সুষ্ঠু-গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মূলমন্ত্র ‘বিশ্বাস’

আসিফ আজিজ
আসিফ আজিজ আসিফ আজিজ , অতিরিক্ত বার্তা সম্পাদক নয়াদিল্লি থেকে
প্রকাশিত: ০৯:৩৯ এএম, ১৭ অক্টোবর ২০২৩
বক্তব্য রাখছেন ভারতের প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার/জাগো নিউজ

#নির্বাচন ব্যবস্থাপকের প্রধান চ্যালেঞ্জ সোশ্যাল মিডিয়া
#ভোটারদের আস্থা অর্জন প্রধান কাজ
#ভোটারদেরই বড় পর্যবেক্ষক মনে করে ভারত

‘কাজের স্বাধীনতা, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড যাই বলেন না কেন, বিষয় একটিই- সেটি হলো বিশ্বাস। সম্প্রতি ভারতের বেশ কিছু রাজ্যে ভোট হয়েছে। সেখানে সরকারি দল কিছু জায়গায় সামান্য ভোটে পরাজিতও হয়েছে। কিন্তু কেউ কোনো পরাজয় নিয়ে প্রশ্ন করেনি। এটাই বিশ্বাস।’

সোমবার (১৬ অক্টোবর) বিকেলে ভারত সফররত বাংলাদেশি সাংবাদিক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময়ে একথা বলেন দেশটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার।

গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য কয়েকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ এবং এগুলোই তাদের দর্শন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমত তথ্য উন্মুক্ত করা বা প্রকাশ করা। নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য যে কোনো কার্যক্রম রাজনৈতিক দল এবং মিডিয়ার কাছে প্রকাশ করতে হবে, যেন তাদের মনে কোনো সন্দেহ না থাকে।’

‘কোনো বুথ স্থাপন কিংবা কোনো নির্বাচনী নিয়ম-নীতি জারি করতে গেলে সবাইকে নিয়ে করতে হবে। সব দলের কাছে পৌঁছাতে হবে। সংযোজন, সংশোধন, বিয়োজন সবকিছু জানাতে হবে। প্রত্যেক প্রক্রিয়া সবাইকে অবহিত করতে হবে। নির্বাচন প্রক্রিয়া যদি শতভাগ স্বচ্ছ হয় নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে।’

নির্বাচন নিয়ে কারও প্রশ্নের সঠিক জবাব দেওয়া যায় স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার মাধ্যমে। কোনো প্রার্থী তার অসন্তুষ্টি নিয়ে আদালতেও যেতে পারেন। কমিশনের দায়িত্ব আদালতে তাদের সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা তুলে ধরে অভিযোগকারী ব্যক্তিকে সন্তুষ্ট করা।

ভারতের নির্বাচন কমিশন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন সবার কাছে আস্থাশীল। এটি একদিনে হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের প্রমাণ করতে হয়েছে। এখন মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

jagonews24

আরও পড়ুন: ভারতের ভিসা সমস্যা সাময়িক, শিগগির স্বাভাবিক হয়ে যাবে 

নির্বাচন সম্পন্ন করার চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘১৮ বছরের বেশি সবাইকে আমরা ভোটার করতে চাই। আমরা বাড়ি গিয়ে গিয়ে তাদের ভোটার করার কার্যক্রম শুরু করেছি। এমনকি ট্রান্সজেন্ডারদেরও ভোটার করা হচ্ছে। একটি দ্বীপে একজন ভোটার থাকলেও আমরা সেখানে পৌঁছানোর চেষ্টা করি। এটাও ভোটের একটা অন্যতম চ্যালেঞ্জ।’

রাজীব কুমার বলেন, ‘এই মুহূর্তে যে কোনো নির্বাচন ব্যবস্থাপকের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে বিভ্রান্তি ছড়ায়।’

নির্বাচন আরও প্রাণবন্ত, বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য প্রযুক্তিগতভাবে এগিয়ে নেওয়ায় গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। এরই মধ্যে ভোটার হেল্প লাইন অ্যাপ, ভোটার টার্ন আউট অ্যাপ, ভোটার পোর্টাল, পলিটিক্যাল পার্টি অ্যান্ড ট্র্যাকিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, বুথ অ্যাপ প্রভৃতি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে বলে জানান সিইসি।

