাকায় বেশ কয়েকবার হামলার আশঙ্কা করেছিলেন নিহত নাজিমুদ্দিন সামাদ (নাজিম)। তবে শিক্ষক, বন্ধু ও প্রিয়জনদের কাছে আশঙ্কা কথা জানালেও নিজের অবস্থান থেকে সরে আসেননি নাজিম। শেষমেশ নিজের আশঙ্কাই সত্যি হলো। বুধবার রাতে দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হলেন নাজিমুদ্দিন।

নিহত নাজিম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন বিভাগের সান্ধ্যকালীন কোর্সের স্নাতকোত্তরের ছাত্র ছিলেন। এছাড়া বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব পরিষদের সিলেট জেলা শাখার তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ছিলেন।

নাজিম তার ফেসবুক পেইজে দেশের আইন-শৃঙ্খলা অবনতি নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন। তার স্ট্যাটাসের নিজে আজহারুল ইসলাম নামে এক স্যার লিখেছেন, “তোমার জন্য ভয় হয় নাজিম। একটু সাবধানে থাকো। দেখতেই তো পাচ্ছ কি হচ্ছে। সাবধানে থেকো।”

জবাবে নাজিমুদ্দিন লিখেছে, “ভয় আমার নিজেরও হয় স্যার। অকালে মরে যাওয়ার ভয়। কিন্তু কি করবো স্যার। মাথা নত করে চুপ হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে এ মরণই বোধ হয় ভালো।”

ফেসবুকে আইন-শৃঙ্খলা অবনতির বিষয়ে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ চেয়ে স্ট্যাটাস দেয়ার ২৪ ঘণ্টার না পেরুতেই খুন হন নাজিমুদ্দিন। তার খুন হওয়ার খবর শুনে স্ট্যাটাসে অগ্নি সারথি নামে এক ফেসবুক বন্ধু লিখেছেন, “নাজিমুদ্দিন ভাইয়ের সঙ্গে গত কয়েকদিন আগে চ্যাটিং কথা হল। উনার আশঙ্কাই আজ নির্মম ভাবে সত্যি হল। আর কতো?”

এদিকে, ব্লগার নাজিম হত্যায় স্যোশাল মিডিয়ায় সমালোচনা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকে। অনেকই বিচারহীনতা, সরকারের অসহযোগীতা ও পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
Nazim
মনিরুল ইসলাম নামে একজন লিখেছেন, “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাজিমুদ্দিন সামাদ হত্যার তীব্র নিন্দা জানাই। মৃত্যুর মিছিলে যোগ হল আরো একটি সম্ভবনাময় তাজা প্রাণ। কিন্তু কেন??”
 
রিয়াজ রেক্স নামে আরো একজন লিখেছেন, “বন্ধু কান্নায় বুকটা ফেটে যাচ্ছে। কিছুই করতে পারছি না। এইদেশ বিচার চাইলে, বিচার পাব না জানি। তবুও বিচার চাইবো।”
 
শেখ মিজান রহমান নামে একজন লিখেছেন, “cry emoticon, বন্ধুদের রেখে তুমিও চলে গেলে? কে বলেছে তুমি নেই, তুমি আছো, থাকবে।”
 
ফরিং মন নামে একজন লিখেছেন, “খুন যে ধর্মের আদর্শ সে ধর্ম শুধু পিচাশদের। যার হিংস্র থাবায় চলে যাচ্ছে এক এক একটি অমূল্য প্রাণ।”
 
মনন্ চাষা নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, “বেচারা নাজিমুদ্দিন সামাদ কেন উচিৎ কথা কইতে গেলি?”
 
শুভজিত বড়ুয়া (Suvrajit Barua) লিখেছেন, “আমরা অনেকেই স্রোতের প্রতিকূলে চলতে ভালোবাসি, তাই চলি। বদল চাই, কেন না ঘুণে ধরা প্রথা ও সংস্কারের দোহাই দিয়ে আমাদের আটকানো অসম্ভব। আজ তোমাকে বলি হতে হলো, কাল আমরাও হবো। বিচার পাবো না, আজ পর্যন্ত কেউ পায়নি। সব ক`টা খুনের হিসেব তদন্তের কাঁথা মুড়িয়ে ঘুমাচ্ছে। তাই বিচার চাইছি না। মানুষকে কুসংস্কার থেকে সরাতে আরো একজন মানুষ খুন হলো। এর জন্য অন্য কেউ নয়, মানুষই দায়ী। এ রক্তের বিনিময় নেই, ভালো থেকো।”
 
কাউছার হামিদ মুন্না (Kawsar Hamid Munna‎) নামে একজন লিখেছেন, “স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই।”
 
লন্ডন প্রবাসী রাহাত চৌধুরী (Râhât Čhôŵdhûrŷ) নাজিমকে ট্যাগ করে ফেসবুখে লিখেছেন, “বন্ধু ক্ষমা করে দিস আমাদের।। তুই ছিলি, তুই আছিস, তুই থাকবি।”
 
অরুণ চৌধুরী (Orun Chowdhury) লিখেছেন, “ক্ষমা করে দিও ভাই। হাত জোড় করে ক্ষমা চাইছি। এই ক্ষমতাটুকুই আমার আছে...। এই জাতির কপালে অনেক অনেক ভয়াবহ কালো দিন অপেক্ষা করছে। রাষ্ট্রের চরম ব্যার্থতার বলি এভাবে দিতে হবে নাজিমুদ্দিন সামাদ ভাইয়ের মত মানুষদের জিবন দিয়ে। এটা একটা স্বাধীন দেশ...!!! ঘৃনা জানাই। ধিক ধিক...।”

এ রকম শত শত ফেসবুক পেইজে নাজিমুদ্দিকে নিয়ে নিজেদের ক্ষোভ ও হতাশার কথা প্রকাশ করেছেন। তবে চোখ আটকে গেল একটি লেখায়। নাজিমুদ্দিনের এক শিক্ষকের সঙ্গে সম্প্রতি আলোচনার এক স্ক্রিন শট। গত ৩১ মার্চ সে লিখেছে- “মাথা নত করে চুপ হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে এ মরাটাই বোধ হয় ভালো।”

উল্লেখ্য, গত বুধবার রাত ৯টার দিকে সূত্রাপুরের একরামপুর মোড় এলাকায় দুর্বৃত্তদের চাপাতির কোপে ও গুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা যান নাজিমুদ্দিন। একই সময় আক্রমণের শিকার হন সঙ্গে থাকা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সাউথ ইস্টের শিক্ষার্থী নাজিব। তবে সৌভাগ্যক্রমে নাজিব বেঁচে যান।

জেইউ/আরএস/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।