ডিসি-ইউএনওদের জন্য বিলাসবহুল ২৬১ গাড়ি কেনার অনুমোদন

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:৫০ পিএম, ১১ অক্টোবর ২০২৩
ফাইল ছবি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন এবং মাঠপর্যায়ে নিরবচ্ছিন্ন পরিবহন সেবা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) জন্য বিলাসবহুল ২৬১টি জিপ গাড়ি কেনার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান ছাড়াই সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি (ডিপিএম) অনুসরণ করে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা (পিপিআর), ২০০৮ এর বিধি ৭৬(২)-এ উল্লেখিত মূল্যসীমার অতিরিক্ত দামে এসব গাড়ি কেনা হবে।

আরও পড়ুন: শীর্ষ কর্মকর্তার জন্য ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকার গাড়ি কেনার সুযোগ

বুধবার (১১ অক্টোবর) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, আজ অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে যে কয়টি প্রস্তাব উঠেছিল সবগুলো অনুমোদন দেওয়া হয়ছে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে ডিসি ও ইউএনওদের ২৬১টি জিপ গাড়ি কেনা সংক্রান্ত এই একটি প্রস্তাবই ছিল। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাবটি আনা হয়।

আরও পড়ুন: সরকারি ব্যয়ে গাড়ি-বাড়ি-জমি কেনা বন্ধ

অন্যদিকে টেবিলের একটি প্রস্তাবসহ সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে ১৫টি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। এরমধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের ৩টি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ৩টি, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ৩টি, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ৩টি, শিল্প মন্ত্রণালয়ের ২টি এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রস্তাবনা ছিল। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবটি টেবিলে উপস্থাপন করা হয়।

এই ১৫টি প্রস্তাবই মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন দিয়েছে। অনুমোদন দেওয়া প্রস্তাবগুলোর মোট অর্থের পরিমাণ এক হাজার ৯০৮ কোটি ৫৮ হাজার ৪৪০ টাকা। এরমধ্যে জিওবি থেকে ব্যয় হবে ৪২০ কোটি ৮২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৮৭ টাকা এবং দেশি ব্যাংক ও বৈদেশিক অর্থায়ন এক হাজার ৪৮৭ কোটি ১৮ লাখ ১৯ হাজার ৭৫৩ টাকা।

জানা গেছে, ডিসি এবং ইউএনওদের ২৬১ জিপ গাড়ি কিনতে নিয়মিত বরাদ্দের অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন। এজন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা (পিপিআর), ২০০৮ এর বিধি ৭৬(২)-এ উল্লেখিত মূল্যসীমার বেশি দামে কেনার নীতিগত অনুমোদন চাওয়া হয় অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির কাছে। মন্ত্রিসভা কমিটি তা অনুমোদন দিয়েছে।

আরও পড়ুন: নতুন অর্থবছরে সরকারি ব্যয়ে বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ

এর আগে সম্প্রতি ডিসি ও ইউএনওদের জন্য ২৬১টি গাড়ি কেনার জন্য যানবাহন অধিদপ্তরের চাহিদাপত্র জনপ্রশাসনের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ওই চাহিদাপত্র অনুযায়ী, ডিসিদের জন্য গাড়ি কেনা হবে ৬১টি। প্রতিটি গাড়ি কিনতে ব্যয় হবে ১ কোটি ৪৫ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ টাকা। এতে ৬১টি গাড়ি কিনতে মোট ব্যয় হবে ৮৮ কোটি ৯৬ লাখ ৫৪ হাজার ৫০০ টাকা।

আর ইউএনওদের ব্যবহারের জন্য কেনা হবে ২০০ গাড়ি। প্রতিটি গাড়ির দাম ধরা হয়েছে ১ কোটি ৪৫ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ টাকা। ফলে ২০০টি গাড়ি কিনতে মোট লাগবে ২৯১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মাধ্যমে এসব গাড়ি কেনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

এসব জিপ গাড়ি কেনার যৌক্তিকতা হিসেবে চাহিদাপত্রে উল্লেখ করা হয়, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ মাঠপর্যায়ে নিরবচ্ছিন্ন পরিবহন সেবা নিশ্চিত করতে এসব গাড়ির প্রয়োজন হবে।

