এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
টোলের সঙ্গে জরিমানা যোগ হলে ওভারস্পিড কমবে
ঢাকার যানজট কমাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত নির্মাণ করা হচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। আজ শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) চালু হচ্ছে প্রকল্পটির বিমানবন্দর-ফার্মগেট অংশ। বিমানবন্দরের কাছের কাওলা থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। র্যাম্পসহ এই পথের মোট দৈর্ঘ্য সাড়ে ২২ কিলোমিটার। আনুষ্ঠানিকভাবে যানবাহন চলাচল করবে তিন সেপ্টেম্বর সকাল ৬টা থেকে। তবে মোটরসাইকেল ও থ্রি-হুইলার কোনো বাহন এক্সপ্রেসওয়েতে চলবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সেতু বিভাগের তথ্যমতে, বিমানবন্দর কাওলা থেকে মোট ১৫টি র্যাম্প নির্মিত হচ্ছে। এর মধ্যে ১৩টি খুলে দেওয়া হবে আজ। বনানী ও মহাখালী র্যাম্প এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। আপাতত এই দুটি র্যাম্প খুলছে না। প্রকল্পের সার্বিক কাজের অগ্রগতি ৬৫ শতাংশ। আর তেজগাঁও পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি শতভাগ।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন এই মেগাপ্রকল্পের ফলে রাজধানীর যানজট অনেকটাই কমবে, নগরবাসীর ভোগান্তিও লাঘব হবে অনেকটা। তবে পুরো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ শেষ হলে এর পূর্ণাঙ্গ সুফল মিলবে।
আরও পড়ুন: বিমানবন্দর-উত্তরা সড়কের ‘মুশকিল আসান’ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে, উড়ালসড়ক বাস্তবায়নের পর ঢাকার উত্তর-দক্ষিণে বিকল্প সড়ক সৃষ্টি হবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হেমায়েতপুর-কদমতলী-নিমতলী-সিরাজদিখান-মদনগঞ্জ-ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক-মদনপুরে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করবে। উড়ালসড়ক শুধু বিমানবন্দর ও যাত্রাবাড়ী রুটের যাত্রীদেরই স্বস্তি দেবে না, একই সঙ্গে চট্টগ্রাম, সিলেটসহ পূর্বাঞ্চল ও পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যানবাহন ঢাকায় প্রবেশ না করে সরাসরি উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে প্রবেশ করতে সহায়তা করবে। উত্তরাঞ্চল থেকে আসা যানবাহনগুলো ঢাকাকে বাইপাস করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সরাসরি যাতায়াত করতে পারবে। এতে ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী অংশে যানজট নিরসন হবে।
নতুন এই মেগা প্রকল্প নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ।
জাগো নিউজ: রাজধানীর যানজট নিরসনে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে?
সাইফুন নেওয়াজ: যানজট কমাতে এই এক্সপ্রেসওয়ে কিছুটা ভূমিকা রাখবে। ছোট ছোট গাড়িগুলা যখন উপরে উঠে যাবে, তখন নিচের রাস্তা ফাঁকা থাকবে। নির্বিঘ্নে চলতে পারবে গণপরিবহন। সেই হিসেবে আমার মনে হচ্ছে কিছুটা যানজট কমে যাবে। মানুষের ভোগান্তিও কমবে। পুরোটা খুলে দিলে খুব ভালো হতো, দেখা যেত যানজট নিরসনে এটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
জাগো নিউজ: রাজধানীর বিভিন্ন ইউলুপ সংযোগ সড়কে আমরা যানজট দেখি। এক্ষেত্রে প্রশস্ত সড়কের অভাবে এ সমস্যা দেখা যায়। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্পগুলো রাজধানীর ব্যস্ত সড়কে নামবে। র্যাম্পের সংযোগ সড়কে যানজট কেমন হবে?
সাইফুন নেওয়াজ: র্যাম্পগুলোর মুখে যাতে কোনো যানবাহন দাঁড়াতে না পারে সেই ব্যবস্থা রাখতে হবে। কন্টিনিউয়াস মুভমেন্ট যেন হয়। কারণ কিছু র্যাম্প আছে খুবই ব্যস্ত এলাকায়। সেখানে জটলা হলে ওপরে আবার যানজট তৈরি হবে। যেসব গাড়ি এক্সপ্রেসওয়েতে উঠবে না বা নামবে না, তারা যেন র্যাম্পে না থাকে। র্যাম্প ব্যবস্থাপনা ভালো হলে অনেক কিছুই করা সম্ভব।
আরও পড়ুন: ১২ মিনিটেই দুর্ভোগের বিমানবন্দর-ফার্মগেট পাড়ি দেওয়া যাবে
জাগো নিউজ: সেক্ষেত্রে র্যাম্প ব্যবস্থাপনা কীভাবে করা উচিত?
সাইফুন নেওয়াজ: কয়েকটা র্যাম্প আমি নিজেই দেখেছি। মহাখালীরটা ইন্টারসেকশনের খুবই কাছে। যারা ব্যবহার করবে না, তারা যদি এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে দাঁড়িয়ে থাকে তাহলে সমস্যা। র্যাম্পের জায়গা যাতে দখল না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
জাগো নিউজ: এক্সপ্রেসওয়েতে থ্রি-হুইলার ও মোটরসাইকেল উঠতে পারবে না। সিদ্ধান্তটা কি সঠিক হলো? এই সিদ্ধান্তের কারণ কী?
সাইফুন নেওয়াজ: থ্রি-হুইলার বা ছোট যান এক্সপ্রেসওয়েতে না উঠতে দেওয়া ভালো সিদ্ধান্ত। এটা হাইস্পিড রোড। সিএনজি অটোরিকশা হাইস্পিড রোডে চলতে পারে না। কারণ এসব যান অনেক কম গতিতে চলে। আবার মোটরসাইকেল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বাহন। হঠাৎ ডানে, বামে মোড় নেয়। ইন্ডিকেটর না দিয়ে ঘোরে, দ্রুত লেন পরিবর্তন করে। এই দুই ধরনের যান সরানো (উঠতে না দেওয়া) ভালো উদ্যোগ। এর ফলে এক্সপ্রেসওয়ে নিরাপদ হবে।
জাগো নিউজ: এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কেমন দেখছেন?
সাইফুন নেওয়াজ: এখানে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজন আছে। সর্বোচ্চ গতিসীমা দেওয়া আছে, কিন্তু এখানে ওভারস্পিড কন্ট্রোল করা দরকার। এই ওভারস্পিড নিয়ন্ত্রণ করা গেলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেকটাই কমবে।
জাগো নিউজ: ওভারস্পিড ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কী করা যেতে পারে?
সাইফুন নেওয়াজ: গতি অবশ্যই মনিটর করতে হবে। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে যানবাহনের গতি মনিটর ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাধ্য করতে হবে। প্রয়োজনে চালক বা যানের মালিকদের আইনের বা জরিমানার আওতায় আনতে হবে। ওভারস্পিডে চললে জরিমানা টোলের সঙ্গে যুক্ত করে নেওয়া যেতে পারে। তাহলে গতি বাড়ানোর প্রবণতা কমে যাবে।
এসএম/কেএসআর/এএসএম