যোগাযোগের সব মাধ্যমে যুক্ত থাকবে শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল
# এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দুইটি র্যাম্প যুক্ত হয়েছে।
# মেট্রোরেলের কাওলা স্টেশন থেকে ২০০ মিটার টানেল যাবে থার্ড টার্মিনালে।
# গাজীপুর থেকে বিআরটি যুক্ত হচ্ছে শাহজালাল বিমানবন্দরে।
এভিয়েশন খাতে অপার সম্ভাবনা নিয়ে তৈরি হচ্ছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল। এ টার্মিনালের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হয়েছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। ভবিষ্যতে মেট্রোরেল এবং বাস র্যাপিড ট্রানজিটসহ (বিআরটি) যোগাযোগের সব মাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত থাকবে এই টার্মিনাল। ফলে কোনো ধরনের ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়াই ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সহজেই বিমানবন্দরে আসা-যাওয়া করতে পারবেন যাত্রীরা।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিমানবন্দরের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হতে হবে বহুমুখী। ফলে যোগাযোগের বিভিন্ন প্রকল্পের সঙ্গে আন্তঃসংযোগ করা গেলেই থার্ড টার্মিনালের প্রকৃত সুফল মিলবে। এর মাধ্যমে কমবে বিমানবন্দরগামী যাত্রীদের ভোগান্তি। সড়ক থেকে বিমানবন্দরে বা বিমানবন্দর থেকে সড়কে ঢোকার মুখে পড়তে হবে না যানজটে। যথাসময়ে ফ্লাইট ধরতে পারবেন যাত্রীরা। এছাড়া যারা বিদেশ থেকে ভারী লাগেজ নিয়ে ফেরেন, তাদেরও কমবে বিড়ম্বনা।
আরও পড়ুন: থার্ড টার্মিনাল চালু হলে শাহজালালে লাগেজ হয়রানি বন্ধ হবে
বর্তমানে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল-১ ও টার্মিনাল-২ এ প্রতিদিন বিদেশি ৩৩টি এয়ারলাইন্সের ১২০ থেকে ১৩০টি ফ্লাইট ওঠা-নামা করে। এসব ফ্লাইটে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করেন ২০ হাজারের বেশি যাত্রী। যদিও দেশের প্রধান বিমানবন্দরের সক্ষমতার চেয়ে যাত্রীর চাপ অতিরিক্ত হওয়ায় প্রায়ই ঘটে শিডিউল বিপর্যয়। আবার ট্যাক্সিওয়েতে সিগন্যালের অপেক্ষায় উড়োজাহাজের দাঁড়িয়ে থাকা তো নিত্যদিনের ঘটনা। এখন থার্ড টার্মিনাল চালু হলে যাত্রী সেবার সক্ষমতা বাড়বে ৬০ হাজারের বেশি। ফ্লাইট বাড়বে বর্তমানের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। বাড়বে যাত্রীর চাপ। ফলে যাত্রীদের বাড়তি চাপ সামলাতে বিমানবন্দরের সঙ্গে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল বা বিআরটি আন্তঃসংযোগের বিকল্প নেই। যোগাযোগের এসব মাধ্যম ব্যবহারের ফলে যাত্রীদের ভোগান্তি লাঘবের সঙ্গে চলাচল সহজ হবে।
বিমানবন্দরের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হতে হবে বহুমুখী। ফলে যোগাযোগের বিভিন্ন প্রকল্পের সঙ্গে আন্তঃসংযোগ করা গেলেই থার্ড টার্মিনালের প্রকৃত সুফল মিলবে। এর মাধ্যমে কমবে বিমানবন্দরগামী যাত্রীদের ভোগান্তি।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঢাকা লিমিটেড এক্সপ্রেসওয়েকে থার্ড টার্মিনালের সঙ্গে সংযুক্ত করতে যথেষ্ট কাজ করা হয়েছে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী বিআরটি ও মেট্রোরেলও যুক্ত হওয়ার কথা। আশা করি এর মাধ্যমে কমবে যাত্রী বিড়ম্বনা। কমবে ফ্লাইট মিস করার ঘটনাও। তবে ঠিক কতটা সুফল মিলবে, প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ হলে বোঝা যাবে। কারণ, বিদেশগামী যাত্রীদের বেশিরভাগই প্রবাসী শ্রমিক। তারা এসব সুবিধা কতটা ব্যবহার করতে পারেন- সেটাই এখন দেখার বিষয়।’
