খাজা টাওয়ারে আগুন

৬০০ আইএসপির সেবা বন্ধ, ইন্টারনেটে ধীরগতি থাকবে ১ সপ্তাহ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:৫১ পিএম, ২৬ অক্টোবর ২০২৩
খাজা টাওয়ার

রাজধানীর মহাখালীর খাজা টাওয়ারে আগুনের ঘটনায় ডাটা সেন্টার ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুড়ে গেছে ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি)। এতে সারাদেশের অন্তত ছয়শ ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) প্রতিষ্ঠানের সার্ভারে বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে অনেক প্রতিষ্ঠানের ইন্টারনেট সেবা। যেগুলো এখনও চালু আছে, সেখানেও ইন্টারনেটে ধীরগতি।

ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি এমদাদুল হক বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে জাগো নিউজকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

এমদাদুল হক বলেন, ‘যতটুকু খবর পেয়েছি লেভেল থ্রি, ম্যাক্স হাব, আমরা নেটওয়ার্কস, আর্থনেট ও উইনস্ট্রিম আইআইজি পুড়ে গেছে। ফলে আমরা এরইমধ্যে ৭০-৮০ শতাংশ ব্যান্ডউইথ হারিয়েছি। সারাদেশের ৫৫০-৬০০ আইএসপি প্রতিষ্ঠানের সেবা বন্ধের পর্যায়ে।’

তিনি আরও বলেন, ‘খাজা টাওয়ারে আগুনের ঘটনায় ধারণা অনুযায়ী—যে পরিমাণ ড্যামেজ (ক্ষতি) হয়েছে, তাতে ইন্টারনেটের গতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে অন্তত এক সপ্তাহ সময় লাগবে। আর যদি ডিভাইসগুলো পুড়ে যায়, সেক্ষেত্রে আরও বেশি সময়ও লাগতে পারে। তার আগ পর্যন্ত সারাদেশে ইন্টারনেট ধীরগতির থাকতে পারে।’

আরও পড়ুন: পুড়ে গেছে ডাটা সেন্টার, ঢাকায় ইন্টারনেটে ধীরগতি 

তবে ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণ এবং সেখানে ঢোকার পর ক্ষয়ক্ষতির পরিস্থিতি দেখে ইন্টারনেট সেবা স্বাভাবিক হতে কত সময় লাগবে, তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাবে বলে জানান আইএসপিএবি সভাপতি।

আইএসপিএবির মহাসচিব নাজমুল করিম ভূঞা জাগো নিউজকে বলেন, ‘সারাদেশে ৬-৭টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) থেকে ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এগুলোতে আবার অন্তত ৬০০-৭০০ আইএসপির ডাটা রাখা থাকে। কোনো আইআইজি শাটডাউন করলে, সেখানে যাদের ডাটা থেকে সেগুলোও বন্ধ হয়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর সেখানে ঢুকতে পারলে পরিস্থিতি দেখে ক্ষতির পরিমাণ বোঝা যাবে। যদি ডিভাইসগুলো ক্ষতিগ্রস্ত বা পুড়ে না যায়, সেক্ষেত্রে দ্রুত আগের অবস্থায় ফেরা যাবে। আর যদি ডিভাইস পুড়ে যায়, ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেক্ষেত্রে এক সপ্তাহ নয়, তারও বেশি সময় লাগতে পারে।’

রাজধানীর বাড্ডা এলাকার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) প্রতিষ্ঠান শূন্য ইন্টারনেটের ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আর্থের (আইএসপি প্রতিষ্ঠান) থেকে আমার ফেসবুক, ইউটিউব নেওয়া। ওদের সার্ভিস পাচ্ছি না। ফলে আমার ইউটিউব, ফেসবুক ডাউন। এখন আমার গ্রাহকরাও ইউটিউবে ঢুকলে ডাউন পাবেন। ঠিকভাবে ভিডিও দেখতে পারবেন না। ফেসবুক চালাতেও সমস্যায় পড়ছেন। ভার্গো থেকেও আমার কিছু ডাটা নেওয়া আছে। ওটাও ডাউন।’

তিনি বলেন, ‘আমি যাদের থেকে ইন্টারনেটটা নিয়েছি, সেটা ঠিক আছে। এজন্য আমার গ্রাহকরা ইন্টারনেট সার্ভিসটা ঠিকমতো পাচ্ছে। অর্থাৎ খাজা টাওয়ারের আইআইজির পপ প্রোভাইডার প্রতিষ্ঠান যেগুলো রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে যাদের ডাটা সার্ভার ডাউন; তাদের থেকে ডাটা নেওয়া সংযোগ ব্যবসায়ীদেরও সার্ভার ডাউন। এটা সারাদেশে অসংখ্য প্রোভাইডারের একই অবস্থা।’

মোবাইল নেটওয়ার্ক বিভ্রাটে কলড্রপ

মহাখালীর খাজা টাওয়ারে ইন্টারকানেক্ট এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স) রয়েছে। ফলে দেশের সব মোবাইল অপারেটরদের সংযোগও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার গ্রাহকরা মোবাইলে নেটওয়ার্ক পাচ্ছেন না।

বিশেষ করে এক অপারেটর প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য অপারেটরে কল দিতে গেলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। একাধিকবার ডায়াল করার পর কল ঢুকছে। নিরবচ্ছিন্ন কল করার সুবিধা ও ইন্টারেনট সেবা পাচ্ছেন না মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরাও।

আরও পড়ুন: খাজা টাওয়ারে আগুন: ভবন থেকে পড়ে নারীর মৃত্যু

নেটওয়ার্ক বিভ্রাট ও তা সমাধানে চেষ্টার কথা জানিয়ে গ্রাহকদের এসএমএস দিচ্ছে মোবাইল অপারেটরগুলো। গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংকের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজেও সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে পোস্ট দেওয়া হয়েছে।

বাংলালিংক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ‘মহাখালীর খাজা টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ইন্টারকানেক্ট এক্সচেঞ্জ সিস্টেমে বিঘ্ন হওয়ায় বাংলা‌লিংক থে‌কে অন্য অপারেটরে কল করতে কিছু গ্রাহকের সমস্যা হচ্ছে। সমস্যাটি দ্রুত সমাধানের জন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। সাময়িক এ সমস্যার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’ একই রকম বার্তা দিয়েছে গ্রামীণফোন ও রবি।

বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) বিকেল ৪টা ৫৯ মিনিটে রাজধানীর মহাখালীর খাজা টাওয়ারে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট। পরে ধাপে ধাপে আরও সাতটি ইউনিট যোগ দেয় সেখানে। সন্ধ্যা ৬টার দিকে তাদের সহায়তায় যোগ দেয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীও।

এদিকে, আগুন লাগার পর ভবন থেকে তার ধরে নামতে গিয়ে ৯ তলা থেকে নিচে পড়ে হাসনা হেনা (২৭) নামে একজন নিহত হয়েছেন। তিনি অরবিট নামের একটি ইন্টারনেট সার্ভিস প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। তার বাড়ি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে। ভবন থেকে অন্তত ৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস।

এএএইচ/জেএইচ

 

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।