সিটিটিসি প্রধান
৫০ শতাংশ জমি কিনে বানানো হয়েছিল ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’র আস্তানা
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় ৫০ শতাংশ জমি কিনে গড়ে তোলা হয় আস্তানা। সেই আস্তানা থেকে শনিবার (১২ আগস্ট) যে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের ‘ইমাম মাহমুদ এর কাফেলা’ নামে উদ্বুদ্ধ করে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। হিজরতের জন্য তাদের বলা হয়, পৃথিবীতে ইমাম মেহেদী আসার আগে যিনি আসবেন তিনি হলেন ইমাম মাহামুদ। এই বলে গ্রেফতার ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণের জন্য সেই পাহাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
রোববার (১৩ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিভিন্ন বয়সী মানুষ হিজরত করছিল। কোনো কোনো জায়গায় থানা পুলিশকে অভিভাবকরা রিপোর্ট করেছেন। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে থানা পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়নি বা অভিভাবকরা থানায় যাননি। এমন কয়েকটি অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা সুনির্দিষ্টভাবে কাজ শুরু করি। তাদের মধ্যে ছিলেন সিরাজগঞ্জের এক ডাক্তার দম্পতি। যশোর জেলার অধিবাসী ঢাকার নটরডেম কলেজের এক ছাত্র ফাহিম। এছাড়া জামালপুরের এরশাদুজ্জামান শাহীন। এমন তিনজনের তথ্য আমরা প্রাথমিকভাবে পাই।
আরও পড়ুন: মৌলভীবাজারে পাহাড়ি এলাকায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে অভিযান
এছাড়া আমাদের কাছে তথ্য ছিল যশোর, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও কুষ্টিয়া এলাকার কিছু পরিবার জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে হিজরত করেছে বা হিজরত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই সংগঠনের মতাদর্শে তারা উদ্বুদ্ধ হয়েছে। এই সংগঠনের হয়ে তারা কাজ করছে এমন তথ্য আমাদের কাছে আগে থেকেই ছিল। গত ৭ আগস্ট তখন মিডিয়াকে জানানো হয়নি। সেদিন আমরা মিরপুর থেকে ১০ জঙ্গিকে গ্রেফতার করি। যাদের মধ্যে চারজন পুরুষ ও ছয়জন মহিলা। এছাড়া শিশুও ছিল।
সিটিটিসির প্রধান বলেন, ঝিনাইদহ ও মেহেরপুর থেকে একযোগে সাতটি পরিবারের সবাই হিজরতের উদ্দেশ্যে ঢাকায় এসেছিল। তারা রিসিভারের (যিনি নিয়ে যাবেন) জন্য অপেক্ষা করছিল। তবে সেই ব্যক্তিকে আমরা গ্রেফতার করতে পারিনি। যারা এসেছিলেন তাদের গ্রেফতারের পর আমরা বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পাই। গত পরশুদিন একই ভাবে ফরহাদ নামে আমরা আরও একজনকে গ্রেফতার করি। এই ফরহাদ জঙ্গি আস্তানায় ছিল এবং সেখান থেকে ফিরে এসে তার পুরো পরিবারকে নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছিল। ফরহাদ তার বাবা-মা ও স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে তাদের সহায়-সম্পত্তি বিক্রি করে হিজরতের জন্য বের হয়েছিল।
আরও পড়ুন: মৌলভীবাজারে জঙ্গি আস্তানা থেকে ১৩ জন আটক: সিটিটিসি
অভিযানের বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতারদের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার একটি পাহাড়ে তাদের আস্তানা আছে। পরশুদিন আমরা ঢাকা থেকে সোয়াত টিমসহ রওনা হই এবং একটি সফল অভিযান পরিচালনা করি। তবে এই অভিযানে গত কয়েকদিন আগে সিরাজগঞ্জ থেকে যে ডাক্তার দম্পতি হিজরত করেছিল তার মধ্যে স্বামীকে আমরা পাইনি। তার স্ত্রীকে আমরা গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। এছাড়া আরও তিনজন ছিল।
ইমাম মাহমুদের কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে হিজরত:
সিটিটিসি প্রধান বলেন, নটরডেমের সেই ছাত্র এবং সিরাজগঞ্জের ডাক্তার ‘ইমাম মাহমুদ’ নামে এক ব্যক্তির কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে জঙ্গিবাদের জন্য হিজরত করেছে। তবে আমরা তাদের পাইনি। তাদের বোঝানো হয়েছিল যে জিহাদের প্রাথমিক ধাপ হচ্ছে হিজরত করা। জিহাদের জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা এবং সেই কথিত ইমাম মাহমুদের কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা জিহাদের জন্য ঘর ছেড়েছিল। তবে মিরপুর থেকে হিজরতে যাওয়ার আগে তাদের প্রস্তুতি আমরা নস্যাৎ করতে সক্ষম হয়েছি।
আরও পড়ুন: জঙ্গি আস্তানা থেকে আটক ১৩ জনকে নেওয়া হচ্ছে ঢাকায়
তিনি বলেন, আমরা পাহাড়ি এলাকায় একটি জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পেয়েছিলাম। গতকাল সেখানে অপারেশন হিলসাইড নামে আমরা একটি অভিযান চালিয়েছি। সেখান থেকে আমরা ১০ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। তাদের মধ্যে চারজন পুরুষ ও ছয়জন মহিলা। তিনজন শিশুও ছিল। তাদের আমরা হেফাজতে নিয়েছি এবং জিজ্ঞাসাবাদ করছি। কোনো প্রকার রক্তপাত ছাড়াই আমরা অভিযানটি শেষ করেছি।
তিনি আরও বলেন, অভিযান শেষ করার পর আমাদের ডিসপোজাল টিম সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করেছে। নগদ ৩ লাখ ৬১ হাজার টাকা এবং কিছু স্বর্ণালঙ্কার, ধারালো ছুরি এবং তাদের প্রশিক্ষণের জন্য আনা কমব্যাট বুট, বক্সিং বক্স, বিপুল পরিমাণ বই উদ্ধার করেছি।
ইমাম মাহমুদের কাফেলা প্রধানের বিষয়ে জানতে চাইলে সিটিটিসির প্রধান বলেন, ইমাম মাহমুদ বলে পরিচয় দেওয়া ব্যক্তি আমাদের নজরদারিতে রয়েছেন। আমরা এখনই বলতে চাচ্ছি না তার বিষয়ে। তাকে গ্রেফতারের পর আমরা বিস্তারিত জানাতে পারবো।
আস্তানার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুই মাস আগে আস্তানাটি তৈরি করা হয়েছিল। এজন্য ৫০ শতক জায়গা কেনা হয়েছিল। তবে কত টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে তা জানা যায়নি।
আরএসএম/এমএইচআর/জেআইএম