জাগো নিউজে সংবাদ প্রকাশ

পুনর্নির্ধারণ হচ্ছে মৌজামূল্য, নতুন ব্যয় ঠিক করছে না প্রশাসন

সালাহ উদ্দিন জসিম
সালাহ উদ্দিন জসিম সালাহ উদ্দিন জসিম , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:১৩ পিএম, ০৪ অক্টোবর ২০২৩
চাঁবিপ্রবির একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনের নির্ধারিত স্থান/সংগৃহীত

১০ গুণ বর্ধিত মৌজামূল্যে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চাঁবিপ্রবি) জমি অধিগ্রহণের নতুন ব্যয় প্রাক্কলন হচ্ছে না। জেলা প্রশাসন এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, নতুন করে ব্যয় প্রাক্কলন সম্ভব নয়। মৌজামূল্য পুনর্নির্ধারণের কাজও চলমান। এ নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি মতামত দিলে সে আলোকে পুনর্নির্ধারণ হবে মৌজামূল্য।

চাঁবিপ্রবির অনিয়ম নিয়ে গত ১৯ সেপ্টেম্বর ‘রাহুর দশা কাটেনি চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের’ শীর্ষক একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে জাগো নিউজ। এই প্রতিবেদনের পর নড়েচড়ে বসে সব পক্ষ।

২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১৯ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। এ সংক্রান্ত বিল ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সংসদে পাস হয়। ১৫ সেপ্টেম্বর সরকারি গেজেটের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু। ২০২১ সালের ২৫ জানুয়ারি থেকে চাঁবিপ্রবির উপাচার্য হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব পান অধ্যাপক ড. মো. নাছিম আখতার।

অস্থায়ী ক্যাম্পাসে চলমান এ বিশ্ববিদ্যালয়টি তিন বছরেও স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি। সম্পন্ন করতে পারেনি ভূমি অধিগ্রহণের কাজ। খোদ শিক্ষামন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকার এ বিশ্ববিদ্যালয়টির জমি অধিগ্রহণ তার স্বজনদের দুর্নীতির জালে আটকে যায়। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে জমি অধিগ্রহণে মন্ত্রীর স্বজনদের দুর্নীতি নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়। পরে সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে আদালতে রিটও করেন। ২০২২ সালের জুন মাসে আদালত দুর্নীতির প্রমাণ পান এবং রিটকারীদেরই উল্টো এক কোটি টাকা জরিমানা করেন।

এরই মধ্যে থেমে যায় ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম। অবশ্য, থামেনি সেই দুষ্টচক্র। একই বছরের নভেম্বরে তারা হাইকোর্টের আদেশে বলা ‘অসৎ উদ্দেশে সম্পাদিত’ সেই ১৩৯ দলিলের অস্বাভাবিক মূল্য ধরেই ১০ গুণ বাড়িয়েছে লক্ষ্মীপুর মৌজামূল্য। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও মন্ত্রণালয়ের বরাতে সেই বাড়তি মৌজামূল্যে ব্যয় প্রাক্কলন চেয়ে জেলা প্রশাসনকে চিঠি দেয়। এ নিয়েই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে জাগো নিউজ।

jagonews24
লক্ষ্মীপুর মৌজায় ভিসির বাসভবনের জন্য নির্ধারিত স্থান/সংগৃহীত

এরই মধ্যে এই রিপোর্টের আলোকে মৌজামূল্য নিয়ে তদন্ত কমিটি করে দিয়েছে জেলা রেজিস্ট্রার। ২৫ সেপ্টেম্বর জেলা রেজিস্ট্রার মহসিন আলম স্বাক্ষরিত চিঠিতে চাঁদপুর সদর উপজেলা সাব-রেজিস্টার ও বাজারমূল্য নির্ধারণ কমিটির সদস্য সচিব মৌজামূল্য নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন পাঁচ কার্যদিবসে দিতে বলা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছেন উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার ও বাজারমূল্য নির্ধারণ কমিটির সদস্য সচিব। ২৭ সেপ্টেম্বর তিনি তদন্তের স্বার্থে জেলা প্রশাসকের কাছে বিতর্কিত ১৩৯টি দলিলের তথ্য, হাইকোর্টের রায় এবং মৌজা ম্যাপ চেয়েছেন।

এ বিষয়ে চাঁদপুর সদর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার এ কে এম মাহমুদুল হক জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন। যেহেতু হাইকোর্টের রায়ে ১৩৯টি দলিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেছে, আমরা দেখবো সেগুলো বাদ দিলে মৌজা রেট কমে কি না। যদি কমে তাহলে সেই আলোকে আমরা মৌজা রেট পুনর্নির্ধারণে প্রস্তাব পাঠাবো। তাহলে মৌজা রেট পরিবর্তন হবে।

jagonews24
ভাড়া ভবনে চাঁবিপ্রবির অস্থায়ী ক্যাম্পাস/সংগৃহীত

জেলা রেজিস্ট্রার মহসিন আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘মৌজা রেট নির্ধারণী কমিটির সদস্য সচিব সাব-রেজিস্ট্রার। তাকেই এটা তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলেছি। কোর্টের রায়ের আলোকে যদি তারা ১৩৯টি দলিল বাদ দিয়ে যে মূল্য হয়, সে আলোকে মৌজা রেট নির্ধারণের প্রস্তাব করে, তাহলে ওটা আমরা মহাপরিদর্শক নিবন্ধনের (আইজিআর) কাছে পাঠাবো। আইজিআর মহোদয় সম্মত হলে সে অনুযায়ী মৌজা রেট পুনর্নির্ধারণ হবে।’

পাশাপাশি চাঁদপুর জেলা প্রশাসনও জানিয়েছে, নতুন করে অধিগ্রহণের ব্যয় প্রাক্কলন করা সম্ভব নয়। ২১ সেপ্টেম্বর জেলা ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘১২/২০.২১ এল এ কেসের অধীন জমির চূড়ান্ত প্রাক্কলন এরই মধ্যে পাঠানো হয়েছে। যেটি ভূমি মন্ত্রণালয়ে বাতিলের প্রক্রিয়াধীন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘তারা সুনির্দিষ্ট কেসের বিপরীতে আমাদের কাছে ব্যয় প্রাক্কলন চেয়েছে। যেহেতু একই জমি নিয়ে ব্যয় প্রাক্কলন করে একটা কেস চলমান ছিল, সেজন্য আইন অনুযায়ী নতুন করে ব্যয় প্রাক্কলন সম্ভব নয়। এটাই আমরা জানিয়ে দিয়েছি।’

এ বিষয়ে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নাছিম আখতার জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। কিন্তু চিঠি হাতে পাইনি।’

এসইউজে/এএসএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।