ট্যানারি শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন ২৫ হাজার টাকা করার দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:২৫ পিএম, ১৩ নভেম্বর ২০২৩

ট্যানারি শিল্প শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন। সোমবার (১৩ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় সংগঠনটি। মজুরি বোর্ডে সংগঠনটির প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবিও জানায় তারা৷

ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ট্যানারি শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের টিকে থাকার জন্য বর্তমান অবস্থায় ন্যূনতম মজুরির বিষয়টি অতিব গুরুত্বপূর্ণ। দেশের ঐতিহ্যবাহী এবং অত্যন্ত সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্পের সোশ্যাল কমপ্লায়েন্স ও পরিবেশগত সংকট কাটছে না। তাছাড়া পুরোনো এবং দক্ষ লোকজনকে চাকরিচ্যুত করে মধ্যস্বত্বভোগী বেআইনি কন্ট্রাক্টরের মাধ্যমে নিয়োগ করা শ্রমিক দিয়ে কাজ করালে চামড়ার গুণগত মান ঠিক থাকে না।

তিনি আরও বলেন, চামড়া শিল্প একটি ঝুঁকিপূর্ণ শিল্প হওয়া স্বত্ত্বেও শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, শোভন কাজ ও কর্মপরিবেশের ব্যাপারে মালিকরা উদাসীন। দীর্ঘদিনের দাবি থাকলেও আজ পর্যন্ত শ্রমিকদের জন্য হাসপাতাল বা একটা চিকিৎসা কেন্দ্ৰ স্থাপন করা হয়নি। শ্রমিক ছাঁটাই, হয়রানি ও নির্যাতন তো আছেই। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে শ্রমিকরা অনেক কষ্টে আছে। সেকারণে তাদের ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার করা হোক।

jagonews24

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির পক্ষে ১২ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এসব দাবি হলো, ট্যানারি শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের একমাত্র প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করে অবিলম্বে ন্যূনতম মজুরি বোর্ড পুনর্গঠন করা। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে শ্রমিকদের দুরাবস্থার কথা বিবেচনায় নিয়ে ট্যানারি শিল্প সেক্টরে কর্মরত শ্রমিকদের মজুরি ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণ ও ঘোষণা করা৷ শ্রমিকদের নিয়োগপত্র ও ছবিসহ পরিচয়পত্র প্রদানসহ ট্যানারি কারখানাগুলোতে শ্রম আইনের সব ধারা বাস্তবায়নে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণসহ কারখানা পরিদর্শন কার্যক্রম জোরদার করা। বর্তমান চামড়া শিল্প নগরীতে যে জায়গা খালি আছে, সেখানে অবিলম্বে শ্রমিকদের জন্য ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল স্থাপন করা এবং বড় ও মাঝারি সব ট্যানারি কারখানায় হ্রাসকৃত মূল্যে ক্যান্টিনের ব্যবস্থা করা ।

এ ছাড়া হেমায়েতপুরে নতুন করে যে জমি অধিগ্রহণ করা হবে সেখানে অগ্রাধিকারভিত্তিতে শ্রমিকদের আবাসনের ব্যবস্থা করা। প্রসূতি কল্যাণ সুবিধার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নসহ শ্রম আইন অনুযায়ী নারী শ্রমিকদের প্রাপ্য সব সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা।

এছাড়াও মধ্যস্বত্বভোগী বেআইনি কন্ট্রাক্টরের মাধ্যমে কাজ করা অবিলম্বে বন্ধ করে সরাসরি কারখানার মালিক দ্বারা শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া। শ্রমিক ছাঁটাই ও হয়রানি বন্ধ করে আইএলও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮ মোতাবেক শ্রমিকদের অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করা এবং আইন দ্বারা স্বীকৃত ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার চর্চায় প্রশাসনিক এখতিয়ার বহির্ভূত হস্তক্ষেপ বন্ধ করা। সরকারের গৃহীত এবং অনুমোদিত ট্যানারি শিল্পের জন্য ন্যাশনাল প্ল্যান অব অ্যাকশন (জাতীয় কর্মপরিকল্পনা) দ্রুত বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা। সোশ্যাল কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করা এবং তরল ও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পুরোপুরি কার্যকর করার মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব আধুনিক চামড়া শিল্প নগরী গড়ে তুলে লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের সনদ অর্জনের পথ সুগম করা। ট্যানারি শিল্পে কর্মরত প্রত্যেক শ্রমিককে হ্রাসকৃত মূল্যে খাদ্যদ্রব্যসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করার জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা।

সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং মালিকপক্ষ এসব দাবি দ্রুত পূরণ না করলে চামড়া শিল্পের বৃহত্তর স্বার্থে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করতে বাধ্য হবে বলেও জানান নেতারা।

এনএস/এসএনআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।