৬০ বিঘার বেশি জমির মালিকানা নয়, যা বললো মন্ত্রণালয়

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:২৭ পিএম, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে ‘ভূমি সংস্কার আইন, ২০২৩’ পাস হয়েছে। এ আইন অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ৬০ বিঘা কৃষিজমির মালিক হতে পারবেন।

বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে পাস হওয়া ভূমি অপরাধ ও প্রতিকার আইন, ভূমি সংস্কার আইন নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ভূমি মন্ত্রণালয়। তবে সংবাদ সম্মেলনের বেশিরভাগ অংশ জুড়ে ছিল ৬০ বিঘার বেশি কৃষিজমির মালিক না হতে পারার বিধানের বিষয়টি।

সংবাদ সম্মেলনে ভূমিমন্ত্রী মো. সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আপাতত এ আইনে কোনো ব্যক্তি ৬০ বিঘার বেশি জমি রাখতে পারবেন না। কোনো কোম্পানি অনুমতি নিয়ে ৫০০-১০০০ বিঘা রাখতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে আমরা দেখবো কী কারণে তারা নিতে চায়। তবে ব্যক্তি ৬০ বিঘার বেশি জমির মালিক হতে পারবে না।

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আমলে এটি ছিল ১০০ বিঘা। এরশাদ সাহেব এসে ৬০ বিঘা করেছেন।’

মন্ত্রী আরও বলেন, উত্তরাধিকার সূত্রে কোনো ব্যক্তির অর্জিত জমি ৬০ বিঘার বেশি হলে ভূমির মালিক তার পছন্দ অনুযায়ী ৬০ বিঘা জমি রাখতে পারবেন। বাকি জমি সরকার বিধি দিয়ে নির্ধারিত পদ্ধতিতে ক্ষতিপূরণ প্রদান করে খাস করতে পারবে।

আরও পড়ুন: ৬০ বিঘার বেশি কৃষিজমির মালিকানা নয়, বিধান রেখে বিল পাস

এ সময় ভূমি সচিব মো. খলিলুর রহমান জানান, আইনের অধীনে একটি বিধিমালা করা হবে। আইনের অস্পষ্টতাগুলো সেখানে দূর হবে। বিধিমালা অনুযায়ী আইনটি বাস্তবায়ন করা হবে।

ব্যক্তির সর্বোচ্চ ৬০ বিঘা জমির মালিকানা নিয়ে যা আছে আইনে

ভূমি সংস্কার আইনের ৪ ধারায় ‘কৃষিভূমি অর্জনের সীমাবদ্ধতা’ উপ-শিরোনামে বলা হয়েছে- (১) ৬০ প্রমিত বিঘার বেশি বেশি কৃষি ভূমির মালিক বা তার পরিবার হস্তান্তর, উত্তরাধিকার, দান বা অন্য কোনো উপায়ে নতুন কোনো কৃষি ভূমি অর্জন করতে পারবেন না।

(২) তবে নিন্মোক্ত ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করা যাবে-
(ক) কোনো সমবায় সমিতির সকল সদস্য তাহাদের ভূমির মালিকানা সমিতির অনুকূলে হস্তান্তর করে নিজেরা চাষাবাদ করলে;
(খ) চা, কফি, রাবার বা অন্য কোনো ফলের বাগানের জন্য ব্যবহৃত ভূমি;
(গ) কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠানে এর নিজস্ব কারখানায় ব্যবহৃত কাঁচামাল উৎপাদনের উদ্দেশ্যে ভূমি ব্যবহার করলে;
(ঘ) কোনো কাজের জন্য জনস্বার্থে সরকার কর্তৃক প্রয়োজনীয় বিবেচিত এমন কোনো ভূমি;
(ঙ) কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের শতভাগ রপ্তানিমুখী কৃষিপণ্য বা কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের জন্য অথবা শতভাগ রপ্তানিমুখী বিশেষায়িত শিল্পের জন্য সরকারের অনুমোদন নিয়ে ব্যবহৃত ভূমি;
(চ) কোনো সংস্থা কর্তৃক জনকল্যাণার্থে সরকারের অনুমোদনক্রমে ব্যবহৃত ভূমি;
(ছ) কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের শিল্প-কারখানা স্থাপন বা সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে সরকারের অনুমোদনে ব্যবহৃত ভূমি; এবং
(জ) ওয়াকফ, দেবোত্তর বা ধর্মীয় ট্রাস্টের ক্ষেত্রে এর মালিকানাধীন ভূমির সম্পূর্ণ আয় ধর্মীয় বা দাতব্য কাজে ব্যয় হলে। তবে শর্ত থাকে যে, ধর্মীয় ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে যদি ভূমির আয় আংশিক ধর্মীয় বা দাতব্য কাজে এবং আংশিক কোনো ব্যক্তির স্বার্থে ব্যয় হয়ে থাকে, তবে ভূমির যে অংশের আয় কেবল ধর্মীয় বা দাতব্য কাজে ব্যয় হয় সেই পরিমাণ ভূমির ক্ষেত্রে বিধান প্রযোজ্য হবে না।

