শ ম রেজাউল
এখন হুট করে অনির্বাচিত কেউ ক্ষমতা দখল করতে পারে না
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে, এখন হুট করে অনির্বাচিত কেউ ক্ষমতা দখল করতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে মৎস্য অধিদপ্তরের আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত ই-সার্টিফিকেশন এবং ল্যাবরেটরি তথ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মৎস্য অধিদপ্তর এবং যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) অর্থায়নে পরিচালিত বাংলাদেশ ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন প্রকল্প যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
সমসাময়িক রাজনৈতিক প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন সবসময় সবার ভালো লাগে না। যখনই বাংলাদেশ উন্নয়নের অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলে, তখন একটি শ্রেণি আছে যারা ক্ষমতার হালুয়া রুটি ভাগ করার জন্য বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তখন তারা অগ্নিসন্ত্রাস, পেট্রল সন্ত্রাস করে অথবা অবৈধ উপায়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করা যায় কি না সে প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়। কিন্তু বাংলাদেশ এখন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। এখন হুট করে অনির্বাচিত কেউ ক্ষমতা দখল করতে পারে না। মানুষের ভোটে রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন, সে প্রক্রিয়া চলমান। এ প্রক্রিয়া যারা ধ্বংস করতে চায় তারা দেশের হোক বা দেশের বাইরের হোক তা বাংলাদেশের শান্তিকামী সাধারণ মানুষ কখনোই মেনে নেবে না।
মন্ত্রী বলেন, মৎস্য অধিদপ্তরের ই-সার্টিফিকেশন এবং ল্যাবরেটরি তথ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি বাংলাদেশের মৎস্য খাতে একটি নতুন অধ্যায়ের সংযোজন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের ঘোষণা দিয়েছেন। স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের জন্য আমাদের সব খাতকে স্মার্ট হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, দেশের মৎস্য খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ খাত থেকে খাবারের একটি বড় অংশের চাহিদা মেটে। মানুষের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর জন্য ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য যে উপাদান দরকার তার একটি অংশ মাছে রয়েছে। মাছ বিদেশে রপ্তানি করে ব্যাপক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হয় যা দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর পাশাপাশি বিশ্বের ৫২টি দেশের মাছ রপ্তানির মাধ্যমে রপ্তানিকৃত দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের চমৎকার উন্নয়ন হচ্ছে। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ খাতকে গতানুগতিক রেখে সনাতনী পদ্ধতিতে পরিচালনা করলে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যয় বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন>> আওয়ামী লীগ জানে কীভাবে সফল নির্বাচন করতে হয়: নাছিম
মন্ত্রী আরও বলেন, যেসব দেশের সঙ্গে আমাদের মাছ আমদানি ও রপ্তানির সম্পৃক্ততা রয়েছে তাদের চাহিদা পূরণ যথাযথভাবে করতে গেলে ই-সার্টিফিকেশনের স্মার্ট পদ্ধতি আমাদের জন্য খুবই সহায়ক হবে। এর মাধ্যমে মুহূর্তের ভেতর ঝামেলাহীনভাবে সেবা প্রদান করে গুণগত মান যেমন নিশ্চিত করা যাবে, অনুরূপভাবে সময়ের অপচয় রোধ করা সম্ভব হবে। এ পদ্ধতির মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্তরা ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবে। একই সঙ্গে এ খাতে দেশে ও দেশের বাইরে সংশ্লিষ্ট সবাইকে একই প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসা সম্ভব হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে শুধু উন্নয়নের রোল মডেলই নয়, বরং অনেক দেশের কাছে শিক্ষণীয়। সেজন্য দেশের প্রতিটি খাতকে স্মার্ট খাত হিসেবে গড়ে তুলতে হবে, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। এ লক্ষ্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের একটি অংশ হিসেবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং মৎস অধিদপ্তর কাজ করছে।
মন্ত্রী যোগ করেন, দেশের মানুষের প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটিয়ে মাছ বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে যা দেশের জিডিপিতে অবদান রাখছে। এজন্য রপ্তানি সংশ্লিষ্ট অটোমেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মনে রাখতে হবে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক মৎস্য সেক্টর তৈরির জন্য নতুন অধ্যায়ের শুভ সূচনা হলো। এক্ষেত্রে মৎস্য উৎপাদন, বিপণন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের সঙ্গে সম্পৃক্তদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ। সম্মানীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের এগ্রিকালচারাল অ্যাটাচে সারাহ গিলেস্কি। অনুষ্ঠানের কো-চেয়ার ছিলেন ইউএসডিএ’র অর্থায়নে পরিচালিত বাংলাদেশ ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মাইকেল জে. পার।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও মৎস্য অধিদপ্তরের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্যের আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়া সহজীকরণের লক্ষ্যে মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের অর্থায়নে পরিচালিত বাংলাদেশ ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন প্রকল্পের কারিগরি সহায়তায় ই-সার্টিফিকেশন সিস্টেম ও ল্যাবরেটরি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে মৎস্য ও মৎস্যজাত উপকরণের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সহজ করতে ২০টি লাইসেন্স ও সার্টিফিকেট স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রদান করা হবে। ফলে মৎস্য অধিদপ্তরের মাননিয়ন্ত্রণ পরীক্ষাগারের কর্মপদ্ধতি এবং প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে। পাশাপাশি খাদ্যের গুণগত মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। এই উদ্যোগ মৎস্য ও মৎস্যজাত উপকরণের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ব্যয় সংকোচন এবং স্বচ্ছতা ও গতি বৃদ্ধিতে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে।
আইএইচআর/ইএ/জেআইএম