ইভিএম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা ৪০ বছর হলো ইভিএম ব্যবহার করছি। আমাদের ইভিএম মেশিনগুলো নির্বাচনের ছয় মাস আগে পলিটিক্যাল পার্টির নেতারা চাইলে যাচাই করতে পারেন। ঠিক সেই মেশিন নির্দিষ্ট কেন্দ্র ও নির্দিষ্ট বুথে বসানো হয়। সেটা বসানো হলো কি না সেটাও চেক করা যায়। মেশিনগুলোর ব্যাটারি স্থায়ীভাবে চার্জ করা। তাই তথ্য জমা রাখতে কোনো সমস্যা হয় না কিংবা ভোটগ্রহণের সময় কোনো সমস্যা করে না।’

তিনি বলেন, ‘যে কোনো পার্টির যে কোনো ধরনের অভিযোগ আমরা দ্রুততম সময়ে রেসপন্স করি। ইভিএম মেশিনে যদি কোনো কিছু গড়বড় থাকে জনগণ সেটা বিশ্বাস করবে না। আমাদের জনগণের আস্থা অর্জন করাই প্রধান কাজ। ভোটিং মেশিন ২৪ ঘণ্টা সিসি ক্যামেরার অধীনে থাকে। যখন নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হয় তখন পুলিশ থেকে শুরু করে রাজস্ববোর্ড সবাই নির্বাচন কমিশনের অধীনে চলে যায়।’

https://cdn.jagonews24.com/media/imgAllNew/BG/2023March/20231016-165426-20231017102240.jpg

ভারতের প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘নির্বাচনের সময় সব দলের এজেন্ট থাকে। তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পায়। ইন্টারন্যাশনাল অবজারভারও সে সময় থাকে। বিদেশি পর্যবেক্ষক সব সময় আমন্ত্রণ জানানো হয়। আমরা মনে করি আমাদের ভোটাররাই পর্যবেক্ষক। নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নির্ভর করে তাদের ওপর। সব প্রার্থী পর্যবেক্ষণ করে প্রতিদিন। তারাই বড় পর্যবেক্ষক। কারণ তারা ভোটারদের চেনে।’

আরও পড়ুন: ‘ভারত কোনো বিশেষ দলকে সমর্থন করে না, সম্পর্ক দেশের সঙ্গে হয়’ 

তিনি বলেন, ‘আমাদের ২৪-২৫টি দল। ১০০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। অধিকাংশ ভোটে অংশগ্রহণ করে। গণতন্ত্র নির্ভর করে দলগুলোর অংশগ্রহণের ওপর। সুষ্ঠু ভোটের কোনো নির্দিষ্ট মাপকাঠি নেই। ৬৭ শতাংশ ভোট কোনো রাজ্যে পড়লে অন্য কোনো রাজ্যে ৭০ শতাংশ ভোট পড়ে। তবে কোথাও ৫০ শতাংশের নিচে নয়। আমাদের গণতন্ত্র দিনে দিনে বিকশিত হচ্ছে।’

রাজীব কুমার বাংলাদেশের নির্বাচন কিংবা নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে সরাসরি কোনো কোনো কথা না বললেও তাদের নির্বাচন ব্যবস্থা কীভাবে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয় এবং দুর্বলতা কোথায় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি বাংলাদেশে মোট ভোটারের কথা শুনে বলেন, ভারতের কোনো কোনো রাজ্যেও এর চেয়ে বেশি ভোটার আছে।

নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেবল অভিংশসন করতে পারেন। নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ হয় প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে। আমাদের একটাই কাজ বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন।’

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনের বালা সুব্রামানিয়ান নারায়ানান (ডিরেক্টর জেনারেল মিডিয়া), পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী, উপসচিব (পাবলিক রিলেশন্স) বাসুদেব রবি, পাবলিসিটি অফিসার পবন শরণ, নির্বাচন কমিশনের ডিরেক্টর যুবেন্দ্র সিং, ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনের দ্বিতীয় সচিব (প্রেস, ইনফরমেশন অ্যান্ড কালচার) শিলাদিত্য হালদার প্রমুখ।

এএসএ/জেএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।