বিদেশ সফরে চট্টগ্রামের তিন শীর্ষ কর্তা!

ইকবাল হোসেন
ইকবাল হোসেন ইকবাল হোসেন , নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ০৮:৪১ এএম, ০৩ অক্টোবর ২০২৩
মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, এম জহিরুল হক দোভাষ ও আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামান

ডলার সংকটে সরকারের কৃচ্ছ্রসাধনের মধ্যেই বিদেশ সফর করছেন চট্টগ্রামের তিন শীর্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তা। দুজন এরই মধ্যে দেশ ছেড়েছেন। আরেকজনের অনুমতি মিলেছে, যাবেন শিগগির। প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর সীমিত করার মধ্যেই চট্টগ্রামের তিন শীর্ষ কর্মকর্তার বিদেশ সফর নিয়ে বিভিন্ন মহলে উঠছে প্রশ্ন।

জানা যায়, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামান ফ্রান্সে ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান এম জহিরুল হক দোভাষ যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স ও জার্মানি সফরে গেছেন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী যাবেন ফিনল্যান্ডে। তাছাড়া চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম আছেন জাপানে।

আরও পড়ুন>>বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর নয়: অর্থমন্ত্রী

অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ‘পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের কতিপয় ব্যয় স্থগিত/হ্রাসকরণ ও বিদেশ ভ্রমণ সীমিতকরণ’ বিষয়ক এক পরিপত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ সীমিতকরণের পাশাপাশি কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের কথা বলা হলেও প্রকল্পের কাজে বিদেশ যাচ্ছেন কারিগরি জ্ঞান না থাকা কর্মকর্তারা।

‘সেমিনার-কর্মশালার নামে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর এক প্রকার প্রমোদভ্রমণ। তারা রাষ্ট্রের টাকায় বিদেশে বেড়াবেন, পরিবারের জন্য কিছু মার্কেটিং করবেন। এ সফরগুলো স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মতো কক্সবাজার, সাজেক কিংবা রাঙ্গামাটি ভ্রমণের মতোই। এটা রাষ্ট্রের টাকা নয়ছয় ছাড়া আর কিছু নয়’

স্থানীয় সরকার বিভাগের সিটি করপোরেশন-২ শাখার উপ-সচিব মাহবুবা আইরিন স্বাক্ষরিত ১৮ সেপ্টেম্বর তারিখের এক আদেশে চসিক মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ফিনল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান হাবা সার্ভিসের ‘আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়েস্ট স্টোরেজ সিস্টেম’ দেখতে ১০ দিনের সফরে ৩০ সেপ্টেম্বর ফিনল্যান্ড যাওয়ার কথা ছিল। তবে অন্য সফরসঙ্গীদের ভিসা না হওয়ায় মেয়রের সফর বিলম্বিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আজিজ আহমেদ। রোববার (১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় কথা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, মেয়র স্যারের ফিনল্যান্ড যাওয়ার কথা থাকলেও এখনো যাননি। সম্ভবত এ সফরে থাকা অন্য কর্মকর্তাদের ভিসা না হওয়ায় সফর বিলম্বিত হচ্ছে। কখন যাবেন সেটা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।’

স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রশাসন-১ শাখার উপ-সচিব পিন্টু বেপারি স্বাক্ষরিত ১১ সেপ্টেম্বরের এক আদেশে ‘ক্যাপাসিটি বিল্ডিং অব লোকাল গভর্নমেন্টস ফর ডেভেলপমেন্ট উইথ কমিউনিটি পারটিসিপেশন(বি)’ শীর্ষক কর্মশালায় অংশ নিতে ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১৩ অক্টোবরের মধ্যে জাপান সফরের অনুমতি পান চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। এরই মধ্যে তিনি জাপান সফরে চলে গেছেন।

আরও পড়ুন>>পাইপ দেশে আসার পর মান যাচাইয়ে বিদেশ সফর!