(৩) ৬০ বিঘার কম কৃষি ভূমির মালিক বা তার পরিবার যে কোনো উপায়ে নতুন কৃষি ভূমি অর্জন করতে পারবেন, তবে এভাবে অর্জিত নুতন ভূমি তার মালিকানায় থাকা কৃষি ভূমিসহ একত্রে ৬০ বিঘার বেশি হবে না।

(৪) যদি কোনো ভূমির মালিক এই ধারার বিধান লঙ্ঘন করে ক্রয়সূত্রে কোনো নতুন কৃষি ভূমি অর্জন করেন, তাহলে যে পরিমাণ ভূমি ৬০ বিঘার অতিরিক্ত হবে তা সরকারের অনুকূলে বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে সমর্পিত হইবে এবং উক্ত সমর্পিত ভূমির মূল্য বাবদ কোনো ক্ষতিপূরণ প্রদেয় হইবে না। তবে শর্ত থাকে যে, উত্তরাধিকার, দান বা উইলের মাধ্যমে অর্জিত ভূমির ক্ষেত্রে এ বিধান প্রযোজ্য হবে না।

আরও পড়ুন: জমি দখলে থাকলেই মালিক নয়, থাকতে হবে দলিল

(৫) উত্তরাধিকার সূত্রে অর্জিত ভূমি ৬০ বিঘার বেশি হলে ভূমির মালিক তার পছন্দ অনুযায়ী ৬০ বিঘা ভূমি রাখতে পারবে এবং অবশিষ্ট ভূমি সরকার বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে ক্ষতিপূরণ প্রদানপূর্বক খাস করতে পারবে।

পাস হওয়া ‘ভূমি অপরাধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩’এর বিষয়ে ভূমিমন্ত্রী বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে দেশবাসী এ আইনটির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। মাঝপথে অনেকে একটু হতাশ হয়ে গিয়েছিলেন যে এটা হয়তো আর আলোর মুখ দেখবে না। আল্লাহর অশেষ রহমত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসিকতার কারণে আমরা জাতিকে একটি সুন্দর বিল উপহার দিতে সক্ষম হয়েছি। এটা খুবই প্রয়োজন ছিল। এটা আমাদের বিশাল অর্জন।’

‘এটা একটা বিশাল জিনিস ‌এবং এটা অনেক জটিল। এই জটিলে হাত দেওয়াটা একটা সাহসিকতার বিষয় ছিল এবং শুরুতে আমাকে অনেকেই বলেছিল যে এটতে হাত দেওয়াটা কি উচিত হবে কি না এবং হাত দিলে হাত পুড়েও যেতে পারে। কারণ এটা খুব সেনসিটিভ। এখানে আইনের অনেক বিষয় আছে। তাকে বললাম, আমারতো সিনসিয়ারিটি আছে এবং প্রধানমন্ত্রীও চান এদেশের মানুষকে সেবা দিতে। আমরা সেবক হিসেবে থাকতে চাই। সুতরাং উনার যেহেতু সাপোর্ট আছে, আমার মনে হয় আল্লাহর রহমতে আমি যদি চেষ্টা করি, সেটা সম্ভব হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যখন আইনটি মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করবো, তখন যদি অভিজ্ঞতার আলোকে আইনটি সংশোধন করার প্রয়োজন হয়, এটার প্রয়োজন হবে, সেটা আমরা করবো।’

আরএমএম/জেএইচ/বিএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।