নিজ গ্রামে পিটিআই
প্রতিমন্ত্রী বললেন, ‘ভাই-ভাতিজা দিয়ে জমি কিনিনি’
কুড়িগ্রামের রৌমারীতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের নিজ গ্রামে নতুন একটি প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (পিটিআই) স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যদিও এ জেলায় বর্তমানে একটি পিটিআই রয়েছে। এ অবস্থায় দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। আর সেই প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেছেন, আমি মাঝে মধ্যে শুনি অনেকেই ভাই-ভাতিজা দিয়ে জমি কেনেন। এরকম রেকর্ড সেখানে আমার নেই।
প্রতিমন্ত্রী জানান, পিটিআইয়ের জন্য নির্ধারিত জায়গায় তার নিজের কোনো জমি নেই। জায়গাটা উনার পৈতৃক বাড়ির সামনে পড়েছে। তবে গ্রাম সম্পর্কে আত্মীয়স্বজনের জমিজমা সেখানে আছে। সরকার এ জমির জন্য যে দাম দিতে চাচ্ছে, প্রকৃত বাজারমূল্য তার থেকে বেশি।
আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।
সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে প্রতিমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়- গণমাধ্যমে আমরা দেখেছি আপনার নিজ গ্রামে আপনার জমিতে নতুন একটা পিটিআই করা হচ্ছে এবং কুড়িগ্রামে যে পিটিআই আছে সেটা বন্ধ। বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় পিটিআই থাকার পরও রৌমারীতে আরেকটি পিটিআইয়ের প্রয়োজনীয়তা কেন পড়লো? যদি করতেই হয় সেটি আপনার নিজ গ্রামে আপনার সম্পত্তির ওপরে কেন? আপনি কি এটা থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় জন্য করছেন?
এর উত্তরে জাকির হোসেন বলেন, আমি কুড়িগ্রাম জেলার ১৬টি নদনদী বিধৌত এলাকায় মানুষ। আমি আজ পর্যন্ত আমার জেলা শহরের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ স্থাপন করতে পারিনি। আমার একটি ঐতিহাসিক এলাকা। যখন সারাদেশ পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর অত্যাচারে জর্জরিত তখন আমার এলাকা ছিল একমাত্র স্বাধীন মুক্ত অঞ্চল।
‘এখানে মুজিবনগর সরকারের যে প্রশাসন ছিল সেটি চালু ছিল আমার এলাকায়। ৯ মাস আমরা ফ্ল্যাগ (পতাকা) নামাইনি, বাংলাদেশের ফ্ল্যাগ। আমার এখানে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং সেন্টার ছিল। যে জায়গায় ট্রেনিং করা হয়েছে সেই জায়গা এখনো আমরা সংরক্ষণ করে রেখেছি।’
রৌমারী থেকে বাঙালিরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখান থেকে বাঙালিরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করে এটি প্রমাণিত ছিল। তারপরও ওইখানে আমরা স্বাধীনতার পক্ষের কোনো প্রতিনিধি দিতে পারিনি। স্বাধীনতার পরাজিতরা যারা ক্ষমতায় এসেছিল আমাদের এলাকার কোনো মূল্যায়ন করেনি। মুজিবনগর সরকার গঠন করার জন্য মেহেরপুরকে জেলা ঘোষণা করা হয়েছে, কিন্তু আমার ওই অঞ্চল অবহেলিতই রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আমরা দুদিনে ঢাকায় আসতাম। প্রধানমন্ত্রী আমাদের দুটা ব্রিজ করে দেওয়ায় আমরা সাড়ে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টায় ঢাকা আসতে পারি। কুড়িগ্রাম যেতে আমাদের লাগে তিন ঘণ্টা। মাঝখানে বিশাল ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা নদী পাড়ি দিয়ে আমাদের যেতে হয়। রৌমারী, রাজীবপুর এবং গাইবান্ধার কিছু অংশ ভৌগোলিকভাবে আমার সঙ্গে জড়িত।
এসময় পিটিআই স্থাপনের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ অঞ্চলের শিক্ষকদের যখন প্রশিক্ষণ দিতে হয় তখন কুড়িগ্রামে গিয়ে থাকতে হয়। ওই এক মাস দুই মাস তিন মাসের জন্য বাসা ভাড়া নিতে হয়। এই চরাঞ্চলগুলোর শিক্ষকদের যাতে আমরা সুন্দরভাবে প্রশিক্ষণ দিতে পারি এজন্য আমরা এটা করেছি।
তিনি বলেন, বলা হচ্ছে আমার স্বার্থ আছে কি না। হ্যাঁ, আমার স্বার্থ আছে। আমার স্বার্থ হলো চরাঞ্চলের শিক্ষকদের কষ্ট করে যাতে কুড়িগ্রাম, ময়মনসিংহে প্রশিক্ষণ নিতে না যেতে হয়। যাতে এই মুক্তাঞ্চল (মুক্তিযুদ্ধের সময়কার মুক্তাঞ্চল) শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করতে পারি, এটি আমার স্বার্থ।
জমির বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখানে আমার পরিবারের কোনো জমি নেই। এটা আমার গ্রামে। তাও ওই গ্রামে এখন বসবাস করি না। আমাদের সমস্যাটা কেমন? আমাদের পশ্চিম সাইটটা নদী। আমরা শহরটাকে আস্তে আস্তে পূর্ব দিকে নিতে চাচ্ছি। নিতে গিয়ে আমার বাড়ির সামনে পড়ে গেছে সেই জায়গাটি (পিটিআইয়ের জন্য নির্ধারিত)। সেই জায়গায় আমার কোনো সম্পত্তি নেই। তবে গ্রাম সম্পর্কে আত্মীয়-স্বজনের জমিজমা আছে।
তিনি বলেন, সেখানে আমি কোনো জমি কিনি নাই, এ রকম রেকর্ডও নাই। যেমন আমি মাঝেমধ্যে শুনি অনেকেই ভাই-ভাতিজা দিয়ে জমি কেনে। এ রকম রেকর্ডও আমার নেই। এগুলো নিয়ে মানুষ নানা রকম কথাবার্তা বলতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আমার এখানে আরেকটি সমস্যা। জমির যে রেট (অধিগ্রহণের হার) দেওয়া হয়েছে সেখানে, বাস্তবে তার চেয়ে তিন গুণ বেশি দাম। ধরেন তিন লাখ টাকা যদি পাই, আমার ওইখানে এক শতক জায়গার দাম পাঁচ লাখ টাকা। আমি তো লোকজনের কাছ থেকে সেই জায়গা নিতে পারছি না (পিটিআইয়ের জন্য)। আপনারা বলছেন, লাভ করবো, লস হচ্ছে। সরকার যে টাকা দিতে চাচ্ছে, তার চেয়ে বাজারদর বেশি। এ জন্য দীর্ঘ দিন ধরে আমিই সাফার করছি।
প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, আরেকটা কথা বলেছেন কুড়িগ্রামে পিটিআই চালু আছে। অবস্থা খারাপ এরই মধ্যে আমরা একটা প্রায় আটতলা ভবন করতেছি। সুন্দর করার জন্য নানা ধরনের কার্যক্রম আমরা নিয়েছি।
এ সময় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, বর্তমানে সারা দেশে ৬৭টি পিটিআই আছে। একাধিক জেলায় দুটি করে পিটিআই রয়েছে।
এমএএস/জেডএইচ/জেআইএম