ডিএমপি কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নিলেন হাবিবুর রহমান
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৩৬তম কমিশনার হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান। তিনি বিদায়ী কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের স্থলাভিষিক্ত হলেন।
সুদীর্ঘ ৩২ বছর ৮ মাসের চাকরি জীবনের ইতি টেনে অবসরজনিত ছুটিতে যাচ্ছেন সদ্য বিদায়ী ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে দায়িত্ব হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে শেষ হয় খন্দকার গোলাম ফারুকের দীর্ঘ চাকরি জীবনের কর্মযজ্ঞ। এসময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান।
বিদায়ী ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুককে আনুষ্ঠানিকভাবে রীতি অনুযায়ী পুলিশ সদস্যরা ফুলের রশি দিয়ে গাড়ি টেনে বিদায় জানান। কমিশনারের বিদায়ের সময় ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা আবেগাপ্লুত হয়ে ওঠেন। এর আগে বিদায়ী কমিশনারকে বিদায়ী সালাম দেয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সুসজ্জিত একটি চৌকস দল।
এর আগে গত ২০ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপ-সচিব সিরাজাম মুনিরা স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমানকে ৩৬তম কমিশনার হিসেবে ডিএমপি কমিশনার হিসেবে পদায়ন করা হয়।
১৯৬৭ সালের ১ জানুযারি গোপালগঞ্জ জেলার চন্দ্রদিঘলিয়া গ্রামের আব্দুল আলী মোল্লা এবং মোসাম্মৎ রাবেয়া বেগম দম্পতির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন হাবিবুর রহমান। শৈশব থেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি খেলাধুলা, শিল্প-সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। এসএম মডেল হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক শেষ করে গোপালগঞ্জের সরকারি বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
১৭তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে ১৯৯৮ সালে কর্মজীবন শুরু করা হাবিবুর রহমান সারদাতে প্রশিক্ষণ নেন।
ডিএমপির ডিসি হেডকোয়ার্টার্স হিসেবে কর্মরত অবস্থায় নিজের মেধা ও নেতৃত্বগুণে তিনি সাধারণ মানুষ, সহকর্মী ও অধস্তন পুলিশ সদস্যদের কাছে হয়ে ওঠেন একজন সৃজনশীল, পজিটিভ ও মানবিক পুলিশি সেবার উজ্বল নক্ষত্র।
২০১২ সালের ১৪ নভেম্বর হাবিবুর রহমান ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সার্বিক আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে অভিনব সব কর্মকৌশল অবলম্বন করেন। চলমান অসঙ্গতি ও সংগঠিত অপরাধ দমন করার পাশাপাশি সম্ভাব্য অপরাধ প্রতিরোধ করার ওপর বেশি গুরুত্ব দেন। আইনের প্রতি সাধারণ মানুষের মধ্যে জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ সচেতনামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করেন। তার নেওয়া এসব উদ্যোগ আজও ধারাবাহিকভাবে চলমান।
হাবিবুর রহমান ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার থাকাকালীন বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডেকে এনে মাত্র একশ টাকায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি দিয়ে অনন্য নজির স্থাপন করেন। সেসময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে তিনি ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’ হিসেবে উচ্চ প্রশংসা পান।
২০১৬ সালে অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে পুলিশ সদর দপ্তরে সফলভাবে কাজ করেন তিনি। ২০১৮ সালে ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতি পান তিনি। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে ডিআইজি হিসেবে ঢাকা রেঞ্জে যোগদান করেন হাবিবুর রহমান। ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে করোনাকালে সমাজের নিম্নস্তরের ও পিছিয়ে থাকা মানুষদের সহায়তা, পুলিশ নিয়োগ ও পদায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা, জনগণকে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সম্পৃক্ত করা, মনিটরিং সেল স্থাপনসহ বিভিন্ন পর্যায়ে ঢাকা রেঞ্জ পুলিশকে অনন্য পর্যায়ে নিয়ে যান। যা অন্যান্য পুলিশ ইউনিটের জন্য অনুকরণীয় হিসেবে প্রকাশ পায়।
দীর্ঘ তিন বছর ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে তিনি অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ট্যুরিস্ট পুলিশ প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ট্যুরিস্ট স্পটে নিরাপত্তা ও নির্ভরতার প্রতীক হয়ে উঠে বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট পুলিশ।
পেশাগত জীবনে তার অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য যেমন লাভ করেছেন প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি, তেমনি অর্জন করেছেন রাষ্ট্রীয় পুরস্কার।
কর্মক্ষেত্রে ভালো কাজের স্বীকৃতি হিসেবে হাবিবুর রহমান তিনবার বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) ও দুইবার রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) পেয়েছেন। পুলিশের চাকরির পাশাপাশি লেখালেখিতেও সক্রিয় অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান।
টিটি/এমআইএইচএস/জেআইএম