গবেষণা

সবুজায়নে পোশাক কারখানার মুনাফা বেড়েছে, কমেছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৩৬ পিএম, ০৩ অক্টোবর ২০২৩

পরিবেশবান্ধব উৎপাদন ব্যবস্থাপনার জন্য বিশ্ব স্বীকৃত সবুজ কারখানার সনদ পেয়েছে বাংলাদেশের শতাধিক পোশাক কারখানা। এক গবেষণা বলছে, সবুজায়নে পদক্ষেপ নেওয়ায় এসব কারখানার মুনাফা বেড়েছে আর কমেছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।

সিপিডি ও সুইডেন দূতাবাসের যৌথ আয়োজনে মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক খাতের সবুজ রূপান্তর নিশ্চিত করা শীর্ষক ডায়ালগে এ তথ্য জানান হয়। পোশাক খাতের সবুজায়ন নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) রিসার্স ফেলো মুনতাসির কামাল।

২০২২ সালের জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৪০৩টি কারখানার তথ্য-উপাত্ত ও চার হাজার ৫৪১ কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এই গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।

আরও পড়ুন: দেশে সবুজ পোশাক কারখানা এখন ২০০

প্রতিবেদন জানানো হয়, বড় প্রতিষ্ঠানগুলো সবুজায়নের পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে তাদের কারখানায় ৯৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ স্বাস্থ্যঝুঁকি কমেছে। এছাড়া ৮৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ চিকিৎসা খরচ কমেছে। অন্যদিকে কারখানা ও কর্মচারীদের কর্মক্ষমতা যথাক্রমে ৮৪ দশমিক ১৬ শতাংশ ও ৯৫ দশমিক ০৭ শতাংশ বেড়েছে। বড় বড় কারখানাগুলোর মুনাফা বেড়েছে ৩৪ দশমিক ০৯ শতাংশ।

অন্যদিকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানে সবুজায়নের পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে ৮১ দশমিক ৫৪ শতাংশ স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমেছে, ৬৫ দশমিক ২০ শতাংশ চিকিৎসা খরচ কমেছে। এছাড়া কারখানা ও কর্মচারীদের কর্মক্ষমতা যথাক্রমে ৬৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ ও ৭৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেড়েছে। এ ধরনের ফ্যাক্টরির মুনাফা বেড়েছে ৩৩ দশমিক ৮০ শতাংশ।

সবুজায়নের পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে মাইক্রো কারখানার ৮৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমেছে, আর চিকিৎসা খরচ কমেছে ৬৩ দশমিক ১৩ শতাংশ। অন্যদিকে কারখানা ও কর্মচারীদের কর্মক্ষমতা যথাক্রমে ৬৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ ও ৭৫ দশমিক ৭১ শতাংশ বেড়েছে। মাইক্রো ফ্যাক্টরির মুনাফা বেড়েছে ১৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

আরও পড়ুন: সবাই মিলে করি পণ, বন্ধ হবে প্লাস্টিক দূষণ

গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, অনেক কারখানা বিভিন্ন ধরনের সবুজায়ন সার্টিফিকেট নিয়েছে। এর পাশাপাশি লিড একটা সার্টিফিকেশন আছে, যেটা ইউএস জিএফের অধীনে হয়ে থাকে। এরমধ্যে এনার্জি, ওয়াটার, ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট, কেমিক্যাল ওয়েস্ট এসবই আছে। সেই সার্টিফিকেট প্রায় ২০০ কারখানা নিয়েছে। আর ৪০০-৫০০ কারখানা পাইপলাইনে আছে।

তিনি বলেন, কিন্তু আমরা যখন বায়ারদের সঙ্গে কথা বলেছি, তখন শুনছি তাদের চাহিদা ভিন্ন। সবুজের সংজ্ঞা, সূচক ভিন্ন এই সার্টিফিকেশনের ক্ষেত্রে। সেখানে এক ধরনের বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। এসব চাহিদা যদি একীভূত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় তাহলে রপ্তানিকারকদের সুবিধা হয়। একেক রপ্তানিকারকের চাহিদা একেক রকম, লিড কে অনেক বায়ারই স্বীকার করতে চায় না। তার মানে আরও প্রস্তুতি নিতে হবে।