আরও পড়ুন: টার্মিনাল এলাকায় যানজট, লাগেজ মাথায় নিয়ে হাঁটছেন বিদেশগামীরা
শাহজালাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ২ সেপ্টেম্বর ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করা হয়। বিআরটি উদ্বোধন করা হবে অক্টোবরে। বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধনও একই মাসে (৭ অক্টোবর)। যদিও তা যাত্রীরা ব্যবহার করতে পারবেন ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে। আর ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে উদ্বোধন হতে পারে এমআরটি প্রকল্প। যোগাযোগের এই সবকয়টি প্রকল্পই বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালে যুক্ত হবে।
এর ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে সরাসরি চলে আসা যাবে বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালে। এ লক্ষ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালে নামার জন্য রাখা হচ্ছে আলাদা লেন। একই পথ ব্যবহার করা যাবে বিমানবন্দর থেকে বের হতেও।
আরও পড়ুন: এক্সপ্রেসওয়ে-মেট্রোতে সরাসরি যুক্ত হচ্ছে তৃতীয় টার্মিনাল
এছাড়া, মেট্রোরেল-১ প্রকল্প কমলাপুর থেকে শুরু হয়ে রাজারবাগ-মালিবাগ-রামপুরা, যমুনা ফিউচার পার্ক, খিলক্ষেত হয়ে বিমানবন্দর সংলগ্ন কাওলা গিয়ে শেষ হবে। এর পুরোটাই পাতালরেল। কাওলা স্টেশন থেকে ২০০ মিটার দীর্ঘ টানেলের কাজ চলমান, যা যুক্ত হবে বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালে। একই সঙ্গে চলছে বিমানবন্দর থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার সুড়ঙ্গ নির্মাণের কাজ। আবার বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) ব্যবহার করে মাত্র ৩০ মিনিটে গাজীপুর থেকে আসা যাবে শাহজালাল বিমানবন্দরে।
সরেজমিনে দেখা যায়, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দুইটি র্যাম্প বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের আগমনী ও বহির্গমনে যুক্ত হয়েছে। এর মাধ্যমে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে বিদেশগামী যাত্রীরা রাজধানীর যানজট উপেক্ষা করে বিমানবন্দরে প্রবেশ করতে পারবেন। একই ভাবে বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে ভোগান্তি ছাড়ায় সহজেই যেতে পারবেন নিজ নিজ গন্তব্যে। এছাড়া সড়ক থেকেও সরাসরি থার্ড টার্মিনালে ঢোকার সুযোগ রয়েছে।
কতটা সুফল মিলবে, প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ হলে বোঝা যাবে। কারণ, বিদেশগামী যাত্রীদের বেশিরভাগই প্রবাসী শ্রমিক। তারা এসব সুবিধা কতটা ব্যবহার করতে পারেন- সেটাই এখন দেখার বিষয়।
আরও পড়ুন: থার্ড টার্মিনালের পরিচালন-রক্ষণাবেক্ষণ পিপিপিতে
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের আরেক র্যাম্প নেমেছে বলাকা ভবনের পাশে। এই র্যাম্প ব্যবহার করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে বিমানবন্দরের প্রথম ও দ্বিতীয় টার্মিনালে যাওয়া যাচ্ছে। আবার এই দুই টার্মিনাল থেকে বেরিয়ে কাওলা এলাকা থেকে আরেক র্যাম্পের মাধ্যমে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে পারছেন যাত্রীরা।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘যাত্রীদের সুবিধার্থে থার্ড টার্মিনালের সঙ্গে সব ধরনের সংযোগ রাখছি। বিদেশি যাত্রীরা যাতে বিমানবন্দর থেকে দ্রুত সময়ে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে চড়তে পারবেন। এর ফলে যাত্রীদের ফ্লাইট মিস করার শঙ্কা কমে যাবে।’
এমএমএ/কেএসআর/জিকেএস