তফসিল ঘোষণা ঘিরে ঢাকাসহ সারাদেশে কড়া নিরাপত্তা
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা আজ বুধবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায়। তফসিল ঘোষণা করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
এদিকে, বুধবার (১৫ নভেম্বর) ভোর থেকে সারাদেশে শুরু হয়েছে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর ডাকা পঞ্চম দফার ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি।
তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নাশকতা ও বাসে আগুন দেওয়া ঠেকাতে পুলিশের পক্ষ থেকে উড়ানো হবে ড্রোন।
পুলিশ কর্মকর্তাদের ধারণা, তফসিল ঘোষণা হলেই নাশকতাকারীরা আরও বাস পুড়িয়ে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইবে। নির্দেশদাতাসহ বিরোধীদের গ্রেফতার করতে গেলে পুলিশের বিরুদ্ধে গণহারে গ্রেফতারের অভিযোগ তুলবে। তাই গণগ্রেফতার এড়িয়ে নাশকতার মামলায় সুনির্দিষ্ট আসামি করে তাদের আইনের আওতায় আনতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা মহানগর (ডিএমপি) পুলিশের পক্ষ থেকে মাঠ পর্যায়ের সদস্যদের এসব বার্তা দেওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের সদর দপ্তরে দুপুরে তিন ঘণ্টা ধরে অভ্যন্তরীণ এক বৈঠকে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকে গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের পর থেকে অবরোধ-হরতালে পুলিশের ভূমিকা ও তফসিল ঘোষণা পরবর্তী ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনার বিষয়ে আলোচনা হয়।
গোয়েন্দারা মনে করছেন, তফসিল ঘোষণা পরবর্তী চোরাগোপ্তা হামলা হতে পারে। হামলা রোধে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। তফসিল ঘোষণাকে সামনে রেখে পুলিশকে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী আজ থেকে মাঠে আরও সতর্ক অবস্থানে পুলিশ।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, তফসিলের পর এমন চোরাগোপ্তা হামলা আরও বাড়তে পারে। সতর্কতা হিসেবে যে যে সড়কে বেশি আগুন লাগানো হচ্ছে, সেখানে পুলিশের পক্ষ থেকে টহল দল থাকছে। আর সড়কে চলা বাসগুলোতে ক্যামেরা বসানো হবে। পরীক্ষামূলকভাবে রমনা বিভাগ এলাকায় চারটি পয়েন্টে ড্রোন উড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উপ-পরিচালক (প্রকল্প-প্রশিক্ষণ) ও গণসংযোগ কর্মকর্তা (অতি. দায়িত্ব) মো. জাহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ঠেকাতে সারাদেশে আনসার সদস্য মোতায়েন রয়েছে। অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে একযোগে কাজ করবে তারা।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আজ বুধবার পোশাক কারখানার নিরাপত্তা জোরদারে ঢাকা ও আশপাশের জেলায় ৩৩ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৮১ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন রয়েছে।
ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (অপারেশন্স) বিপ্লব কুমার সরকার জাগো নিউজকে বলেন, তফসিল ঘোষণা সামনে রেখে ঢাকা শহরের নাগরিকদের ও জানমালের নিরাপত্তায় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির চেষ্টা করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ ও নির্দিষ্ট স্থানে উড়ানো হবে ড্রোন।
তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সারাদেশে নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জাগো নিউজকে বলেন, তফসিল ঘোষণার সময় কিংবা তফসিল পরবর্তী সময়ে যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে র্যাব। র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও সারাদেশের ১৫টি ব্যাটালিয়ন নাশকতা এড়াতে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় র্যাবের হেলিকপ্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যাসন্ড অপারেশন) ড. খ. মহিদ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ঢাকা শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
টিটি/এসএনআর/এএসএম