বিজিএমইএর ভাইস প্রেসিডেন্ট শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, আমাদের সবুজ কারখানা গ্লোবাল মডেল হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। আমার মনে হয় সিপিডিকে অন্যান্য দূষণ সৃষ্টিকারী শিল্পের দিকে মনোযোগ দেওয়া দরকার। পোশাক কারখানা এরই মধ্যে তীব্র নজরদারির মধ্যে রয়েছে।

আরও পড়ুন: চাইলে ঢাকাকে এখনো পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ নগরী করা সম্ভব

তিমি আরও বলেন, ২০০ এর অধিক সবুজ কারখানা আমাদের আছে। ৭৩টি প্লাটিনাম রেটিং, ১৫০টি গোল্ড, ১০টি সিলভার রেটিং। বিশ্বের সেরা ১৫টি লিড ফ্যাক্টরির ১৩টি বাংলাদেশে। পাঁচ হাজার ফ্যাক্টরি সবুজায়ন সার্টিফিকেট নেওয়ার পথে আছে।

ব্যবসায়ী তাবিথ আওউয়াল বলেন, আমাদের উৎপাদন প্রক্রিয়া যতই সবুজ হোক না কেন, বের হওয়া পণ্যটি যদি সবুজ না হয়- এটা ভবিষ্যতে বড় সমস্যা সৃষ্টি করবে। ফ্যাশন কোম্পানিগুলোকে ২০৩০ সাল নাগাদ উৎপাদনের একটা অংশ রিসাইকেল টেক্সটাইল দিয়ে করতে হবে। আমাদের রিসাইকেল করা যায় এমন বর্জ্যের উৎসের প্রয়োজন। এটা নিয়ে কাজ করতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বছরে ৫ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন টেক্সটাইল বর্জ্য উৎপন্ন করে। আমরা যদি সেটা সংগ্রহ করতে পারি তাহলে রিসাইকেল পণ্যে উৎপাদনের বড় সমস্যা সমাধান করতে পারবো।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, এই গবেষণা আমাদের নবম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করবে। আমরা সবুজ ও নবায়নযোগ্য বিদ্যুতে মনোযোগী হয়েছি। রপ্তানিতে পোশাক খাতের অবদান ৮৫ শতাংশ। এখানে সবুজায়নের পাশাপাশি দূষণ ও কমাতে হবে।

তিনি বলেন, এনফোর্সমেন্ট, রেগুলেশন এগুলো গর্ভনেন্স ইস্যু। এটা সবচেয়ে কঠিন। এনফোর্সমেন্ট ও রেগুলেশন ঠিক মতো হলে আমাদের বাজার অর্থনীতি ঠিক মতো কাজ করে। বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করা না, সহযোগিতা করা সরকারের দায়িত্ব। বাজার যাতে কাজ করতে পারে। এতে পরিবেশের ওপর যেন ক্ষতিকর প্রভাব না পড়ে এটা দেখা সরকারের দায়িত্ব। সে ক্ষেত্রে বাজারে কোনো রকম খবরদারি না করে বাজারকে সহযোগিতা করা, প্রতিযোগিতামূলক বাজার কাঠামোর মধ্যে যেন সবাই কাজ করে এটা দেখা সরকারের দায়িত্ব।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, গার্মেন্টস খাতের প্রাইস ফরমেশন সরকার নির্ধারণ করে দিতে পারে না, প্রাইস চাইতেও পারে না। বায়ারদের কাছে এটা চাইতে হবে শিল্প মালিকদের। ভালো পণ্য চাইতে হলে, সবুজায়ন চাইলে বায়ারদের প্রিমিয়াম প্রাইস দিতে হবে। কারণ আমরা জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের মধ্যে আছি।

তিনি বলেন, এই শিল্পের বিকাশে ডলারের যে অবমূল্যায়ন করতে হয়েছে আমাদের। এটা রপ্তানিখাতকে সহায়তা দেওয়ার জন্যই করা হয়েছে। এটা তাদের জন্য সবচেয়ে বড় প্রণোদনা বলে আমি মনে করি।

এসময় ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দ্রা বার্গ ফন লিন্ডে প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এসএম/জেডএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।