গাইবান্ধা-৫
অভিযোগমুক্ত হলেন ‘জাল ভোট’ না ঠেকানো প্রিসাইডিং অফিসার
গাইবান্ধা-৫ (ফুলছড়ি-সাঘাটা) আসনের উপ-নির্বাচনে ‘ভোটারদের বাধা’ দিয়ে গোপনকক্ষে ঢুকে পোলিং এজেন্ট ও বহিরাগতদের ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে প্রিসাইডিং অফিসার সাজু মিয়ার বিরুদ্ধে। ২০ ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে এ নিয়ে বিভাগীয় মামলা হয়। প্রায় এক বছর ধরে এ মামলা তদন্ত করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত এবং শৃঙ্খলা শাখা। এতে নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ‘সন্দেহাতীতভাবে’ প্রমাণিত হয়নি। এজন্য তাকে নির্বাচনে ‘দায়িত্ব অবহেলা’র মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
আরও পড়ুন: গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচন বন্ধ: সিইসি
অব্যাহতি পাওয়া সাজু মিয়া ঘটনার সময় গাইবান্ধার সাঘাট উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে কর্মরত ছিলেন। ২০২২ সালের ১২ অক্টোবর প্রথম দফায় অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে তিনি গটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে (৭২ নম্বর) প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন। ব্যাপক অনিয়ম-কারচুপির অভিযোগে ওই নির্বাচন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বর্তমানে সাজু মিয়া বগুড়ার সোনাতলা উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে কর্মরত।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদের সই করা আদেশে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ১০ সেপ্টেম্বর আদেশে সই করেন সচিব। তবে মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) তা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ হয়।
আরও পড়ুন: গাইবান্ধা-৫ উপ-নির্বাচনে জয়ী নৌকার রিপন
আদেশে বলা হয়, ২০২২ সালের ১২ অক্টোবর জাতীয় সংসদের গাইবান্ধা-৫ শূন্য আসনে উপ-নির্বাচন হয়। তৎকালীন সাঘাটা উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইনস্ট্রাক্টর মো. সাজু মিয়া গাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্বে ছিলেন। দায়িত্ব পালনকালে ভোটকেন্দ্রের পোলিং এজেন্ট, বহিরাগত ব্যক্তিরা গোপনকক্ষে প্রবেশ করে ভোটারকে ভোট দিতে না দিয়ে নিজেরাই ভোট দেন। ভোটকেন্দ্রে সংঘটিত এ অনিয়মের বিরুদ্ধে তিনি কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় সেখানে নির্বাচন বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তার দায়িত্ব পালনে এমন অবহেলায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর বিধি ৩(খ) অনুযায়ী- অসদাচরণের পর্যায়ভুক্ত অপরাধ বিধায় ২০২৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়।
এতে আরও বলা হয়, পরে তাকে জবাব দেওয়ার জন্য নোটিশ দেওয়া হয়। তিনি লিখিত জবাব দেন এবং শুনানিতে অংশ নেন। তার জবাব ও শুনানিতে দেওয়া বক্তব্য সন্তোষজনক বিবেচিত না হওয়ায় বিভাগীয় মামলাটি তদন্তের জন্য কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। তদন্তকালে সরকারপক্ষ, অভিযুক্ত, সাক্ষীদের জবানবন্দি ও কাগজপত্র পর্যালোচনায় তার বিরুদ্ধে আনীত ‘দায়িত্ব পালনে অবহেলা’র অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়নি—মর্মে মতামত দেন তদন্ত কর্মকর্তা। এজন্য তাকে বিভাগীয় মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে আদেশ জারি করা হলো।
আরও পড়ুন: ঢাকায় বসে ইসি কীভাবে গাইবান্ধার ভোট বন্ধ করলো, প্রশ্ন হানিফের
জানতে চাইলে সাজু মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আমার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করেছিল। যা তদন্ত হয়েছে। আমি শুনানিতে আমার বক্তব্য জানিয়েছিলাম। তারা সন্তুষ্ট হয়ে অভিযোগ নিষ্পত্তি করেছেন। তাতে আমি মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছি। এ নিয়ে আর কথা বলা সমীচীন হবে না।
২০২২ সালে গাইবান্ধা-৫ আসনের সংসদ সদস্যের মৃত্যুতে এ আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। ওই বছরের ১২ অক্টোবর সেখানে অনুষ্ঠিত হয় উপ-নির্বাচন। ইভিএমে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে অনিয়ম-কারচুপির অভিযোগ ওঠে। কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা থাকায় তা ঢাকার নির্বাচন ভবনে বসেই দেখেন সিইসিসহ নির্বাচন কমিশনাররা। একের পর এক কেন্দ্রে কারচুপির ঘটনা দেখে নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করে ইসি।
আরও পড়ুন: স্বচক্ষে আইন ভঙ্গ করে গোপন কক্ষে ভোট দিতে দেখেছি: সিইসি
ওইদিন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচনে অনিয়ম হচ্ছিল, আমরা নির্বাচন বন্ধ করে দিয়েছি। কী কারণে বা কাদের কারণে ভোটটা বন্ধ করতে হলো- সে ব্যাপারে আমরা সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি। এটা এখন বলা যাবে না, আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং তদন্ত করে বের করা হবে।’
চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি পুনরায় গাইবান্ধা-৫ আসনে উপ-নির্বাচনের আয়োজন করে ইসি। এ নির্বাচনে ৭৮ হাজার ২৮৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপন।
এএএইচ/জেডএইচ/এমএস