ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
নির্মাণব্যয় ৮ হাজার ৯৪০ কোটি, সময় লাগলো ১৩ বছর
নগরীর যানজট নিরসনে জাদুরকাঠি হিসেবে কাজ করবে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) প্রকল্প। প্রকল্পের চুক্তি সই হয় ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি এবং প্রকল্পের সমাপ্তির মেয়াদ জুন ২০২৪ সাল নাগাদ। ফলে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে লাগছে ১৩ বছর। কিন্তু প্রকল্প শুরুর প্রথম সাত বছরে ১০ শতাংশও ছিল না কাজের অগ্রগতি। তবে থাইল্যান্ডভিত্তিক ইটাল-থাই ও চীনের সিনোহাইড্রোম এবং সিএসআই শেয়ার ভাগাভাগি করে এটি বাস্তবায়ন করায় মূলত গতি পেয়েছে প্রকল্পের।
১৩ বছরে প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। প্রকৃত ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা। নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধির প্রধান কারণ মূলত নকশা পরিবর্তন। প্রথম নকশায় হাতিরঝিলের ওপর দিয়েই এটি পরিকল্পনা করা হয়েছিল। পরে হাতিরঝিলের পাশ দিয়ে নকশা করা হয়। এতে খরচ বেড়ে যায়। এছাড়া পান্থকুঞ্জসহ কয়েকটি স্থানে র্যাম্প ও পিলার নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) আপত্তির কারণে এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ থমকে যায়। কাজ থমকে থাকলেও মেইনটেনেন্স খরচ অব্যাহত থাকে।
আরও পড়ুন>> প্রস্তুত ১৩ র্যাম্প, খুলছে না বনানী-মহাখালী
প্রাক্কলিত ব্যয়ের ২৭ শতাংশ বহন করছে বাংলাদেশ সরকার। এর পরিমাণ ২ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা। এছাড়া ২০১৯ সালের ৩০ মার্চ বিনিয়োগকারী আর্থিক সংস্থা চায়না এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ৪৬১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাংক অব চায়নার (আইসিবিসি) সঙ্গে ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারসহ মোট ৮৬১ মিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি সই করা হয়। এরমধ্যে মোট ৩৮২ দশমিক ৭১ মিলিয়ন ইউএস ডলার ছাড় হয়েছে।
সেতু বিভাগ জানায়, উড়াল সড়কের রুট হচ্ছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা, কুড়িল, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত।
আরও পড়ুন >> চলতি বছরেই চালু হচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
অর্থনৈতিক প্রভাব
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা শহরের যানজট অনেকাংশে কমে যাবে এবং ভ্রমণের সময় ও খরচ কমবে। সার্বিকভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজীকরণ, আধুনিকায়ন হলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জিডিপিতে (মোট দেশজ উৎপাদন) ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান
ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (এফডিইই) কোম্পানি লিমিটেড। শেয়ারহোল্ডার্স ইটালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড (থাইল্যান্ড) ৫১ শতাংশ, চায়না শ্যানডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশন গ্রুপ (সিএসআই) ৩৪ শতাংশ এবং সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড ১৫ শতাংশ।
আরও পড়ুন>> খুলছে উড়াল সড়ক, ১০ মিনিটে বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও
এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য
চার লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল লেনের দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংলগ্ন কাওলা থেকে তেজগাঁও রেলগেট পর্যন্ত দৈর্ঘ্য সাড়ে ১১ কিলোমিটার। এ অংশটি খুলে দেওয়া হবে। প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ কাজ শেষ হলে বিমানবন্দর থেকে মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিটেই পাড়ি দেওয়া যাবে যাত্রাবাড়ী। ওঠানামার জন্য মোট ২৭ কিমি দীর্ঘ ৩১টি র্যাম্প রয়েছে। র্যাম্পসহ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ্য ৪৬ দশমিক ৭৩ কিমি।
প্রথম ধাপ: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা থেকে বনানী রেলস্টেশন পর্যন্ত, যার দৈর্ঘ্য ৭ দশমিক ৪৫ কিমি।
আরও পড়ুন>> এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে শুধু আরএফএল এসডব্লিআর পাইপ অ্যান্ড ফিটিংস
দ্বিতীয় ধাপ: বনানী রেলস্টেশন থেকে মগবাজার রেল ক্রসিং পর্যন্ত, যার দৈর্ঘ্য ৫ দশমিক ৮৫ কিমি।
তৃতীয় ধাপ: মগবাজার রেল ক্রসিং থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক (কুতুবখালী) পর্যন্ত, যার দৈর্ঘ্য অবশিষ্টাংশ। প্রকল্পে এক হাজার ৪৮২টি পাইল, ৩২৬টি পাইল ক্যাপ, ৩২৫টি কলাম, ৩২৫টি ক্রস-বিম, তিন হাজার ৪৮টি আই গার্ডার নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া তিন হাজার ৪৮টি আই গার্ডার এবং ৩২৮টি ব্রিজ ডেক স্থাপন কাজ শেষ।
প্রকল্পটি ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়নের কথা ছিল। মূল প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল তিন হাজার ২১৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। পরে প্রকল্প ব্যয় অপরিবর্তিত রেখে প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। প্রকল্পটির বিদ্যমান অঙ্গের পরিমাণ ও ব্যয় বাড়ার কারণে প্রথম সংশোধনীতে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় চার হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা। একই সঙ্গে সময় বাড়ানো হয় ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
আরও পড়ুন>> এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ব্যয় বাড়ছে সাড়ে ৫ কোটি টাকা
দ্বিতীয়বারের মতো প্রকল্পে সংশোধনী এনে সময় ও ব্যয় আরও বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে কাজ শতভাগ সম্পন্ন করার কথা জানান সংশ্লিষ্টরা। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর-কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-কমলাপুর-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী-ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক (কুতুবখালী) পর্যন্ত উড়াল সড়কে নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছে আট হাজার ৯৪০ কোটি টাকা।
এমওএস/এমএএইচ/জেআইএম