‘অথৈ পানিতে’ ডুবেছে ঢাকার সড়ক, তীব্র যানজট
বৃহস্পতিবার দিনভর রাজধানীতে ছিল বৃষ্টির আবহ। সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি। টানা কয়েক ঘণ্টার অভাবনীয় ভারী বর্ষণে ডুবে গেছে নগরীর অধিকাংশ সড়ক। এতে ভোগান্তি বেড়েছে সাধারণ মানুষের। বৃষ্টিতে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে গোটা ঢাকা।
ডুবেছে শহরের প্রায় সকল সড়কসহ অলিগলি। বেশিরভাগ এলাকার ফুটপাতও ছিল পানির নিচে। ফলে সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দেখা দেয় ভয়াবহ যানজট। দীর্ঘ সময় ধরে একই স্থানে আটকে থাকে বিপুল সংখ্যক যানবাহন।
সরেজমিনে দেখা যায়, টানা প্রায় তিন-চার ঘণ্টার বর্ষণে রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ফার্মগেট, ধানমন্ডি, কলাবাগান, নীলক্ষেত, কাঁটাবন, হাতিরপুল, কাঁঠালবাগান, আজিমপুর ও পলাশীসহ অনেক এলাকার রাস্তা পানিতে তলিয়ে যায়। এসব এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যেতে অনেকের দীর্ঘক্ষণ গণপরিহবনের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
আরও পড়ুন: মিরপুরে বৃষ্টির পানিতে বিদ্যুতায়িত হয়ে ৪ জনের মৃত্যু
বৃহস্পতিবার সারাদিনই ঢাকার আকাশ ছিল চঞ্চল। কখনো রোদ, কখনো মেঘ। এর মধ্যে দুপুর আড়াইটার দিকে বেশ খানিকটা বৃষ্টি বাগড়া দেয় বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে। সেই ম্যাচ আবার ফিরেছিল মাঠে। তবে সন্ধ্যায় শুরু হয়ে রাতেও না থামলে সে বৃষ্টি ম্যাচ ভাসিয়ে নিয়ে যায়। বিপাকে ফেলে যায় ঢাকার অফিস-ফিরতি কর্মজীবীসহ শ্রমজীবীদেরও।
বৃষ্টির কারণে একদিকে সড়কে পর্যাপ্ত গাড়ি নেই। অন্যদিকে যেগুলো আছে সেগুলোও ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। অফিস শেষে রাত ১২টায় বাসায় ফিরছিলেন সংবাদকর্মী আল আমিন রাজু। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, কারওয়ান বাজার থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত যেতে তার আধাঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে। এরপর ফার্মগেট নেমে মোহাম্মদপুরে রিকশায় আসতে সময় লেগেছে এক ঘণ্টার মতো। প্রায় সব সড়কেই হাঁটু থেক কোমর পানি পর্যন্ত পার হতে হয়েছে।
আরেক সংবাদকর্মী বিল্লাল হোসেন জাগো নিউজকে জানান, পল্টনে অফিস শেষ করে রাত ১২টার দিকে তিনি মিরপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হন বাসে। রাত দেড়টা পর্যন্ত ফার্মগেট এসে পৌঁছেছেন। এরপর গাড়ি আর নড়াচড়া করেনি। অনেকেই হেঁটে গৌন্তব্যে ছুটতে দেখে তিনিও হাঁটা শুরু করেন।
প্রতিবছরই রাজধানীবাসীর জলে আবদ্ধ হওয়ার অভিজ্ঞতা ঋদ্ধ হতে থাকলেও সেই থেকে মুক্তির পথ দেখাতে পারেনি দুই সিটি করপোরেশন। এ বছরও ভারী বৃষ্টিতে কিছু সময়ের জন্য হলেও ডুবে গেছে ঢাকা।
আরও পড়ুন: টানা বর্ষণে ঢাবির দুই হলে জলাবদ্ধতা
স্বাভাবিকভাবেই এমন বৃষ্টি পরিণত হয়েছে ফেসবুকেও। তাতে ঘুরেফিরে একটি কথা বারবারই এসেছে- ঢাকায় এমন বৃষ্টি কখনো দেখিনি। এর সঙ্গে কেউ কেউ দিয়েছেন নিজ নিজ এলাকার ছবি। কেউ কেউ যুক্ত করেছেন ভিডিও। যাতে দেখা যাচ্ছে থৈ থৈ করছে ঢাকার রাস্তার পানি।
এদিকে বৃষ্টির মধ্যে মিরপুরে বিদ্যুৎস্পষ্ট হয়ে একই পরিবারের তিনজনসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে মিরপুরে কমার্স কলেজ সংলগ্ন ঝিলপাড় বস্তির বিপরীত পাশের রাস্তায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে তিনজন একই পরিবারের। তারা হলেন, মো. মিজান (৩০), তার স্ত্রী মুক্তা বেগম (২৫) ও মেয়ে লিমা (৭)। এই দম্পতির ছয়মাস বয়সী ছেলে হোসাইনকে গুরুতর আহত অবস্থায় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন জাগো নিউজকে জানান, এই পরিবারকে বাঁচাতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মোহাম্মদ অনিক (২০) নামে আরেক তরুণের মৃত্যু হয়েছে। তারা সবাই ঝিলপাড় বস্তির বাসিন্দা। আহত শিশু হোসাইনকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়াবিদদের ভাষায় এটি অতিভারী বর্ষণ। সাগরে লঘুচাপের প্রভাবে এই বৃষ্টি হচ্ছে জানিয়ে আগামী দুদিন এমন বর্ষণের আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সন্ধ্যার পর ঢাকা ছাড়াও রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে বৃষ্টি হয়েছে বলে আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: ৩ বিভাগে অতিভারী বৃষ্টির সতর্কতা
আগামীকালের পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের বেশির ভাগ জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। এ সময় বজ্রপাতও হতে পারে। সেই সঙ্গে রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
টিটি/এমআরএম