জলাবদ্ধতায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট
অন্যদের বাঁচাতে গিয়ে পরপারে অনিক
ভারী বৃষ্টির কারণে তলিয়ে যায় রাস্তা। তবে পানি ঠেলেই পথচারীরা গন্তব্যের দিকে যাচ্ছিলেন। এসময় হঠাৎ রাস্তার পানিতে পড়ে যান শিশুসহ চারজন। তাদের উদ্ধারে এগিয়ে যান অটোরিকশাচালক অনিক। তখনো তিনি বুঝতে পারেননি যারা পড়ে গেছেন তারা বিদ্যুতায়িত হয়েছেন। অনিক এগিয়ে তাদের উদ্ধারে গেলে তিনিও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। এরমধ্যে সাত মাসের শিশু হোসাইন অলৌকিকভাবে বেঁচে গেলেও তার বাবা-মা ও বোন মারা যান। সেই সঙ্গে অনিকেরও প্রাণ নিভে যায়। এভাবে এক রাতেই শেষ হয়ে যায় চার চারটি প্রাণ।
বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে মিরপুরে কমার্স কলেজ সংলগ্ন ঝিলপাড় বস্তির সামনের সড়কে ঘটে মর্মান্তিক এ ঘটনা। স্থানীয়রা বলছেন, পরিবারটিকে বাঁচাতে গিয়ে অনিকও বিদ্যুতায়িত হয়েছিলেন। এমন মৃত্যুতে শোকাচ্ছন্ন ওই এলাকা। একই সঙ্গে ক্ষোভে ফুঁসছেন ঝিলপাড় বস্তির বাসিন্দারা।
আরও পড়ুন: অলৌকিকভাবে বেঁচে আছে মিরপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট শিশু হোসাইন
নিহত অনিকের বন্ধু আব্দুর রহমান বলেন, ঘটনার সময় ওই নারীর হাতে একটা আর কোলে একটা বাচ্চা ছিল। তারা যখন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়, তখন ওদের বাঁচাতে গিয়ে অনিকও বিদ্যুতায়িত হন।
নিহত একই পরিবারের তিন সদস্য হলেন মিজান হাওলাদার (৩৫) ও তার স্ত্রী মুক্তা (২৫) এবং মেয়ে লিমা (৭)। মিজান মূলত ঝিলপাড় বস্তি এলাকায় পরিবার নিয়ে শ্বশুরবাড়ি এসেছিলেন। রাতের খাবার শেষে পরিবার নিয়ে মিরপুর চিড়িয়াখানা রোডের বাসায় ফিরছিলেন তিনি। শ্বশুরবাড়ি থেকে বের হলেও পরিবার নিয়ে আর নিজের বাসায় ফেরা হয়নি মিজানের।
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে চারজনকে পানিতে পড়তে দেখে তাদের উদ্ধারে বিপরীত পাশের রাস্তা থেকে ছুটে যান অনিক। সেখানে তিনি হোসাইনকে পানি থেকে তুলে দিতে পারলেও আরেক শিশু লিমাকে তুলতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান।
আরও পড়ুন: মিরপুরে বৃষ্টির পানিতে বিদ্যুতায়িত হয়ে ৪ জনের মৃত্যু
নিহত মুক্তার বাবা রিকশাচালক সানোয়ার শেখ জাগো নিউজকে বলেন, ঘটনার পর শিশু হোসাইনকে প্রথমে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন।
সানোয়ার শেখ জানান, এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার পর সকালে শিশুটিকে বাসায় নিয়ে আসা হয়। সে এখন ভালো আছে।
মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, বৃষ্টিতে রাস্তায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বজ্রপাত হলে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে যায় পানিতে। এতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পাঁচজন গুরুতর আহত হন। তাদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা চারজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে ঢাকায় বজ্রপাতসহ প্রবল বৃষ্টি হয়। এতে রাজধানীর প্রধান সড়কসহ অলিগলি পানিতে তলিয়ে যায়। বেশির ভাগ জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে যান চলাচল ব্যাহত হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ঢাকায় ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।
এসএম/জেডএইচ/এএসএম