ডিএমপি কমিশনার
‘অনুমতি ছাড়া সানজিদা মিডিয়াতে স্টেটমেন্ট দিতে পারেন না’
ডিএমপির ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) সানজিদা আফরিন অনুমতি ছাড়া মিডিয়াতে স্টেটমেন্ট (বিবৃতি) দিতে পারেন না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাতে ডিএমপি সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার এ কথা বলেন।
এর আগে এদিন পুলিশের সাময়িক বরখাস্ত এডিসি হারুন অর রশিদ, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দুই নেতাকে নির্যাতন এবং রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল হক মামুনের মধ্যকার ঘটনার বিষয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেন এডিসি সানজিদা আফরিন।
এডিসি সানজিদা আফরিনের গণমাধ্যমের বক্তব্যের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনারকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সানজিদার সঙ্গে আমি কথা বলিনি। সানজিদা এ ধরনের কোনো স্টেটমেন্ট দিয়ে ঠিক করেননি। কারণ কমিশনারের অনুমতি ছাড়া তিনি এভাবে স্টেটমেন্ট দিতে পারেন না।
আরও পড়ুন>> আমার স্বামীই এডিসি হারুন স্যারকে আগে মারধর করেন: সানজিদা
তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে আমাদের কাছে মনে হয়েছে এডিসি হারুন এবং ইন্সপেক্টর মোস্তফা দুজনই বাড়াবাড়ি করেছেন। আইনের ব্যত্যয় ঘটেছে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা এরই মধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছি।
একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পরে আমাদের অফিসারদের কার কতটুকু দোষ সেই অনুসারে আমরা বিভাগীয় ব্যবস্থা নেবো। অন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার থাকলে পুলিশ সদর দপ্তর বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সুপারিশসহ প্রেরণ করবো। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত কিছু বলতে পারবো না।
ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বক্তব্যের বিষয়ে কমিশনার বলেন, হারুন এই কথা কোথায় পেয়েছেন এটা হারুন বলতে পারবেন।
আরও পড়ুন>> এডিসি হারুনকে রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়েছে
এর আগে সেদিনের ঘটনা নিয়ে সানজিদা আফরিন চ্যানেল আইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আমি বেশ কয়েকদিন ধরে সিভিয়ার পেইনে (তীব্র ব্যথায়) ভুগছিলাম। সেদিন পেইনটা একটু বেশিই হচ্ছিল। তাই তখন আমার একজন ডাক্তার দরকার ছিল। যেহেতু ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল স্যারের (এডিসি হারুন) জুরিসডিকশনের (আওতা) মধ্যে পড়ে তাই ডাক্তারের সিরিয়াল পাওয়ার জন্য আমি স্যারের হেল্প চেয়েছিলাম।
‘স্যারকে জানালে তিনি আমাকে বলেছিলেন, ঠিক আছে আমি আশপাশে আছি। আমি এসে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে দিচ্ছি। এরপর স্যার (এডিসি হারুন) এলেন। আসার পর একটা ডাক্তার ম্যানেজ হলো। এরপর ডাক্তার কিছু টেস্ট দিলেন। আমি ব্লাড টেস্টের জন্য স্যাম্পল দিলাম। ইকো টেস্ট আর ইসিজি করানো হলো।’
সানজিদা আরও বলেন, যে রুমে ইটিটি করানো হয় ঘটনার সময় আমি সেই রুমে ছিলাম। ইটিটি করানোর ১৫-২০ মিনিট পর আমি বাইরে হট্টগোলের শব্দ শুনি। শুনতে পাই স্যার (এডিসি হারুন) চিৎকার করে বলছেন- ভাই আপনি আমার গায়ে হাত তুললেন কেন? আপনি তো আমার গায়ে হাত তুলতে পারেন না। আমার প্রথমে ধারণা হয়েছিল যে হয়তো অন্য কারও সঙ্গে ঝামেলা। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পর আমি দেখতে পাই আমার হাজবেন্ড (আজিজুল হক মামুন), উনি আসলে ওখানে কী করছিলেন, কেন গিয়েছিলেন আমি জানি না। ওনাকে টোটালি আউট অব মাইন্ড লাগছিল (মানসিকভাবে স্থির ছিলেন না) এবং খুবই উত্তেজিত অবস্থায় ছিলেন। ওনার সঙ্গে আরও কয়েকজন ছেলে ছিল, আমি তাদের চিনি না। তারা স্যারকে (এডিসি হারুন) মারতে মারতে ইটিটি রুমে নিয়ে এলেন।
আরও পড়ুন>> এডিসি হারুনের বিরুদ্ধে যত ‘পেটানোর অভিযোগ’
‘ওই সময় হারুন স্যার নিজের সেফটির (নিরাপত্তার) জন্য আমি যেখানে দাঁড়ানো ছিলাম সেই রুমের দিকে দৌড়ে এসে দাঁড়ালেন। ইটিটি রুমে এতলোক ঢোকাতে তখন সেখানে একটা অকওয়ার্ড সিচুয়েশন (বিব্রতকর পরিস্থিতি) তৈরি হয়। কারণ ইটিটি রুমে রেস্ট্রিকশন থাকে। তখন আমি শাউট (চিৎকার) করছিলাম। কারণ এই রুমে কোনো ছেলে ঢোকার কথা না।’
এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে ডিবি কম্পাউন্ডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ দাবি করেন, এডিসি হারুন অর রশিদের ওপর প্রথমে হামলা চালিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হক মামুন।
ডিবিপ্রধান বলেন, উনি (এপিএস মামুন) একজন সরকারি কর্মকর্তা। পুলিশের ওপর প্রথম হামলাটা তিনিই করেছিলেন। তিনি ইচ্ছা করলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারতেন। অথবা তারও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছিল তাদের অবহিত করতে পারতেন। কিন্তু উনি তা না করে হাসপাতালের ভেতরে অসুস্থ মানুষের সামনে একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে ধাওয়া করেন। তার চশমা ভেঙে ফেলেন, তার ওপর আঘাত করেন। এটা সঠিক করেছেন কি না তা আমি জানি না, তবে এর তদন্ত হওয়া উচিত।
টিটি/ইএ