জুয়া খেলতে এইচএসসির প্রশ্নফাঁসের নামে প্রতারণা, গ্রেফতার ৫
এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের নাম করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতাররা সবাই শিক্ষার্থী এবং অনলাইন জুয়ায় আসক্ত। মূলত অনলাইন জুয়ার টাকা জোগাতেই তারা প্রশ্নফাঁসের নামে টাকা হাতিয়ে নিতেন।
গ্রেফতাররা হলেন- আব্দুল আহাদ ওরফে রাফিন খান, স্বাগতম চন্দ্র ওরফে মো. বাবুল মিয়া, সাব্বির আহমেদ, মইনুদ্দিন ও বাসুদেব চন্দ্র রায়। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে প্রশ্নফাঁস এবং অনলাইন জুয়ার কাজে ব্যবহৃত সাতটি মোবাইলফোন, একটি ল্যাপটপ, ভুয়া প্রশ্নপত্রের বিভিন্ন সেট, ফেসবুক পেজে প্রশ্নফাঁস সংক্রান্ত চ্যাটিং হিস্ট্রি উদ্ধার করা হয়।
শনিবার (২৬ আগস্ট) বিকেলে গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, গ্রেফতাররা বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করলেও অনলাইনে তারা একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কানেক্টেড এবং সুবিধাভোগী। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা স্বীকার করেছেন, ২০২১ সাল থেকে প্রশ্নপত্রের বিভিন্ন মডেল ও সাজেশন একাধিক ফেসবুক পেজে সংযুক্ত করে শতভাগ নিশ্চয়তায় আসল প্রশ্নপত্র সরবরাহের নামে টাকা হাতিয়েছেন তারা। অভিযুক্তরা মূলত ফাঁকিবাজ পরীক্ষার্থী ও লোভী অভিভাবকদের প্রশ্ন দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণে টাকা নিয়েছেন।
কীভাবে কার্যক্রম চলতো
‘এইচএসসি আউট কোশ্চেন অল বোর্ড ২০২৩’, ‘পরীক্ষা টিপস’ এবং ‘এইচএসসি কোশ্চেন অ্যানসার ২০২৩’ সহ অর্ধ ডজন ফেসবুক পেজে প্রশ্নপত্র সরবরাহ ও বিক্রির বিজ্ঞাপন দিতেন। এভাবে তারা শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেন। তাদের ফেসবুক পেজ থেকে তথ্য নেওয়ার জন্য প্রথমে ৭০০ টাকা দিয়ে সদস্য হতে হতো। পরে পরীক্ষার আগের রাতে প্রতি পরীক্ষার প্রশ্নের জন্য ৫০০ টাকা অগ্রিম দিলে মূল প্রশ্নপত্র পবে বলে জানাতেন। চলমান এইচএসসি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে শতাধিক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি।
গ্রেফতারদের বিষয়ে ডিসি মশিউর রহমান বলেন, গ্রেফতারদের মধ্যে স্বাগতম চন্দ্র ওরফে মো. বাবুল মিয়া রংপুরের একটি পলিটেকনিক থেকে ইলেকট্রনিক বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। গ্রেফতার এড়াতে তিনি ফেসবুকে নিজেকে মো. বাবুল মিয়াসহ এক ডজন ছদ্মনাম ব্যবহার করেন। আব্দুল আহাদ গ্রেফতার এড়াতে অনলাইনে নিজেকে রাফিন খান নামে পরিচয় দিতেন। তিনি সরকারি বাঙলা কলেজের অনার্সের ছাত্র। সাব্বির আহমেদ কিশোরগঞ্জ পলিটেকনিক থেকে কম্পিউটার সাইন্স বিষয়ে পড়ালেখা করেছেন। জামালপুরের সীমান্তবর্তী এলাকার বসবাস করে তিনি অনলাইন জুয়ার একজন সাব এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন। মইনুদ্দিন নারায়ণগঞ্জ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তিনি বেকার এবং অনলাইন জুয়াড়ি। বাসুদেব চন্দ্র রায় ঠাকুরগাঁওয়ে থাকেন এবং বেকার যুবক। অনলাইন জুয়ার মাস্টার এজেন্ট স্বাগতম চন্দ্রের সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন তিনি।
অনলাইন জুয়া এবং প্রশ্নফাঁসের প্রতারণা
গ্রেফতাররা সবাই শিক্ষার্থী এবং অনলাইন জুয়ায় আসক্ত। ডিপ্লোমা প্রকৌশলী স্বাগতম রায় বাংলাদেশে অনলাইন জুয়াড়িদের জুয়া খেলার আবশ্যিক উপকরণ বিভিন্ন ক্রিপ্টো কারেন্সির একজন মাস্টার এজেন্ট। রাশিয়া এবং চীনের ক্রিপ্টো কারেন্সি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। জামালপুরের সীমান্তবর্তী দুর্গম এলাকায় বসবাসকারী ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সাব্বির আহমেদও ক্রিপ্টো কারেন্সির অন্যতম সাব এজেন্ট।
ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন শহর, জেলা, উপজেলা এবং গ্রামে বসবাসকারী অনলাইন জুয়াড়ি, অনলাইন মাদক ব্যবসায়ী/ ভোক্তা এবং অনলাইনে পর্নোগ্রাফির ভোক্তা এবং ব্যবসায়ীরা ক্রিপ্টো কারেন্সির মাস্টার এজেন্ট স্বাগতম চন্দ্র এবং সাব এজেন্ট সাব্বির আহমেদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন।
এদিকে, জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষার আগে অনলাইন জুয়াড়ি আব্দুল আহাদ ওরফে রাফিন খান, মইনুদ্দিনসহ অন্যরা বিভিন্ন ফেসবুক পেজে প্রশ্নফাঁসের বিজ্ঞাপন দিতেন। পরে মেসেঞ্জার চ্যাটিং করে নগদ, বিকাশ, রকেটের মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া টাকা দিয়ে অনলাইন জুয়া খেলা, অনলাইনে মাদক কেনাবেচা ও অনলাইনে অসামাজিক কর্মকাণ্ড করতেন।
অনলাইন ভিত্তিক এসব নিষিদ্ধ ও অসামাজিক কর্মকাণ্ডের টাকা জোগাড় করার জন্যই তারা চলমান এইচএসসি পরীক্ষারসহ অন্যান্য পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ফাঁদ পাততেন। প্রকৃতপক্ষে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, পরিবহন, সংরক্ষণ অথবা বণ্টনের সঙ্গে তারা বা তাদের কোনো আত্মীয়-স্বজনই দায়িত্বপ্রাপ্ত বা জড়িত নন। ফলে তাদের পক্ষে কোনো পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
টিটি/কেএসআর/জেআইএম