স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
ভোট সুষ্ঠু করতে রাজনৈতিক কর্মসূচির অনুমতি না দেওয়ার নির্দেশনা
নির্বাচন কমিশন নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর করতে নির্বাচনের প্রচার শুরুর পর থেকে ভোটের আগে পর্যন্ত রাজনৈতিক কর্মসূচির অনুমতি না দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে বলে মনে করছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা জানান।
নির্বাচনের প্রচার শুরুর পর থেকে ভোটের আগে পর্যন্ত যে কোনো দলের সভা, সমাবেশ ও রাজনৈতিক কর্মসূচির অনুমতি না দিতে বলেছে নির্বাচন কমিশন। গণতান্ত্রিক দেশে এটা সঠিক কি না। এটা সংবিধান পরিপন্থি হচ্ছে কি না- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটা তো অতি সাধারণ বিষয়। একটা বিশেষ সময়, একটা নির্বাচন হতে যাচ্ছে। প্রত্যেকটি দল যার যার প্রার্থী নিয়ে তাদের প্রচার-প্রচারণা করবে, সেই সময় এই দল সেই দল মুখোমুখি হতেই পারে যাতায়াতের পথে। সেখানে যদি আবার আরেকটা নতুন দল নির্বাচন ছাড়া অন্য কথা বলে, সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন যেটা বলেছে ব্যাঘাত হতেই পারে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে যাতে ব্যাঘাত না হয়, সেজন্য নির্বাচন কমিশন তার অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন এটাই আমরা বুঝি। তার (প্রধান নির্বাচন কমিশনার) অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি যেটা মনে করেছেন, আমি মনে করি সেটা যথার্থই মনে করেছেন। সুষ্ঠু, সুন্দর ও স্বাভাবিকভাবে যাতে নির্বাচন হয় আমার মনে হয় এজন্যই নির্দেশনাটা দিয়েছেন।’
আরও পড়ুন: ১৮ ডিসেম্বর থেকে নির্বাচনী প্রচারণা ছাড়া সভা-সমাবেশ নয়
‘সঠিক, সুন্দর ও নিরপেক্ষভাবে একটি নির্বাচন হতে দেওয়ার জন্য উনি (সিইসি) যা যা বলছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী সেগুলো করবেন।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এ নির্দেশনাকে সংবিধান পরিপন্থি মনে করছেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন তো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। তারা যখন একটি নির্দেশনা দিয়েছেন, তারা তো সংবিধান দেখেই দিয়েছেন। এখানে সংবিধান লঙ্ঘন হওয়ার কিছু নেই, এখানে তো নির্বাচন কীভাবে হবে সেটা তিনি জানেন।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে...আমি মনে করি সংবিধান ভালোভাবে জেনে, সেটা দেখেশুনেই তারা নির্দেশনাটা দিয়েছেন। এখানে সংবিধান লঙ্ঘনের কিছু হয়েছে বলে আমার মনে হয় না। আপনি এ বিষয়ে আইনমন্ত্রীর কাছ থেকে আরও ভালো ব্যাখ্যা নিতে পারেন।’
এর আগের নির্বাচনগুলোতে এমন হয়নি- দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এখন হয়তো উনি চিন্তা করছেন এ রকম হতে পারে, সেজন্য উনি বলেছেন।’
আরও পড়ুন: ‘নির্বাচনে ১৩ দিন সেনাবাহিনী থাকার প্রারম্ভিক আলোচনা হয়েছে’
এবার নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলার অনেক বেশি অবনতি হতে পারে বলে মনে করছেন কি না- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘মোটেই অবনতি হবে না। অবনতির জন্য প্রচেষ্টা চলছে সেটাও আপনারা দেখছেন। জায়গায় জায়গায় বাস পুড়িয়ে দিচ্ছে, জায়গায় জায়গায় রেললাইন উঠিয়ে দিচ্ছে। সেখানে এগুলোকে স্বাভাবিক করার জন্য নির্বাচন কমিশন তাদের দৃষ্টিতে যেটা মনে হয়েছে সেটা তারা ঘোষণা দিয়েছেন।’
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কি আপনারা মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা দেবেন- এ বিষয়ে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘নির্দেশনা পালনের জন্য যাদের দায়িত্ব, আমার মনে হয় চিঠি অনুযায়ী তারা দায়িত্ব পালন করবেন।’
নির্বাচন কমিশন ভোটের প্রচার-প্রচারণা কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দেয়নি বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: ডিসি-এসপিদের ‘নজরদারিতে’ রাখছে ইসি
বিএনপি যাতে আগামী ১৮ ডিসেম্বরের পর সভা-সমাবেশ না করতে পারে সেজন্য কি এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘এটা আপনি নির্বাচন কমিশনকে জিজ্ঞাসা করবেন। নির্বাচন কমিশন তো স্পষ্টই বুঝতে পারছে, তারা (বিএনপি) নির্বাচনে না এসে ধ্বংসের খেলায় নেমেছে। সেই জায়গাটিতে যাতে ধ্বংস করতে না পারে, নির্বাচন জাতীয় সুষ্ঠুভাবে হয়, এদেশের জনগণ যাতে সুন্দরভাবে ভোট দিতে পারে। আমার মনে হয় সেজন্য এ ঘটনাটা ঘটছে।’
মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বিধিনিষেধ দিয়ে এ সংক্রান্ত চিঠি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
চিঠিতে বলা হয়, ১৮ ডিসেম্বর থেকে ভোটগ্রহণ সমাপ্ত হওয়ার পূর্ববর্তী সময় পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ব্যতীত নির্বাচনী কাজে বাধা হতে পারে বা ভোটাররা ভোটপ্রদানে নিরুৎসাহিত হতে পারে এরূপ কোনো সভা, সমাবেশ বা অন্য কোনো প্রকার রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা থেকে সবাইকে বিরত রাখা বাঞ্ছনীয়।
আরএমএম/বিএ/এমএস