উন্নয়ন হলেও তার সুফল দেশের মানুষ পায়নি: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৫৯ পিএম, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, উন্নয়ন হলেও তার সুফল দেশের মানুষ পায়নি। কেননা দেশে অলিগার্কের উদ্ভব হয়েছে। অলিগার্ক তারাই যারা অত্যন্ত বিত্তবান মানুষ, একই সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাবান। এই গোষ্ঠীর উদ্ভব এখন যেভাবে দেখছি, বিগত বছরে সেটা চোখে পড়েনি। এই বৈষম্যমূলক পরিস্থিতি কেবল আয়ের ক্ষেত্রে বা সম্পদের ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয়নি। এটা ক্রমান্বয়ে আমাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যখাতে বিস্তার লাভ করেছে। একটা দেশে গণতান্ত্রিক জবাবদিহি যদি না থাকে তাহলে সরকার তার আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী কাজ করতে পারে না।

সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের কনভেনশন হলে ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন আখ্যান ও সমান্তরাল বাস্তবতা: পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ভাবনা’ শীর্ষক বইয়ের জনপ্রকাশ অনুষ্ঠান ও সংলাপে এ কথা বলেন তিনি। ‘এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম’ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান।

অনুষ্ঠানে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, উন্নয়ন হলেও সবাই এর ভাগীদার হতে পারেনি। কোনো দেশে বৈষম্য যদি বহুদিন ধরে চলে তখন সেই সব দেশে শুধু উন্নয়নই না, সামাজিক কাঠামো দুর্বল হয়ে যায়। সেখানে যে সমস্ত দ্বন্দ্ব-সংগ্রামের সৃষ্টি হয় তা মোকাবিলা করার প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি সেই দেশের থাকে না।

এদিকে দেশের বিভিন্ন স্তরের মানুষ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ করে দেশে সাত ধরনের উপলব্ধি বা সমস্যার কথা জানতে পেরেছে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম। যার মধ্যে রয়েছে শোভন কর্মপরিবেশের অভাব, নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি, অবকাঠামোতে আঞ্চলিক বৈষম্য, সরকারি প্রতিষ্ঠানে সেবা না পাওয়া, জলবায়ু সমস্য, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ, দুর্নীতি ও গণতান্ত্রিক জবাবদিহির অভাব।

আরও পড়ুন: টাকা পাচারকারীরা আমেরিকা-ইংল্যান্ডকে বাসযোগ্য করার চেষ্টা করছে

এই সাত সমস্যার কথা তুলে ধরে সংস্থাটির আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, শোভন কর্মসংস্থান না থাকায় শিক্ষিত বেকার বেড়েছে। এর ফলে অনেকেই কম মজুরিতে কাজ করছেন। অবকাঠামো উন্নয়নেও বৈষম্য রয়েছে। এলাকাভিত্তিক বৈষম্য রয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়ন একপেশে হওয়ার কারণে বাংলাদেশের সমস্ত অঞ্চল এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারছে না।

তিনি বলেন, ছোট দেশে আমাদের আঞ্চলিক বৈষম্য বেড়ে চলেছে। এছাড়া এই সময়ে নারীর প্রতি সহিংসতা কোনো অংশে কমেনি বরং বেড়েছে। এখন বাংলাদেশের পরিবেশ বিপর্যয় কোনো আঞ্চলিক সমস্যা না, এটা একটা জাতীয় সমস্যা। বাংলাদেশে এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে পরিবেশ প্রতিকূল অবস্থায় নেই।

তিনি আরও বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা খুবই দুর্বল। দেশের সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের বড় ধরনের অবক্ষয় হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড গানবাজনা, নৃত্য- এসব ক্ষেত্রে যে অগ্রগামিতা ছিল সেটা বহুখানি অবদমন হয়ে গেছে। মধ্যবিত্ত শ্রেণি দুর্বল হয়ে গেছে। দুর্নীতি ব্যাপকভাবে বিস্তার করেছে।

এসব সমস্যার সমাধানে গণতান্ত্রিক পুনরুদ্ধারসহ ১১টি সুপারিশ করে তিনি বলেন, নাগরিক সমাজে কাজের জায়গা আগের চেয়ে অনেক বেশি সংকুচিত হয়ে গেছে। এর ফলে স্থানীয় পর্যায়ে সম্পদের সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না। একটা গণতান্ত্রিক জবাবদিহি যদি না থাকে তাহলে সরকার তার আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী কাজ করতে পারে না। সুষম ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নতি নিশ্চিত করতে হলে গণতান্ত্রিক পুনরুদ্ধার জরুরি।

অনুষ্ঠানে আরও কথা বলেন মানবধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, বিচারপতি মো. আবদুল মতিন, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর প্রমুখ।

এসএম/বিএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।