ভরমৌসুমেও মাইক-সাউন্ড সিস্টেম বিক্রিতে ভাটা
অক্টোবর-নভেম্বর মাস থেকেই বিয়ে, কনসার্ট, মিলাদ মাহফিলের ভরমৌসুম। এবার এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অনুষ্ঠান কিংবা সভা-সমাবেশের অন্যতম অনুষঙ্গ মাইক ও সাউন্ড সিস্টেম। যন্ত্রের উচ্চ শব্দ ছাড়া জমে না কোনো জনবহুল অনুষ্ঠান-সমাবেশ। এবার নির্বাচন ও শীতের আগমনীতেও খরা চলছে সাউন্ড সিস্টেম বিক্রিতে। কমেছে ডেকোরেটর থেকে সব ধরনের সাউন্ড সিস্টেম ভাড়া করার প্রবণতাও।
জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে সভা-সমাবেশ সামনে রেখে বাড়তি বিক্রির আশা করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। তাতেও হতাশ তারা। দোকানে অলস সময় কাটছে অধিকাংশ ব্যবসায়ীর। অনেকেই ব্যবসা ছেড়ে অন্য ব্যবসায় যেতে বাধ্য হচ্ছেন। আর ডেকোরেটরগুলো চলছে ছোটখাটো কিছু অনুষ্ঠানের ভাড়া দিয়ে।
আরও পড়ুন>> হরতাল-অবরোধে বাড়ছে উদ্বেগ, ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস
গত কয়েকদিন রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া যায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগের তুলনায় উন্মুক্ত কনসার্ট কমে যাওয়া, সভা-সমাবেশ কম হওয়াসহ নানান কারণে এসব সামগ্রীর চাহিদা কমছে। তাছাড়া এখন অধিকাংশ বিয়ের অনুষ্ঠান হয় কমিউনিটি সেন্টারে। মাইক, সাউন্ড সিস্টেমসহ এসব সেখানেই থাকে। ফলে ভাড়া করার প্রয়োজন হয় না। এর প্রভাব পড়েছে ডেকোরেশন ব্যবসায়। মূলত এসব মার্কেটের মূল ক্রেতা ডেকোরেটর ব্যবসায়ীরা। ফলে ব্যবসায় এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
দোকানে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সাউন্ড বক্স
রাজধানীসহ সারাদেশে মাইক ও সাউন্ড সিস্টেমের বড় জোগানদাতা গুলিস্তানের স্টেডিয়াম মার্কেট। সরেজমিনে এ মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, দোকানগুলোতে তেমন বেচা-বিক্রি নেই। অধিকাংশ দোকানি অলস সময় পার করছেন। দু-একজন ক্রেতা এলেও দরদাম করে চলে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুন>> অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি নিয়েই চলছে ব্যবসা, গভীর রাতে পাহারা
২৫ বছর ধরে এ মার্কেটে ব্যবসা করছেন হেমায়েত উদ্দিন। ব্যবসার করুণ দশা উল্লেখ করে জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘গত ২৫ বছর আমি এই ব্যবসা করি। এর আগে কখনই এমন পরিস্থিতিতে পড়িনি। বিক্রি একেবারেই কম। করোনার সময় থেকে এ অবস্থা। ভাবছিলাম কিছুদিন পর হয়তো ব্যবসা চাঙা হবে। তাও হলো না। পূজা গেলো, সামনে নির্বাচন। এখনই তো কেনাবেচা হওয়ার কথা। কই হয় না তো।’
অধিকাংশ দোকানি বলছেন, মাইক, সাউন্ড সিস্টেমসহ এসবের সহায়ক বিভিন্ন জিনিপত্রের দাম আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। ফলে ক্রেতাও কমে গেছে।
দোকানে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সাউন্ড বক্স
বেশ কয়েকজন দোকানির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৩৫০ হাই ওয়াটেজ পিএ মিক্সার অ্যামপ্লিফায়ারের দাম এখন ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা, যা আগে ছিল ৩০ হাজার টাকা। হাই পাওয়ার ১০০০ ওয়াটস পিএ অ্যামপ্লিফায়ারের বর্তমান বাজারদর ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকা, যা আগে ছিল ৬৫ থেকে সর্বোচ্চ ৭০ হাজার টাকা। অ্যাপ্লিকেশন মাইক্রোফোনের বর্তমান দাম সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা, যা আগে ছিল দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। ৫০০ ওয়াটসের একটি মিক্সারের দাম এখন ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা, যা আগে ছিল ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া ডুয়েল হ্যান্ড ওয়ারলেস মাইক্রোফোনের দাম এখন ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা, যা আগে ছিল ৭ থেকে ৯ হাজার টাকা।
আরও পড়ুন>> ব্যবসা-বাণিজ্যে এশিয়ায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের আহ্বান বাণিজ্যমন্ত্রীর
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সব ধরনের যন্ত্রাংশের দাম বেড়েছে। এসব জিনিসপত্র অধিকাংশই বাইরের দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। মার্কেটের ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম বলেন, আগে সারাদেশ থেকে প্রতিদিন অনেক কাস্টমার পেতাম। এখন পাই না। আগের সেই ব্যবসা এখন আর নেই।
দোকানে সাজানো সাউন্ড বক্স ও মাইক
কনসার্ট বা বড় অনুষ্ঠানে ব্যবহার উপযোগী সাউন্ড সিস্টেম বিক্রি করেন জাবের মাহমুদ। তার দোকানে দুই জোড়া সাউন্ড বক্সের দাম এখন এক লাখ থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা। কয়েক মাস আগেও এই দুই জোড়া সাউন্ড বক্সের দাম ছিল ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘আগে পূজা বা শীতকাল আসার আগে দুইশ জোড়া বক্স বিক্রি হতো এই মার্কেটে। আর নিয়মিত বিক্রি তো চলতোই। এবার পঞ্চাশ জোড়া বক্সও বিক্রি হইছে কি না সন্দেহ আছে। আগের ব্যবসা এখন আর নেই।’
দীর্ঘ ২০ বছর ধরে ডেকোরেশন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত লালবাগের ছবির খান। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘আগে এমন সময়ও গেছে যে মাইক-বক্স ভাড়া নেওয়ার জন্য এক-দুই সপ্তাহ আগেই বুকিং দিয়ে রাখা লাগছে। আর এখন তো ভাড়া খুঁজেই পাই না। অল্প কিছু অনুষ্ঠান ছাড়া এখন আর কেউ ভাড়া করে না। ব্যবসার পরিস্থিতি তেমন ভালো নয়।’
কাঁটাবন এলাকার ব্যবসায়ী সোহাগ বলেন, ‘ছোট ছোট কিছু অনুষ্ঠানে ভাড়া পাই। তাছাড়া এখন অনুষ্ঠান কমে গেছে। সামনের নির্বাচনে যদি প্রার্থীরা মাইক ভাড়া করেন তাহলে যদি একটু ব্যবসা হয়। তাছাড়া ব্যবসার পরিস্থিতি একেবারেই খারাপ।’
এমএনএইচ/এএসএ/এএসএম