ড. ইউনূসের পদত্যাগ চান গ্রামীণ কমিউনিকেশনসের শ্রমিকরা
অনিয়ম ও নির্যাতনের অভিযোগ এনে গ্রামীণ কমিউনিকেশনসের চেয়ারম্যান এবং নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির শ্রমিকরা। ড. ইউনূসের পদত্যাগ ও ৮ দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তারা কর্মবিরতি পালন করবেন।
সোমবার (১৬ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর মিরপুর চিড়িয়াখানা রোডে গ্রামীণ টেলিকম ভবনের বাইরে ৮ দফা দাবিতে মানববন্ধন করেন শ্রমিকরা।
ফরিদপুর জোনে কর্মরত গ্রামীণ কমিউনিকেশনসের কর্মী ও সংগ্রামী পরিষদের নেতা জাহিদ মোল্লা বলেন, ৬০ বছরের ঊর্ধ্ব কোনো লোকের প্রতিষ্ঠানে চাকরি থাকার কথা না। কিন্তু ড. ইউনূস নতুন নতুন পদ সৃষ্টি ও একাধিক ৬০ ঊর্ধ্ব লোককে প্রতিষ্ঠানে রেখেছেন। আমরা ইউনূসসহ এসব লোকদের পদত্যাগ চাই। ইউনূস এই প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে চেয়ারম্যান, তিনি শ্রমিকদের রক্তচুষে খাচ্ছেন। তার নির্দেশে শ্রমিকদের নির্যাতন করা হচ্ছে। আমরা তার পদত্যাগ চাই।
মানববন্ধনে জাহিদ মোল্লা আরও বলেন, আমরা গ্রামীণ কমিউনিকেশনসের নির্যাতিত শ্রমিক। এটা গ্রামীণ ব্যাংকের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রামীণ কমিউনিকেশনস আলাদা প্রতিষ্ঠান। কেননা গ্রামীণ ব্যাংক আমাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে। আমরা প্রায় ৯৩৫ শ্রমিক চাকরি হারানোর ভয়ে আছি। আমাদের চাকরি থেকে সরানোর পায়তারা করা হচ্ছে, কোনো রকম সুযোগ-সুবিধা ছাড়া। আমাদের দাবি হচ্ছে, ন্যায্য অধিকার দিয়ে চাকরিচ্যুত করতে হবে। অসময়ে চাকরিচ্যুত করা যাবে না।
গ্রামীণ কমিউনিকেশনসের হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি লুটপাটের পায়তারা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখানে প্রায় এক হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করে। এখন প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তারা চাইছেন ৯৩৫ জন যারা মাঠে কাজ করেন তারা চলে যাক।
তিনি বলেন, আমাদের অনেক সহকর্মীকে কোনো নোটিশ ছাড়াই চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানে অনেক দুর্নীতি আছে, দুর্নীতিগ্রস্থ কর্মকর্তা আছে। আমরা কর্মকর্তাদের দুর্নীতির বিচার চাই। সাবেক এমডিকে সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার জন্য নতুন কো চেয়ারম্যান পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। তার পেছনে ৩-৪ লাখ টাকা খরচ হয়।
শ্রমিকদের দাবিগুলো হল-
প্রতিষ্ঠানের শুরু থেকে সব শ্রমিকের বেতন স্কেল সংশোধনপূর্বক বেতন রিভিউ করে (পে-স্কেল বাস্তবায়নসহ) বর্ধিত বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা, যাতায়াত ও অন্যান্য ভাতার বকেয়া মজুরিসহ প্রত্যেক শ্রমিককে সমুদয় অর্থ প্রদান করতে হবে।
বেতন স্কেল সংশোধন ও রিভিউ পূর্বক বার্ষিক অর্জিত ছুটির বেতন বাৎসরিক ২০ দিন হারে মোট বেতনের সমপরিমাণ অনুযায়ী বকেয়াসহ সমূদয় অর্থ প্রদান করতে হবে।
অন্যায়ভাবে নোটিশ ছাড়া বিগত বছরে না দেওয়া বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট প্রদান করতে হবে এবং শুরু থেকে বার্ষিক ৫% হারে প্রতি বছরের ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধিপূর্বক বকেয়াসহ সমূদয় অর্থ প্রদান করতে হবে।
শুরু থেকে ক্ষতিপূরণজনিত সাপ্তাহিক ছুটির বকেয়া বেতন ও ভাতার সমূদয় অর্থ প্রদান করতে হবে।
পুনরায় অডিট করে শ্রম আইন মোতাবেক ট্রাস্ট্রি বোর্ড গঠন করে শ্রমিক প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে শুরু থেকে বকেয়াসহ প্রদান করতে হবে।
শ্রম আইন মোতাবেক অধিকাল ভাতা (ওভার টাইম হিসেব করে) সমূদয় অর্থ প্রদান করতে হবে।
ট্রেড ইউনিয়ন করার দায়ে চাকরিচ্যুত আটজন শ্রমিক (মো. বদরুল আলম, মো. আব্দুস সালাম, মো. আব্দুল গফুর, ইলিয়াস কাঞ্চন, মো. শাহ আলম, মো. জিল্লুর রহমান, মো. হোসাইন আহম্মদ ও এমরানুল হক) চাকরি ফেরত দিতে হবে।
প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অসময়ে কর্মী ছাটাই করা হলে প্রদেয় সুবিধার অধিক ক্ষতিপূরণ বাবদ কমপক্ষে ১০ বছরের ক্ষতিমূল্য প্রদান করতে হবে এবং অন্যান্য পাওনা থাকলে তা দিতে হবে।
এসএম/জেডএইচ/জিকেএস