এ বিষয়ে চসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আজিজ আহমেদ জানান, প্রধান নির্বাহী স্যার কয়েকদিন আগে জাপান সফরে গেছেন। কোনদিন গেছেন সেটি নিশ্চিত করে না বলতে পারলেও ট্যুরটি ২০ দিনের বলে জানান তিনি।

‘সরকার বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধনে পদক্ষেপ নিয়েছে। শুনেছি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পরিপত্র জারি করা হয়েছে। এই মুহূর্তে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে একটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে’

এদিকে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন-৬ শাখার যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত গত ২৪ সেপ্টেম্বরের এক আদেশে স্ত্রী হোসনা জাহান খানমসহ সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২১ দিনের বিদেশ সফরের অনুমতি পান। তিনি যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স ও জার্মানি সফর করবেন বলে ওই আদেশে উল্লেখ করা।

এ বিষয়ে সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষের ব্যক্তিগত সহকারী মো. জমির উদ্দীন জাগো নিউজকে বলেন, ‘সিডিএ’র চেয়ারম্যান স্যার গত বুধবার বিদেশে গেছেন। কোন কোন দেশে যাবেন সেটা আমি জানি না। তিনি ১৫ অক্টোবর দেশে ফিরবেন।’

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন-২ শাখার উপ-সচিব ভাস্কর দেবনাথ বাপ্পী স্বাক্ষরিত ১৭ সেপ্টেম্বর তারিখের এক আদেশে সেমিনারে অংশ নিতে ১০ দিনের ছুটি অনুমোদনের তথ্য জানানো হয়। ওই আদেশে বলা হয়, ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে জেলা প্রশাসক আবুল বশর মোহাম্মদ ফখরুজ্জমানের ১০ দিনের এ ছুটি শুরু হবে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের স্টাফ অফিসার ও সহকারী কমিশনার প্লাবন কুমার বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, জেলা প্রশাসক স্যার ইন্দো প্যাসিফিক সেমিনারে আজ (রোববার) ফ্রান্সের উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে রওয়ানা হয়েছেন। সেমিনারটি ৭-৮ অক্টোবর শেষ হতে পারে।

এদিকে চট্টগ্রামের সরকারি তিন শীর্ষ কর্মকর্তার বিদেশ সফর নিয়ে বিভিন্ন মহলে হচ্ছে সমালোচনা। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবীর চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরে দেশের কোনো লাভ হবে না। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইউটিউব সার্স করে ভিডিও দেখে শেখা যায়। এজন্য বিদেশ যেতে হয় না। তাছাড়া মেয়র কত বছর দায়িত্বে থাকবেন? বিদেশ সফরের অভিজ্ঞতা তিনি কখন কোথায় কাজে লাগাবেন?

এই আইনজীবী বলেন, সেমিনার-কর্মশালার নামে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর এক প্রকার প্রমোদভ্রমণ। তারা রাষ্ট্রের টাকায় বিদেশে বেড়াবেন, পরিবারের জন্য কিছু মার্কেটিং করবেন। এ সফরগুলো স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মতো কক্সবাজার, সাজেক কিংবা রাঙ্গামাটি ভ্রমণের মতোই। এটা রাষ্ট্রের টাকা নয়ছয় ছাড়া আর কিছু নয়।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আলাউদ্দিন মজুমদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘দেশে বৈদেশিক মুদ্রার একটি সংকট চলছে। ডলারের দাম দিন দিন বাড়ছে। যার নেতিবাচক প্রভাব সামগ্রিক অর্থনীতিতে পড়ছে। সরকার বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধনে পদক্ষেপ নিয়েছে। শুনেছি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পরিপত্র জারি করা হয়েছে। এই মুহূর্তে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে একটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। চট্টগ্রামের যে শীর্ষ কর্তারা বিদেশ যাচ্ছেন তাদেরও সরকারি এই পরিপত্র মানার কথা। কিন্তু তা না করে এই সংকটকালীন তাদের বিদেশ সফর মোটেও কাম্য নয়।’

এমডিআইএইচ/এএসএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।