হারানো জৌলুশ ফিরে পাচ্ছে লালকুঠি
ব্রিটিশ আমলে নির্মিত পুরান ঢাকার নর্থব্রুক হল তথা লালকুঠির জৌলুশ হারিয়েছে অনেক আগেই। ঐতিহ্য আর সৌন্দর্যের ধারক গাঢ় লাল রঙও হয়ে গেছে মলিন। পোকামাকড় বাস শুরু করেছে। কিছু কিছু জায়গা ভাঙা। জানালার ফাঁকে পাখির বাসা। ভবনের ভেতর-বাইরে খসে পড়ছে পলেস্তারা। এবার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে বুড়িগঙ্গার পাড়ের এই কুঠিকে সংস্কার করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে ফিরে পাবে শতবর্ষী রূপ। ফিরে পাবে হারানো জৌলুশ।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনের দেওয়াল ঘষামাজা করে লাল ও সাদা রং দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া ভেতরে সেন্টার রিং করে ছাদ মেরামত করা হচ্ছে। এতে রাতদিন কাজ করছেন ৪০ শ্রমিক।
শ্রমিকরা জানান, দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে নতুন করে লালকুঠির সংস্কার করা হচ্ছে। যারা কাজ করছেন তারা সাধারণত দেশের ঐতিহ্যবাহী ভবনগুলোর সংস্কারকাজ করেন। ভবনটি ঠিক ১০০ বছর আগে যে রূপে ছিল সেই রূপ দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
আরও পড়ুন: ঢাকার ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে কার্যক্রম শুরু: তাপস
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) সূত্রে জানা যায়, বিশ্বব্যাংকের ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থায়নে লালকুঠি সংস্কার চলছে। এর তদারকি করছে ডিএসসিসি। প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, লালকুঠি দেখতে আগে অনেক দর্শনার্থী এলেও এখন আর কেউ আসেন না। এটি যদি সংস্কার করা হয়, তাহলে লালকুঠি তার শত বছরের ঐতিহ্য ফিরে পাবে। এতে দর্শনার্থীদেরও আগমন হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, মূলত লালকুঠির আগের যে সৌন্দর্য ছিল সেটি ফিরিয়ে আনার জন্য সংস্কার করা হচ্ছে। পুরোনো জৌলুশ ফিরিয়ে আনতে লাল রঙের পাশাপাশি ভবনের ভেতরে লাইব্রেরি, ডিজিটাল আর্কাইভ, বুক ক্যাফে, লালকুঠির ঐতিহাসিক ছবি প্রদর্শনী গ্যালারিসহ আরও অনেক কিছু থাকবে। লালকুঠির সামনের দিকে থাকবে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উৎসব পালনের স্থান ও চা-কফি শপ।
আরও পড়ুন: লালকুঠি-রূপলাল হাউজ অংশ থেকে লঞ্চ টার্মিনাল সরাতে বললেন তাপস
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ঐতিহ্যের ধারক-বাহক এবং সংস্কৃতি চর্চার বিশাল কেন্দ্র ছিল লালকুঠি। বুড়িগঙ্গা নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছিল এটি। ১৮৭৯ সালের শেষ দিকে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়। ১৮৮০ সালে তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশের গভর্নর জর্জ ব্যরিং নর্থব্রুক এ ভবন উদ্বোধন করেন। তার নাম অনুসারেই এর নাম রাখা হয় ‘নর্থব্রুক হল’। পরে এটি ‘লালকুঠি’ নামে পরিচিতি লাভ করে।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯২৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় আসার পর নিজ ইচ্ছায়ই নর্থব্রুক হলে (লালকুঠি) ওঠেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন দেশবরেণ্য ব্যক্তিরা। সেদিন জমকালো অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সংবর্ধনা জানানো হয়েছিল।
রায়হান আহমেদ/জেডএইচ/এমএস