খাজা টাওয়ারে আগুন

বিপর্যয় ঠেকাতে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ চান ইন্টারনেট সেবাদাতারা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:৫২ পিএম, ২৭ অক্টোবর ২০২৩

রাজধানীর সবচেয়ে বড় ডাটা হাব মহাখালীর খাজা টাওয়ার। বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) বিকেলে লাগা আগুনে ভবনের ৯ থেকে ১৩তলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে সারাদেশে ইন্টারনেটে রয়েছে ধীরগতি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, ইমো ও ইউটিউব ব্যবহারেও দেখা দিয়েছে বিপত্তি।

আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর মালিকপক্ষকে ভবন বুঝিয়ে দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) সকাল থেকে ভবনে ঢোকার অনুমতি পেয়েছেন ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। ভবনের ভেতরে ঘুরে বাইরে এসে তারা জানিয়েছেন, যতটা ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছিল, তার চেয়ে কম ক্ষতি হয়েছে।

ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা বলছেন, ভবনে তাদের কাজ করার সুযোগ দেওয়া হলে দ্রুত ইন্টারনেট সংযোগ স্বাভাবিক করা সম্ভব। এজন্য ভবনে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রয়োজন। আজকের মধ্যে বিদ্যুৎ পাওয়া গেলে কাজ শুরু করলে দুদিনের মধ্যে সব স্বাভাবিক করা সম্ভব হবে।

তবে মালিকপক্ষ ভবনে এত দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ ও ভাড়া নেওয়া ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের ঢুকতে দিতে চান না। তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সময় নিয়ে ভবনে কাজের পরিবেশ ফেরাতে চান।

আরও পড়ুন: ভেতরে ঢুকছে আইএসপির কর্মীরা, বিকল্প উপায়ে ইন্টারনেট সচলের চেষ্টা 

ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ঢাকা কোলোর নাজমুল হক শুক্রবার সকালে ভবনে ঢোকার সুযোগ পান। সেখান থেকে বেরিয়ে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগুনটা মূলত লেগেছে চারতলা থেকে। সেটা ওপরের দিকে উঠেছে এবং একেবারে ১৩তলা পর্যন্ত পুড়ে গেছে। ১১ তলায় আইআইজি এনআরবি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাকিদের ইক্যুইপমেন্ট সেফটি ভালো থাকায় তেমন ক্ষতি হয়নি। ১০ তলায় ঢাকা কোলো। সেখানে আগুন লাগলেও কক্ষের ভেতরে বেশি পোড়েনি। পুড়েছে ফ্লোরের লবির সরঞ্জাম।’

খাজা টাওয়ারে যত ডাটা সেন্টার রয়েছে, তাদের প্রায় সবার ফাইবার অপটিক্যাল সার্ভিস দেয় ফাইবার অ্যাড হোম। এই প্রতিষ্ঠানের অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স অফিসার খাইরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভবনের নিচ থেকে ক্যাবল ওপরের ফ্লোরগুলোতে নেওয়া হয়েছে। ৪-৫ তলার ওপরের সব জায়গায় পাওয়ার ক্যাবলগুলো পুড়ে গেছে। বিদ্যুৎ সংযোগ এবং ভবনে কাজের সুযোগ দিলে আজ ও আগামীকালের মধ্যে সব ঠিক করা সম্ভব।’

ডিভাইন আইটি লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও ইকবাল আহমেদ এফ হাসান রাসেল জাগো নিউজকে বলেন, ‘এত বড় একটা ডাটা হাব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, অথচ কারও কোনো সাড়া নেই। এটা দ্রুত সচল করার ব্যাপারে কারও কোনো আগ্রহ রয়েছে বলে দেখছি না। দ্রুত সচল করতে এখানে কর্মীদের ঢোকা এবং পাওয়ারের ব্যবস্থা করতে হবে।’

একই দাবি জানিয়েছেন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি এমদাদুল হক। আগুন লাগার পর থেকে রাতভর তিনি খাজা টাওয়ারের সামনেই ছিলেন। সকালে আবার এসেছেন সেখানে। ভেতরে ঢুকে কয়েকটি ফ্লোরের পরিস্থিতি দেখে আসেন।

বিপর্যয় ঠেকাতে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ চান ইন্টারনেট সেবাদাতারা

এমদাদুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি যতটুকু দেখলাম এবং অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের যা জানিয়েছে, তাতে ডাটা সেন্টারে ক্ষতি কম হয়েছে। মূলত বাড়তি নিরাপত্তা বলয় থাকায় ডাটা সেন্টারের যন্ত্রপাতি অধিকাংশই অক্ষত রয়েছে। ইন্টারনেট পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে এখন ভবনে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রয়োজন। অথবা যেকোনো উপায়ে পাওয়ার প্রয়োজন।’

ভবনের মালিকপক্ষ বিদ্যুৎ এবং কাজ করার অনুমতি দিচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা একটা বড় ডাটা হাব। এখানে ডাটা সেন্টার রয়েছে, আইসিএক্স রয়েছে। ইন্টারনেট ও মোবাইল নেটওয়ার্ক তো জরুরি সেবা। এটা চালু করতে সব পক্ষকে পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা বিটিআরসি, আইসিটি বিভাগসহ সবার সহযোগিতা চাই। দ্রুত তারা এ ডাটা হাব সচলে স্পষ্ট পদক্ষেপ নেবেন বলে আশা করি।’

আরও পড়ুন: ১৬ ঘণ্টা পর খাজা টাওয়ারের আগুন নির্বাপণ সম্পন্ন 

এদিকে, ভবনের মালিকপক্ষের কয়েকজনকে ভেতরে দেখা গেলেও তারা গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। ভবনের কর্মীরা জানান, খাজা টাওয়ারের মালিক ৬ ভাই। এটা তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি। তাদের মধ্যে দুই ভাই এবং একজনের ছেলে ভেতরে আছেন। তারা ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মালামাল বুঝিয়ে দিচ্ছেন।

বিদ্যুৎ সংযোগ ও ভবনে ভাড়াটিয়াদের কাজের সুযোগ কবে দেওয়া হবে জানতে চাইলে পরিচয় না জানিয়ে মালিকপক্ষের একজন বলেন, ‘ওসব নিয়ে এখনো আমরা চিন্তা করিনি। চাইলেই তো ভবনে পাওয়ার দেওয়া সম্ভব নয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হবে। এরপর নোটিশ দিয়ে সবাইকে জানাবো।’

এর আগে, গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা ৫৯ মিনিটে রাজধানীর মহাখালীর খাজা টাওয়ারে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট। পরে ধাপে ধাপে আরও সাতটি ইউনিট যোগ দেয় সেখানে। সন্ধ্যা ৬টার দিকে তাদের সহায়তায় যোগ দেয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী।

অগ্নিকাণ্ডে ভবনে থাকা তিনজন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুজন নারী। একজন তার ধরে নামতে গিয়ে পড়ে মারা যান। আরেকজনের ভেতরে ধোয়ায় শ্বাসকষ্টে মৃত্যু হয়। নিহত অপরজন সাইফ পাওয়ার টেকের প্রকৌশলী।

এএএইচ/কেএসআর/জেআইএম

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।