তৃতীয় টার্মিনাল পুরোপুরি চালু হলে চাপ বাড়বে বিমানবন্দর সড়কে

তৌহিদুজ্জামান তন্ময়
তৌহিদুজ্জামান তন্ময় তৌহিদুজ্জামান তন্ময় , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:২৯ এএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল/ ছবি: মাহবুব আলম

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রথম ও দ্বিতীয় টার্মিনালে এখন প্রতিদিন ১২০-১৩০টি উড়োজাহাজ উড্ডয়ন-অবতরণ করে। প্রতিদিন ২০ হাজার যাত্রী দুটি টার্মিনাল ব্যবহার করেন। বর্তমানে বছরে প্রায় ৮০ লাখ যাত্রীর সেবা দেওয়ার সুযোগ আছে। তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেবে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এই অতিরিক্ত যাত্রীর চাপের প্রভাব পড়বে বিমানবন্দর সড়কেও।

আগামী ৭ অক্টোবর আংশিকভাবে চালু হচ্ছে তৃতীয় টার্মিনাল। উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই টার্মিনাল দেশের অ্যাভিয়েশন খাতে উন্মোচন করবে নতুন দ্বার। তবে সব সুযোগ-সুবিধা পুরোপুরি উপভোগ করতে হলে যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হবে ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ।

বেবিচক বলছে, এই টার্মিনালে থাকবে নতুন প্রযুক্তির ছোঁয়া। তৃতীয় টার্মিনাল পুরোদমে চালু হলে প্রতিদিন ৩০ হাজারের বেশি যাত্রী শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করবেন। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল ও বিআরটি ব্যবহার করে খুব সহজেই টার্মিনালে আসা-যাওয়া করতে পারবেন যাত্রীরা। অত্যাধুনিক এ টার্মিনালে থাকবে যাত্রীদের জন্য নানা সুযোগ-সুবিধা, যা অ্যাভিয়েশন খাতের চিত্রই পাল্টে দেবে।

আরও পড়ুন>> বিমানবন্দর সড়কে অসহনীয় যানজট, ফ্লাইট মিস করছেন যাত্রীরা

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপির) ট্রাফিক বিভাগ বলছে, সাধারণত বিমানবন্দর সড়কে প্রতিদিন গাড়ির চাপ থাকে। এরপরেও ট্রাফিক সদস্যরা নিখুঁতভাবে দায়িত্ব পালন করে সড়ক স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেন। তৃতীয় টার্মিনাল চালুর ফলে প্রতিদিন ৩০ হাজারের বেশি যাত্রী আসা-যাওয়া করলে তাদের সঙ্গে একটি করে গাড়ি যুক্ত হলে বিমানবন্দর সড়কে চাপ স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে। তবে স্মার্ট ট্রাফিক ব্যবস্থার পরিকল্পনা করে গাড়ির চাপ কমানো হবে। এক্ষেত্রে ট্রাফিক সদস্যদের জনবলও বাড়াতে হবে।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের আয়তন দুই লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার। ক্যাপাসিটি প্রতি বছর এক কোটি ২০ লাখ যাত্রী। টানেলসহ বহুতলবিশিষ্ট কার পার্কিং ৫৪ হাজার বর্গমিটার। ফায়ার ফাইটিং স্টেশন ইক্যুইপমেন্টসহ চার হাজার বর্গমিটার। ইমপোর্ট কার্গো টার্মিনাল ২৭ হাজার বর্গমিটার। এক্সপোর্ট কার্গো টার্মিনাল ৩৬ হাজার বর্গমিটার। পার্কিং অ্যাপ্রোন ৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটার। দুটি র‌্যাপিড এক্সিট ট্যাক্সিওয়ে ৪১ হাজার ৫০০ বর্গমিটার। কানেকটিং টেক্সিওয়ে ৬৬ হাজার ৫০০ বর্গমিটার।

আরও পড়ুন>> বিমানবন্দর-উত্তরা সড়কের ‘মুশকিল আসান’ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

এছাড়া ল্যান্ডসাইডে এলিভেটেড রোডসহ বিমানবন্দর সংলগ্ন সড়ক, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে কানেকটিভিটি স্থাপন, যাত্রী ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ইক্যুইপমেন্ট সংস্থাপনসহ বিমানবন্দরের অন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ হচ্ছে।

