শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ


প্রকাশিত: ০২:৩৮ এএম, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৪

আজ ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বাঙালি জাতির সবচেয়ে বেদনাদায়ক দিন। দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হারানোর দিন। একাত্তরের এই দিনে মহান মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের প্রাক্কালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নির্মমভাবে হত্যা করে। তাদের মধ্যে ছিলেন দেশবরেণ্য হাজার হাজার শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিক। স্বাধীনতাবিরোধী চক্র বুঝতে পেরেছিল, তাদের পরাজয় অনিবার্য। তারা মনে করেছিল, বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানরা বেঁচে থাকলে এ মাটিতে ওদের জায়গা হবে না। তাই পরিকল্পিতভাবে জাতিকে মেধাহীন ও পঙ্গু করতে দেশের এসব বরেণ্য ব্যক্তিকে তাদের বাসা এবং কর্মস্থল থেকে রাতের অন্ধকারে চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়।

একাত্তরের ১২ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা তৈরি করা হয়। সেই রাতে প্রাদেশিক সরকারের বেসামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলি তাদের এদেশীয় দোসর আলবদর ও আলশামসের কেন্দ্রীয় অধিনায়কদের সদর দফতরে ডেকে পাঠান। তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় এক গোপন বৈঠক। এ বৈঠকে বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা প্রণয়ন করা হয়। রাও ফরমান আলি তাদের হাতে বুদ্ধিজীবীসহ নেতৃস্থানীয় বিশেষ বিশেষ ব্যক্তির নামের তালিকা তুলে দেন। এ নীলনকশা অনুযায়ী একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর হত্যা করা হয় বাঙালি জাতির মেধাবী সন্তানদের।

একাত্তরের এই দিনের হত্যাকান্ড ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম বর্বর ঘটনা, যা বিশ্বব্যাপী শান্তিকামী মানুষকে স্তম্ভিত করেছিল। পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের পর ঢাকার মিরপুর, রায়েরবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বুদ্ধিজীবীদের লাশ ফেলে রেখে যায়। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের পরপরই নিকটাত্মীয়রা মিরপুর ও রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে স্বজনের লাশ খুঁজে পায়। পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকাররা এদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের পৈশাচিকভাবে নির্যাতন করেছিল।

বুদ্ধিজীবীদের লাশজুড়ে ছিল আঘাতের চিহ্ন, চোখ, হাত-পা বাঁধা, কারও কারও শরীরে একাধিক গুলি, আবার অনেককে হত্যা করা হয়েছিল ধারালো অস্ত্রে গলা কেটে হত্যা করে। লাশের ক্ষত চিহ্নের কারণে অনেকে প্রিয়জনের মৃতদেহ শনাক্ত করতে পারেননি। মুক্তিযুদ্ধের এই দিনে শত্রুমুক্ত হয় সাভার, দিনাজপুর, বগুড়ার শিবগঞ্জ, জয়পুরহাটের পাঁচবিবিসহ চট্টগ্রামের বান্দরবান। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে শনিবার রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বাণীতে বলেছেন, বুদ্ধিজীবীরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদের সৃজনশীল, উদার ও গণতান্ত্রিক চিন্তাচেতনা জাতির অগ্রগতির সহায়ক। জাতির বিবেক হিসেবে খ্যাত আমাদের বুদ্ধিজীবীরা তাদের ক্ষুরধার লেখনী, জনমত সৃষ্টি, যুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারকে পরামর্শ দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধকে সাফল্যের পথে এগিয়ে নিতে সহায়কের ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু জাতির দুর্ভাগ্য, বিজয়ের প্রাক্কালে হানাদার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে এদেশের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পীসহ বহু গুণীজনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। জাতিকে মেধাহীন করাই ছিল তাদের হীন উদ্দেশ্য। বুদ্ধিজীবীদের বর্বরোচিত হত্যাকান্ডের মাধ্যম জাতি হারায় তার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণীতে বলেছেন, আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ এক কলঙ্কময় দিন। স্বাধীনতার ঊষালগ্নে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি তাদের পরাজয় নিশ্চিত জেনে বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। তারা আলবদর, আলশামস ও রাজাকার বাহিনী গঠন করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সহায়তা করার পাশাপাশি হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ চালায়। বাঙালি জাতির বিজয়ের প্রাক্কালে তারা দেশের শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, আইনজীবী, শিল্পী, প্রকৌশলী, দার্শনিক, রাজনৈতিক, চিন্তাবিদসহ দেশের সেরা সন্তানদের নির্মমভাবে হত্যা করে। দেশের বুদ্ধিজীবী হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। এরই মধ্যে এ বিচারের কয়েকটি রায় কার্যকর হয়েছে। বাকি সব রায় কার্যকর করা হবে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বাণীতে বলেন, ১৪ ডিসেম্বর একটি বেদনাময় দিন। বাংলাদেশকে মেধা মননে পঙ্গু করার হীন উদ্দেশ্যে চূড়ান্ত বিজয়ের ঊষালগ্নে এই দিন হানাদার বাহিনীর দোসররা দেশের প্রথিতযশা শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক বিজ্ঞানীসহ বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীদের নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল। তারা মনে করেছিল, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করলেই এদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব দুর্বল হয়ে পড়বে এবং উন্নয়ন অগ্রগতি রুদ্ধ করে দেয়া যাবে। কিন্তু তাদের সে লক্ষ্য ব্যর্থ হয়েছে। তিনি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ তার বাণীতে উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি বাঙালি বুদ্ধিজীবীরা স্বাধীনতার লক্ষ্য অর্জনে যেন সফল না হতে পারে, তারই ফলশ্রুতিতে হত্যা করা হয় এদেশের বুদ্ধিজীবীদের। দেশের জন্য যারা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তারা আমাদের কাছে আলোকশিখা, উজ্জ্বল বাতিঘর, তারা আমাদের এগিয়ে চলার পথে সাহস ও প্রেরণার উৎস।

দিবস উপলক্ষে ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ শনিবার এক জরুরি সভার আয়োজন করে। সভায় বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী এদেশীয় দালাল, রাজাকার, আলবদর ও আলশামস সদস্যদের বিচারের রায় দ্রুত কার্যকর করে তাদের শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর যারা যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদেরও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।

সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোঃ সাজ্জাদ হোসেনের সভাপতিত্বে ও রাশেদুজ্জামান শাহিনের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন সংগঠনের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জোবায়দা হক অজন্তা ও আনোয়ার হোসেন বাবু, সহ-সভাপতি শফিউল বারী রানা, যুগ্ম সম্পাদক হারুন-অর রশিদ রনি, আল-আমিন মৃদুল, দফতর সম্পাদক আহমাদ রাসেল, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য আল ইমরান শিকদার, হাফিজুল ইসলাম মুন্না, এনামুল হাসান ডলার ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আহ্বায়ক আবু তাহের।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।