এদিকে বৈশিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) দ্বিতীয় দিনে অর্থাৎ ২ জুলাই সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধনের লক্ষ্যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সকল প্রকার যানবাহন ক্রয় (মোটরযান, জলযান, আকাশযান) বন্ধ থাকবে বলে নির্দেশনা জারি করা সরকার।

আরও পড়ুন: ডিসি অফিসের জন্য ২০টি টয়োটা গাড়ি কিনবে সরকার

একই সঙ্গে পরিচালন বাজেটের আওতায় মোটরযান, জলযান, আকাশযান খাতে বরাদ্দ করা অর্থ ব্যয় বন্ধ থাকবে বলে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়। তবে ১০ বছরের বেশি পুরোনো মোটরযান প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের অনুমোদন নিয়ে ব্যয় করার সুযোগ দেওয়া হয়।

এছাড়া পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সকল প্রকার বৈদেশিক ভ্রমণ, ওয়ার্কশপ ও সেমিনারে অংশগ্রহণ বন্ধ কারার নির্দেশনাও দেওয়া হয়। তবে অত্যাবশ্যকীয় বিবেচনায় কিছু ক্ষেত্রে সীমিত আকারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে বিদেশ ভ্রমণ করার সুযোগ দেওয়া হয়।

সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং আওতাধীন অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, পাবলিক সেক্টর করপোরেশন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এই নিষেধাজ্ঞার পর এক মাস না যেতেই আগস্টের শুরুতেই সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য আবার গাড়ি কেনার সুযোগ করে দেওয়া হয়। এমনকি গাড়ির জন্য বরাদ্দ আগের থেকে বাড়িয়ে দেওয়া হয়। আগে সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে শীর্ষ কর্মকর্তাদের জন্য সর্বোচ্চ ৯৪ লাখ টাকা দামের গাড়ি কেনা যেতো। নতুন নির্দেশনায় এই বাজেট বাড়িয়ে ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা করা হয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরের গ্রেড ১ ও ২ পর্যায়ের কর্মচারী এই গাড়ি কিনতে পারবেন। আর গ্রেড ৩ বা তার চেয়ে নিম্ন পর্যায়ের কর্মচারীদের জন্য কেনা যাবে ৬৫ লাখ টাকা দামের গাড়ি। আগে তাদের ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বসীমা ছিল ৫৭ লাখ টাকা।

আরও পড়ুন: গাড়ি কিনতে পারবে না ব্যাংক

সরকারের এই গাড়ি কেনার সিদ্ধান্তের মধ্যে কার, জিপ, পিক-আপ, মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস, অ্যাম্বুলেন্স, কোস্টার/মিনিবাস (এসি), মিনিবাস (নন এসি), বাস, ট্রাক রয়েছে। এরমধ্যে ৪৫ লাখ টাকা দিয়ে ১৬০০ সিসির কার, ৬৫ লাখ টাকা দিয়ে সর্বোচ্চ ২০০০ সিসির জিপ, ৩৮ লাখ টাকা দিয়ে সর্বোচ্চ ২৫০০ সিসির পিক-আপ (সিংগেল কেবিন), ৫৫ লাখ টাকা দিয়ে ২৫০০ সিসির পিক-আপ (ডাবল কেবিন), ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা দিয়ে সর্বোচ্চ ১২৫ সিসির মোটরসাইকেল, ৫২ লাখ টাকা দিয়ে ২৭০০ সিসির মাইক্রোবাস, ৫৪ লাখ টাকা দিয়ে ২৭০০ সিসির অ্যাম্বুলেন্স, ৭৫ লাখ টাকা দিয়ে ৪২০০ সিসির কোস্টার/মিনিবাস (এসি), ৩২ লাখ টাকা দিয়ে ২৭৭১ সিসির মিনিবাস (নন এসি), ৪৬ লাখ টাকা দিয়ে ৫৮৮৩ সিসির বাস (বড়, নন এসি), ৩৯ লাখ টাকা দিয়ে ৫ টনের ট্রাক এবং ৩১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে ৩ টনের ট্রাক কেনা যাবে।

এমএএস/এমকেআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।