বরাদ্দের টাকা খরচ না করে আরও ২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা আবদার
বরাদ্দের টাকা খরচ না করে একই খাতে আরও আড়াই কোটি টাকার বেশি নতুন করে চাওয়া হয়েছে একটি প্রকল্পে। পাঁচ বছরে সেমিনার, কর্মশালা, স্টেকহোল্ডার, উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও উন্নয়ন মেলা খাতে তিন কোটি ২৭ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। জুন ২০২৩ পর্যন্ত এ খাতে ব্যয় দেখানো হয়েছে এক কোটি ১২ লাখ টাকা। অবশিষ্ট আছে দুই কোটি টাকার বেশি। প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাবে একই খাতে আরও দুই কোটি ৬৬ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০২৪ সাল পর্যন্ত মেয়াদি প্রকল্পে এই ব্যয়ের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন।
পরিকল্পনা কমিশন জানায়, নেদারল্যান্ডসের আদলে গ্রহণ করা শতবর্ষী ডেল্টাপ্ল্যান তথা ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০-কে দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের চাবিকাঠি হিসেবে দেখছে সরকার। এটি বাস্তবায়নে ৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন। প্রকল্পের বিভিন্ন রূপরেখায় ব্যয় দেখানো হয়েছে। চাওয়া হয়েছে বাড়তি টাকা। অথচ আগের বরাদ্দ টাকাই খরচ করতে পারেনি।
আরও পড়ুন>> মাছ চাষ শিখতে বিদেশ ভ্রমণ, ৭ কোটি টাকার ব্যয়প্রস্তাব
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, দীর্ঘ সময়ে নানা অনুষ্ঠান ও উন্নয়ন মেলায় তিন কোটি ২৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দিলেও খরচ হয়নি। প্রকল্পের মেয়াদ বেশি নেই। অথচ আরও বাড়তি বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে। বাড়তি বরাদ্দ চাওয়ার বিষয়ে জানতে চেয়েছে কমিশন।
প্রকল্পের আওতায় এরই মধ্যে কতজনকে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে তার বিস্তারিত বিবরণ নেই। পরিকল্পনার ক্রয় পদ্ধতি হিসেবে সিঙ্গেল সোর্স সিলেকশন (এসএসএস) ছিল। কোন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে, কত ব্যাচ, কতজনকে, কী বিষয়ে, কোন দেশে প্রশিক্ষণ নেওয়া হয়েছে এবং এখন কত ব্যাচের কতজনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে তার বিস্তারিত বিবরণ প্রকল্পে থাকা প্রয়োজন বলে মনে করে পরিকল্পনা কমিশন।
নানা খাতে প্রকল্পের বাড়তি বরাদ্দ চাওয়া প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও পাওয়া যায়নি সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মো. কাউসার আহাম্মদকে।
আরও পড়ুন>> ‘আপ্যায়ন’ ব্যয়ে আরও ৬৫ লাখ টাকা আবদার
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জাগো নিউজকে বলেন, নানা পরিকল্পনার কথা মাথায় রেখে একটা ডেল্টাপ্ল্যান প্রকল্প চলমান। কীভাবে উন্নয়নকে আরও সুসংহত করা যায় ও নদীমাত্রিক দেশে পানির সর্বোত্তম ব্যবহার করা যায় সে পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।
উন্নয়ন মেলা বাবদ বাড়তি বরাদ্দ চাওয়া প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, আগের টাকা খরচ হয়নি এটা ভালো। সরকারের টাকা সরকারের কোষাগারে আসবে। যদি বেহিসাবি খরচ হয় এটা মঙ্গলজনক নয়। অনেক প্রকল্পে দেখা যায় অযথা ঘোরাঘুরি করে টাকা নষ্ট করা হয়। একই খাতে টাকা বরাদ্দ থাকা অবস্থায় নতুন বরাদ্দ চাওয়াও মঙ্গলজনক নয়।
প্রকল্পের মূল অনুমোদিত ব্যয় ৬৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। মোট ৫২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করে প্রথম সংশোধনী অনুমোদিত হয়। বর্তমানে মোট ৬৫ কোটি ৭১ কোটি টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করে দ্বিতীয় সংশোধিত আরটিএপিপি প্রস্তাব হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ অক্টোবর ২০১৮ থেকে জুন ২০২৩ পর্যন্ত চলমান ছিল। বর্তমানে প্রকল্পের মেয়াদ ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত বাড়িয়ে ১২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের প্রথম সংশোধনী আরটিএপিপিতে কনসালটেন্সি
অ্যাডভাইজরি সার্ভিস খাতে মোট ২৬ কোটি ৯০ লাখ টাকার সংস্থান অনুমোদিত হয়। জুন ২০২৩ সাল পর্যন্ত এ খাতে ব্যয় দেখানো হয়েছে ২৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধিত প্রস্তাবে এ খাতে তিন কোটি ১৮ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ৩০ কোটি ৮ লাখ টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন>> সরকারি কর্মকর্তাদের ফিটনেস ঠিক রাখতে ভবনের ছাদে হবে সুইমিংপুল
অনুমোদিত প্রথম সংশোধনী প্রকল্পে অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ খাতে দুই কোটি ৯৯ লাখ টাকার সংস্থান আছে। যার মাধ্যমে ৩৯টি ব্যাচে ৯৫৫ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা ছিল। বর্তমানে ক্রমপুঞ্জিত অগ্রগতি জুন ২০২৩ সাল পর্যন্ত এ খাতে এক কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। এ পর্যন্ত কতটি ব্যাচে কতজনকে কী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং প্রস্তাবিত দ্বিতীয় সংশোধিত আরটিএপিপি অনুমোদিত হলে আর কতজনকে কী বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে তার বিস্তারিত বিবরণ থাকা প্রয়োজন বলে জানায় কমিশন।
সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) জানায়, বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করেছে। ভৌগোলিক অবস্থা হিসেবে বাংলাদেশ তিনটি বড় নদী গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা অববাহিকায় অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপগুলোর মধ্যে অন্যতম। ব-দ্বীপের গঠন, নদীর গতিপথ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক বিপর্যয় জলোচ্ছ্বাস, লবণাক্ততা, বন্যা, নদীভাঙন, খরা, ভূমিকম্প এবং ঘূর্ণিঝড় এদেশের নিয়মিত চিত্র, যা খাদ্যনিরাপত্তা ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
এমওএস/এএসএ/জিকেএস