বাসে আগুন দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও পাঠানো হয় শীর্ষ নেতাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:৩০ পিএম, ২১ নভেম্বর ২০২৩

রাজধানীর মিরপুরের কালশীতে গত ১৮ নভেম্বর বসুমতি পরিবহনের একটি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় চার জনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। সোমবার (২০ নভেম্বর) রাতে র‍্যাব-৪ এর একটি দল অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে। র‍্যাব বলছে, আগুন দেওয়ার ঘটনা ভিডিও করে শীর্ষ নেতাদের কাছে পাঠানো হতো।

গ্রেফতার চারজন হলেন, আল মোহাম্মদ চাঁন (২৭), মো. সাগর (২৫), মো. আল আমিন ওরফে রুবেল (২৯) ও মো. খোরশেদ আলম (৩৪)।

র‍্যাব জানায়, বাসে আগুন দেওয়ার জন্য গ্রেফতার চাঁন প্রত্যেকের জন্য ১০ হাজার টাকা করে পেলেও সাগর ও আল আমিনকে ৭ হাজার টাকা করে দেন। চাঁন বাসে আগুন দেওয়ার জন্য তার বন্ধুর মোটরসাইকেল থেকে ২৫০ এমএল পরিমাণ পেট্রোল বের করে এনার্জি ড্রিংকের বোতলে ভরে ওইদিন সন্ধ্যায় আল আমিনের কাছে দেন।

মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, গ্রেফতার হওয়া চারজন বিরোধী একটি রাজনৈতিক দলের কর্মী। তাদের দলের স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের নিদের্শনায় গ্রেফতার আল মোহাম্মদ চাঁন রাজধানীর মিরপুর ও পল্লবীর আশপাশের এলাকায় বাসে অগ্নিসংযোগ করার পরিকল্পনা করেন।

jagonews24

পরবর্তী সময় গত ১৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় গ্রেফতার চাঁন ও তার সহযোগী সাগর ও আল আমিন ওরফে রুবেলসহ রাজধানীর মিরপুর-১১, তালতলা নাভানা, কালশী রোড ও সিরামিক রোড এলাকায় সুবিধাজনক স্থানে যানবাহনে আগুন দেওয়ার জন্য রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত রেকি করেন।

কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেফতার চাঁন যানবাহনে আগুন দেওয়ার জন্য তার বন্ধুর মোটরসাইকেল থেকে ২৫০ এমএল পরিমাণ পেট্রোল বের করে এনার্জি ড্রিংকের বোতলে ভরে ওইদিন সন্ধ্যায় আল আমিনের কাছে দেন। ওই দিনেই আবার রাত ১১টার দিকে বাসে অগ্নিসংযোগ করার জন্য রাজধানীর কালশী সড়ক রেকি করেন।

তিনি বলেন, এসময় কালশী সড়কে মসজিদের পাশে পার্ক করা বসুমতি পরিবহনের একটি বাস সুবিধাজনক হওয়ায় গ্রেফতার চাঁনের নির্দেশে সাগর ও আল আমিন বাসের কাছে যান এবং আল আমিন বাসের মাঝের জানালা খুলে পেট্রোল ঢেলে দিয়াশলাই দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেন। এরপর ঘটনাস্থল থেকে সাগরের সঙ্গে পালিয়ে যান।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, এসময় গ্রেফতার চাঁন রাস্তার আইল্যান্ডের ওপরে দাঁড়িয়ে যানবাহনে অগ্নিসংযোগের নির্দেশনা প্রদান ও ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেন। অন্য কোনো বিরোধীদলের সদস্য যাতে এ ঘটনার ছবি তুলে ও ভিডিও ধারণ করে স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের কাছে প্রেরণ করে কৃতিত্ব নিতে না পারে সেজন্য গ্রেফতার চাঁন বাসে আগুন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই খোরশেদকে ঘটনাস্থল থেকে ভিডিও ধারণ করে তাৎক্ষণিকভাবে পাঠাতে বলেন।

গ্রেফতার চাঁন ধারণকৃত ভিডিওটি হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে দলের স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের কাছে প্রেরণ করেন। এ কাজের জন্য গ্রেফতার চাঁন প্রত্যেকের জন্য ১০ হাজার টাকা করে পেলেও গ্রেফতার সাগর ও আল আমিনকে ৭ হাজার টাকা করেন। মূলত দলের কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি ও দলের প্রতি নিজেদের আস্থার প্রতিদান দিতে তারা এ সব নাশকতা ও সহিংসতার ভিডিও ধারণ করে তাদের দলের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের কাছে প্রেরণ করতেন।

কমান্ডার মঈন বলেন, এছাড়াও নাশকতার এ সব ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রুপে শেয়ার করে তাদের সমমনা অন্যান্য অনুসারীদের নাশকতার জন্য প্ররোচিত করতেন।

গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীর পল্টনে বিরোধী একটি দলের মহাসমাবেশে অংশগ্রহণ করে পল্টন এলাকাসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে গণপরিবহন, ব্যক্তিগত পরিবহন, সরকারি পরিবহনসহ বিভিন্ন যানবাহনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগসহ নাশকতা ও সহিংসতার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন তারা।

jagonews24

গ্রেফতার চারজন আসলে কারা:

গ্রেফতার আল মোহাম্মদ চাঁন দলের স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় যানবাহনে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, নাশকতা ও সহিংসতার পরিকল্পনা এবং নেতৃত্বে দের। এছাড়াও নাশকতা ঘটানোর জন্য সমর্থকদের কাজ ভাগ করে দিতেন ও টাকা সংগ্রহ করে সবার মাঝে বিতরণ করতেন।

গ্রেফতার মো. সাগর চাঁনের সহযোগী। চাঁনের নির্দেশে নাশকতার জন্য সুবিধাজনক টার্গেট ও স্থান রেকি করে এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ সম্পাদন করেন।

গ্রেফতার মো. আল আমিন ওরফে রুবেল গ্রেফতার চাঁনের সহযোগী ও গ্রেফতার সাগরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। চাঁনের নির্দেশে রাজধানীর কালশী সড়কে বসুমতি পরিবহনের একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করেন। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর পল্লবী থানায় মাদক সংক্রান্ত দুটির বেশি মামলা রয়েছে।

গ্রেফতার খোরশেদ আলম চাঁনের সহযোগী। চাঁনের নির্দেশে রাজধানীর কালশী সড়কে বসুমতি পরিবহনের বাসে অগ্নিসংযোগের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে ছবি তুলে ও ভিডিও ধারণ করে চাঁনকে প্রেরণ করেন।

এছাড়াও রাজধানীর মিরপুর এলাকার যেকোনো প্রোগ্রামসহ বিভিন্ন নাশকতা এবং সহিংসতার ছবি তোলা ও ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ এবং এসব ভিডিও চাঁনের মাধ্যমে দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের কাছে প্রেরণ করেন।

গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান র‍্যাবের এই কর্মকর্তা।

টিটি/এসএনআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।