তৃতীয় টার্মিনালের নিচতলায় থাকবে ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং সিস্টেম। দ্বিতীয় তলায় থাকবে বহির্গমন লাউঞ্জ, ক্যান্টিন ও বোর্ডিং ব্রিজ। তৃতীয় তলায় রাখা হচ্ছে আগমনী ও বহির্গামী যাত্রীদের ইমিগ্রেশন, চেক-ইন কাউন্টার, সিকিউরিটি সিস্টেম। বহির্গামী যাত্রীদের জন্য ছয়টি সারি এবং ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার থাকবে। তৃতীয় টার্মিনালে ৫৯টি ম্যানুয়াল ইমিগ্রেশন কাউন্টার এবং ১০টি অটো কাউন্টার। এছাড়া থাকবে সুপরিসর ডিউটি ফ্রি শপ এবং বহির্গমন লাউঞ্জ, ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ। বর্তমান টার্মিনালে রয়েছে ৮টি লাগেজ বেল্ট। তৃতীয় টার্মিনালে আগমনী যাত্রীদের জন্য ১৬টি লাগেজ বেল্ট থাকবে।

আরও পড়ুন>> টার্মিনাল এলাকায় যানজট, লাগেজ মাথায় নিয়ে হাঁটছেন বিদেশগামীরা

বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের জন্য কাস্টমের একটি হল ও ছয়টি চ্যানেল থাকবে, যার আয়তন ১৩শ বর্গমিটার। ভিআইপি যাত্রীদের জন্য রাখা হচ্ছে বিশেষ ব্যবস্থা। তৃতীয় টার্মিনালের দক্ষিণ প্রান্তে ৩ হাজার ৬৫০ বর্গমিটার জায়গাজুড়ে ভিভিআইপি এবং ভিআইপি যাত্রীদের জন্য আলাদা বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। ট্রানজিট যাত্রীদের জন্য বিশাল লাউঞ্জ করা হচ্ছে নতুন টার্মিনালে। ৪০ হাজার বর্গমিটার আয়তনের প্রধান বহির্গমন লাউঞ্জ ব্যবহার করবেন ট্রানজিট যাত্রীরা। তবে পুরোনো দুটি টার্মিনালের সঙ্গে নতুন টার্মিনালের সংযোগ থাকবে না এখন। প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে করিডোর নির্মাণ হবে। তৃতীয় টার্মিনালের পূর্ব অংশে ১ হাজার ৪৪টি গাড়ি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন বহুতল কার পার্কিং তৈরি করা হয়েছে।

বেবিচক সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পটি হাতে নেয় সরকার। তবে নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপানি সহযোগিতা সংস্থা জাইকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। বাকি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। এই নির্মাণকাজ করছে জাপানের মিতসুবিশি ও ফুজিতা এবং দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং।

তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এ কে এম মাকসুদুল ইসলাম বলেন, তৃতীয় টার্মিনালের সঙ্গে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল, বিআরটির সংযোগ রয়েছে। এর মধ্যে উদ্বোধনের পরপরই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে টার্মিনালে আসা-যাওয়া করতে পারবেন যাত্রীরা। পরবর্তীসময়ে মেট্রোরেলের কাওলা স্টেশনের সঙ্গে টার্মিনালের টালেন নির্মাণ করা হবে। এখন টার্মিনাল অংশে টানেলের মুখ তৈরি করা আছে। একইভাবে বিআরটির সঙ্গে টার্মিনালের র‌্যাম্প সংযোগ দেওয়া হবে। ফলে ঢাকার বাইরে থেকে খুব সহজেই টার্মিনালে ঢুকতে এবং বের হতে পারবেন যাত্রীরা।

ট্রাফিক উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) নাবিদ কামাল শৈবাল জাগো নিউজকে বলেন, তৃতীয় টার্মিনাল সম্পূর্ণভাবে চালু হওয়ার পরে বোঝা যাবে বিমানবন্দর সড়কে কী পরিমাণ চাপ বাড়বে। তবে চাপ বাড়লেও ট্রাফিক সদস্যরা সড়ক স্বাভাবিক রাখতে কাজ করবেন।

টিটি/এএসএ/এএসএম

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।