গুলশানে ‘কান ফাটানো’ শব্দে পার হলো ‘শব্দহীন এক মিনিট’
সকাল ৯টা ৫৮ মিনিট। হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়া হলো গুলশান এক নম্বর থেকে দুইয়ে যাওয়ার রাস্তা। বাম পাশে ব্যানার হাতে দাঁড়ানো ১৫-২০ জন মানুষ। তাতে লেখা ‘শব্দদূষণ বন্ধ করি, নীরব মিনিট পালন করি’। ঘড়িতে ১০টা বাজতেই হাত উঁচিয়ে নীরব থাকার অনুরোধ করলেন আয়োজকরা। কিন্তু কেউই মানলো না অনুরোধ। সিগন্যাল ছাড়াই রাস্তা বন্ধ করায় শুরু হলো হর্ন বাজানোর প্রতিযোগিতা! আর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাঁশি বাজিয়ে শব্দহীন মিনিট কাটলো ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদেরও।
রোববার (১৫ অক্টোবর) সকালে এমন দৃশ্য দেখা গেলো রাজধানীর গুলশান-১ নম্বর চত্বরে। প্রচণ্ড আওয়াজ ও কান ফাটানো শব্দে পার হলো পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় ঘোষিত শব্দহীন এক মিনিটের কর্মসূচি।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ একসময় ২৪ ঘণ্টাই শব্দদূষণমুক্ত থাকবে: পরিবেশমন্ত্রী
১০টা ১ মিনিটে হাসতে হাসতে ব্যানার গুটিয়ে নিতে দেখা গেলো আয়োজকদের। গণমাধ্যমকর্মীরা ছবি-ভিডিও নিতে একটু অপেক্ষা করতে বললে বন অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলে উঠলেন, ‘দেখছেন না, মানুষ কেমন গালি দিচ্ছে! কেউ কি রাখছেন আমাদের অনুরোধ? চলেন বিদায় হই।’
ততক্ষণে রাস্তা ছেড়ে দিয়েছেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। কর্মসূচি চলাকালে একের পর এক মোটরসাইকেল পার হচ্ছে। হঠাৎ এক মোটরসাইকেল আরোহী বন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলে ওঠেন, ‘এসব না কইরা অফিসে যাইয়া আপনাগো বসদের বলেন, চাল-ডাল, সবজির দামটা যেন কমান।’ কেউ কেউ অশ্রাব্য ভাষায় গালিও দেন। এতে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন আয়োজকরা। ফলে দ্রুত সেখান থেকে সরে যান তারা।
সকাল সাড়ে ৯টায় গুলশান-১-এ পূর্বঘোষিত কর্মসূচি পালনের জন্য আসেন পরিবেশ অধিদপ্তর এবং বন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। শব্দহীন মিনিট পালনের কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র শাখার পরিচালক মাসুদ ইকবাল শামীম। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক হাবিবুর রহমান, বন অধিদপ্তরের সুফল প্রকল্পের উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আব্রাহাম হোসেন প্রমুখ।
আরও পড়ুন: ‘এক মিনিট শব্দহীন’ কর্মসূচির মধ্যেও বাজলো হর্ন
পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র শাখার পরিচালক মাসুদ ইকবাল শামীম বলেন, সারাদেশে এখন শব্দদূষণ বেড়েছে। তবে রাজধানী ঢাকায় শব্দদূষণ এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। যানজট ও ট্র্যাফিক রুলস না মানায় শব্দদূষণ বেশি হচ্ছে। এর স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি অনেক বেশি। এ ব্যাপারে আমাদের আইন রয়েছে। তবে সরাসরি আইন প্রয়োগ করে এটা কমানো সম্ভব নয়। এ জন্য জনসচেতনতা সৃষ্টিতে আমরা এ শব্দহীন মিনিট কর্মসূচি পালন করলাম। আশা করি, মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়বে।
বাইকারদের দোষ দ্যান, পাবলিক কি ভালো?
শব্দহীন কর্মসূচি শুরুর আগে সচেতনতায় মোটরসাইকেল এবং গাড়িতে স্টিকার লাগিয়ে দেন স্বেচ্ছাসেবী ও বন এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। রাস্তা বন্ধ থাকায় মোটরসাইকেল নিয়ে গুলশান-১ এর সিগন্যাল পার হওয়ার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাজ্জাদ হোসেন। ব্যানারের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বারবার হর্ন বাজিয়ে যাচ্ছিলেন।
এমন একটা কর্মসূচির কাছে দাঁড়িয়ে হর্ন বাজাচ্ছেন কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা অভ্যাস হয়ে গেছে।’ রাস্তায় জ্যামে পড়লে হাত অটোমেটিক হর্নের বাটনে চলে যায় বলে হেসে ওঠেন তিনি।
তবে সচেতন অনেক মোটরসাইকেল চালকের দাবি, সবাই যদি ট্র্যাফিক রুলস মানে, তাহলে তাদের হর্ন বাজানোর প্রয়োজন পড়বে না। সৈকত হাসান নামে আরেক মোটরসাইকেল চালক বলেন, ‘শুধু তো আপনারা বাইকারদের দোষ দ্যান। আমাদের পাবলিক কি ভালো? ফুটপাত ছেড়ে হঠাৎ রাস্তায় নেমে পড়ে। উল্টো লেনে গাড়ি ঢুকিয়ে বসে থাকে। জেব্রা ক্রসিং ছাড়াই যেখান-সেখান দিয়ে রাস্তা পার হয়। তখন হর্ন বাজানোর প্রয়োজন পড়ে।’
আরও পড়ুন: ১ মিনিটও শব্দহীন থাকলো না মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর
রোববার রাজধানীর ১১টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় ঘোষিত শব্দহীন এক মিনিট কর্মসূচি পালন করা হয়। এছাড়া সব স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। শব্দদূষণ রোধে জনসচেতনতা বাড়াতে শব্দহীন থাকার অনুরোধ জানানো হয় এসব কর্মসূচিতে। কর্মসূচি চলাকালে চালকদের মাঝে সচেতনতামূলক লিফলেট ও স্টিকার বিতরণ করেন আয়োজকরা।
এএএইচ/এসএনআর/এএসএম