‘এটা বড় ধরনের কোনো ভূমিকম্পের পূর্বাভাস নয়’
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সাম্প্রতিক সময়ে হওয়া ভূমিকম্পগুলো বড় কোনো ভূমিকম্পের পূর্বাভাস নয় বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন ও ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেন্ট রেজিলিয়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান ড. মো. জিল্লুর রহমান।
সর্বশেষ শনিবার (২ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা ৩৫ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৬। ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ অঞ্চলে। তবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) তথ্যানুসারে, ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৫।
আরও পড়ুন>> ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প
শনিবার বিকেলে অধ্যাপক জিল্লুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আজকে যে ভূমিকম্প হয়েছে সেটি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের আশপাশে হয়েছে। ইউএসজিএসের তথ্যানুযায়ী এর মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৫। ভূমিকম্পটি মাটির ৩৮ দশমিক ৫ কিলোমিটার গভীরে সংঘটিত হয়। ওই এলাকায় এটার তীব্রতা ছিল প্রায় ৬। ওই এলাকার আশপাশে বিশেষ করে ঢাকা শহরে ভবন এবং এলাকাভেদে ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল ৪ থেকে ৬। যে এলাকা নিচু এবং যেখানে ভরাট করে উঁচু ভবন করা হয়েছে, সেখানকার ভবনের থাকা লোকজন প্রায় ৬ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভব করেছে। আবার যারা নিচু ভবন এবং ভালো এরিয়াতে ছিল তারা কম অর্থাৎ তারা ৪ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভব করেছে।’
আরও পড়ুন>> ভূমিকম্পে কেঁপেছে কলকাতাও
তিনি বলেন, ‘পুরো দক্ষিণাঞ্চলে ভূমিকম্পটি অনুভূত হয়েছে। চট্টগ্রাম, ঢাকা, পটুয়াখালী, বরিশাল, মাদারীপুর, ফরিদপুর, সিলেটসহ বিভিন্ন অঞ্চলে এটি অনুভূত হয়েছে। যেহেতু মাটির প্রায় ৪০ কিলোমিটার গভীরে ছিল, এজন্য বেশি অঞ্চল জুড়ে অনুভূত হয়েছে। এর উপরিভাগে হলে এত অনুভূত হতো না। এর স্থায়িত্ব ছিল ১০ থেকে ১৫ সেকেন্ড।’
‘এ ভূমিকম্পটি হয়েছে ক্রাস্টাল ফল্ট (ভূ-ত্বক বিচ্যুতি) থেকে। এটি হচ্ছে পাললিক শিলা বিধৌত অঞ্চল। পাললিক শিলার বিস্তৃতি ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার। এর নিচে যে শক্ত আগ্নেয় শিলা রয়েছে সেটাকে বলি আমরা ক্রাস্ট। সেটার বিস্তৃতি আবার ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। পুরোটা মিলে এখানে ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটারের মতো বিস্তৃত শক্ত শিলা অঞ্চল রয়েছে। এ শক্তশিলার মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় ফাটল রয়েছে। ছোট ফাটল আছে মাঝারি ধরনের ফাটল আছে। এ ফাটলে যখন মুভমেন্ট হয় তখনই ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। আজকের ভূমিকম্পটি ওই ধরনের একটি ফাটল থেকেই হয়েছে।’
আরও পড়ুন>> ‘পুরো ভবন কেঁপে ওঠে, এমন ভূমিকম্প আর দেখা যায়নি’
এ ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘এটা বড় ধরনের কোনো ভূমিকম্পের পূর্বাভাস নয়। বড় ধরনের ভূমিকম্পের আগে কি হয়? আগে-পেছনে অনেক ভূমিকম্প হবে এবং এবং একটি লাইন মেইনটেইন করবে। একটি লাইন বরাবর এ ধরনের ভূমিকম্পগুলো হয়। ওই অবস্থা হলে আমি বলতে পারি, ছোট ছোট ভূমিকম্প হয়েছে, এখানে একটা বড় ভূমিকম্প হতে পারে। ছোট ছোট ভূমিকম্প যখন প্লেট বাউন্ডারিতে হয় তখন আমরা ধরতে পারি বড় একটা ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘৪০০-৫০০ কিলোমিটারের মতো লম্বা কোনো লাইন ওখানে নেই। ওখানে মূলত ছোট ছোট ফল্ট রয়েছে। র্যান্ডমলি এ অঞ্চলে গত কয়েক বছর ধরে এ ধরনের ভূমিকম্প হচ্ছে। কয়েকদিন আগে দোহারে হয়েছে, রূপগঞ্জে হয়েছে। এগুলো বিচ্ছিন্ন ভূমিকম্প, এগুলোকে আমরা ক্রাস্টাল ফল্ট আর্থকোয়েক বলি। ক্রাস্টের ভেতর ছোট ছোট ফল্টের মধ্যে এ ভূমিকম্পগুলো হয়।’
আরও পড়ুন>> কুমিল্লায় ভূমিকম্প আতঙ্কে হুড়োহুড়ি, পদদলিত হয়ে ৮০ শ্রমিক আহত
এ ধরনের ফল্টে ৭ মাত্রারও বেশি ভূমিকম্প হতে পারে জানিয়ে জিল্লুর রহমান বলেন, ১৮৮৫ সালে মানিকগঞ্জে যে ভূমিকম্পটি হয়েছে, সেটি এই ক্রাস্টাল ফল্ট থেকে হয়েছে। শ্রীমঙ্গল ভূমিকম্প ক্রাস্টাল ফল্ট বরাবর হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন কিন্তু প্রচুর ভূমিকম্প হয়। এটা ৪ মাত্রার ওপরে হলে আমরা অনুভব করি। না হলে কিন্তু আমরা অনুভব করি না। যত আগের দিনে যাবো এ ধরনের ভূমিকম্প ততবেশি পাবো। ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চলের কাছে রয়েছি আমরা।’
‘ভূমিকম্প হলে আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। সতর্ক থাকতে হবে। বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ করতে হবে। আমরা সচেতন থাকলে ক্ষয়ক্ষতি হবে না’ বলেন এ ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ।
আরও পড়ুন>> ভূমিকম্প আতঙ্কে ঢাবির হল থেকে শিক্ষার্থীর লাফ, ঢামেকে ভর্তি
তিনি বলেন, ‘ভূমিকম্প হলে ভবন থেকে লাফ দেওয়া কিংবা হুড়োহুড়ি করে সিঁড়ি দিয়ে নামা- এগুলো করা যাবে না।’
আরএমএম/এমএএইচ/এএসএম