পররাষ্ট্রমন্ত্রী

যুক্তরাষ্ট্র বেশি কিছু চায়নি, সুষ্ঠু নির্বাচন চেয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:৫০ পিএম, ২৭ নভেম্বর ২০২৩

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আমাদের কাছে বেশি কিছু চায়নি, তারা বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চেয়েছে।’

সোমবার (২৭ নভেম্বর) বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আশা করছি সবাই নির্বাচনে আসবে, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হবে। পৃথিবীকে দেখাতে চাই, আমরা একটা স্বচ্ছ-সুন্দর ও সংঘাতমুক্ত নির্বাচন করেছি। সংঘাত নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন। কিন্তু আমাদের উদ্দেশ্য হবে সংঘাতমুক্ত একটা নির্বাচনের আয়োজন করা। সবাই মিলে এটা আমরা পারবো। নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমাদের একটা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছিল।’

তারা এখন কথাবার্তা কম বলছে, তাদের কি চুপ করিয়ে দিতে আপনারা বাধ্য করেছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, ‘না, না। কী বলেন! বাধ্য করবো কীভাবে? পাগল নাকি? নো-ওয়ে। আমাদের সে ক্ষমতা নেই। বন্ধুদেশ যারা, তারা আমাদের অনেক সময় উপদেশ দেয়, যেটা ভালো সেটা আমরা গ্রহণ করি।’

আরও পড়ুন>> পারস্পরিক সহমর্মিতার ভিত্তিতে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে: মোমেন

তিনি বলেন, ‘আমরা সব বিষয়ে পণ্ডিত না, একটি সুন্দর নির্বাচনের জন্য কেউ ভালো পরামর্শ দিলে আমরা তাদের স্বাগত জানাবো। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, যারা দীর্ঘদিন ধরে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলে আসছে। সম্প্রতি তারা সংঘাতমুক্ত নির্বাচনের কথা বলছেন। আমরা মারামারি চাই না। তবে সংঘাতমুক্ত চাইলেও সেটা আমরা একা পারবো না। এজন্য সব দলমতের আন্তরিকতা দরকার। ঐকান্তিক ইচ্ছা দরকার। ইচ্ছা থাকলে পারবো। আর উন্নত দেশগুলোকে আমরা অগ্রাহ্য করতে পারি না। তারা আমাদের বন্ধুদেশ। তাদের সঙ্গে কেবল নির্বাচনই না, বিভিন্ন ধরনের সম্পর্ক রয়েছে।’

আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমাদের বেশির ভাগ নির্বাচনে ৫০ শতাংশের বেশি লোক ভোট দেন। শুধু ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি নির্বাচনে অল্প কয়েকজন লোক ভোট দিয়েছিলেন। আমার খেয়াল নেই, তবে ২০ শতাংশ লোক ভোট দিয়েছিলেন মনে হচ্ছে। যেটা খালেদা জিয়ার ভোটাবিহীন নির্বাচন ছিল। ওই নির্বাচনে জাতিগতভাবে সবচেয়ে কম লোক ভোট দিয়েছেন।’

অন্য দল না এলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমেরিকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সবসময় নির্বাচন হয়। আমি একটি পরিসংখ্যানে দেখলাম, আলাবামায় ৭২ শতাংশ আইনপ্রণেতা বিনাভোটে নির্বাচিত। ম্যাসাচুসেটস-এ সম্মানিত লোকজন, সিনেটর কেনেডি কিংবা জন কেরি, তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রার্থী হননি। সম্মানিত লোকদের বিরুদ্ধে আমেরিকায় কোনো দলের লোক দাঁড়াননি। এটা কোনো বড় কিছু না। প্রায় ক্ষেত্রেই দেখবেন, যারা নির্বাচিত হচ্ছেন, তারাই বছরের পর বছর নির্বচিত হচ্ছেন। এটা নিয়ে মাথাব্যথার কোনো কারণ নেই।’

আজ প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যে আমাদের অনেক কিছু বলতে পারে, আবার আমরা বলতে পারি না। সব দেশের সার্বভৌমত্ব একরকম না। আমাদের গার্মেন্টস খাতকে বাঁচাতে হবে, অর্থনীতিকে বাঁচাতে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো ব্যাখ্যা আছে কি না- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘এটা সত্য যে যুক্তরাষ্ট্র পরাশক্তি। আমরা তাদের ইগনোর করতে পারি না, আমরা ইগনোর করিও না। আমাদের এমন কোনো উদ্দেশ্য নেই।’

আরও পড়ুন>> কল্পনা আক্তারের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ব্যাখ্যা চাইবে বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শ গুরুত্বসহকারে বিবেচনার কারণ জানিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, তবে আমাদের দেশের একটা বাস্তবতা আছে। আমরা সে অনুসারে কাজ করি। বাস্তবতার নিরীক্ষে তারা কোনো পরামর্শ দিলে আমরা অব্যাহত তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখি। ভালো-মন্দ আমরা তাদের বলি। আমেরিকা সবসময় বাস্তববাদী। আমেরিকা ডকট্রিন অব রিয়েলিটিতে বিশ্বাস করে।

‘আমেরিকা ১৯৭১ সালে আমাদের সমর্থন দেয়নি। তারা আন্তর্জাতিক রীতিনীতি ভঙ্গ করে পাকিস্তানের জান্তা সরকারকে সহায়তা করেছে। কিন্তু ১৬ ডিসেম্বর আমরা যখন স্বাধীনতা পেলাম, এরপর থেকে আমেরিকা আমাদের অব্যাহত সমর্থন দিয়ে গেছে। কোনোদিন আমাদের বিরুদ্ধে যায়নি। এর মানে, দেশ হয়ে গেছে, সুতরাং তারা আমাদের সঙ্গে আছে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা একটি সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচন করতে পারলে আমেরিকা অবশ্যই আমাদের সঙ্গে থাকবে। কারণ তাদের একমাত্র দাবি এটা। তারা আমাদের কাছে বেশি কিছু চায়নি। তারা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চেয়েছে, আমরাও সেটি চেয়েছে। কার্যত, তারা আমাদের সহায়তা করছে। আমি তাদের বলবো, যারা নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে, তাদের তারা ভিসানীতিতে ঢুকাক বা যা করার করুক।’

আইএইচআর/ইএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।